বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

চট্টগ্রামে বিশ্বপরিব্রাজক এলিজা : এ কে এম আবু ইউসুফ

  প্রকাশ : ২০১৯-০৮-২৯ ১৯:০৯:২৯  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : নিজ দেশের প্রকৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বকে তুলে ধরাই এলিজার দেশ ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য। সংগ্রহ করছেন প্রাকৃতিক ও প্রাচীনতম ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর তথ্য, ভিডিও এবং স্থিরচিত্র। কেননা প্রকৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব-এ দু’টির মোহ যেন মানুষকে প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করে রাখে। আর এ কারণেই হয়তো ৪৩ বছর বয়সে ৪৭টি দেশ ঘুরে অদম্য এক বাঙালি নারী হার মানিয়েছেন নানা প্রতিকূলতাকে। পেশায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নেশায় প্রত্নতাত্ত্বিক হেরিটেজ ট্রাভেলার। এলিজা বিনতে এলাহি একজন বিশ্ব পরিব্রাজক। যিনি গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম জেলায় ভ্রমণের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ। তিনি চট্টগ্রাম এসে পৌঁছালে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)’র চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এবং চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বরেণ্য ইতিহাসবিদ ও পরিব্রাজক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন এবং গণ্যমান্য ইতিহাসসচেতন ব্যক্তিবর্গ সহ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
ইতিহাস ঐতিহ্য প্রত্নতত্ত্বসহ ইতিহাস নিয়ে কথা হয় ১ ঘন্টারও বেশি সময়। দেশপ্রেম ও মানবতাবাদী এই পরিব্রাজক বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হবেন।
আলাপচারিতায় জানা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকার বলধা গার্ডেন দিয়ে এলিজার বাংলাদেশ ভ্রমণ শুরু। তিনি এই ভ্রমণ প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘কোয়েস্ট : এ হেরিটেজ জার্নি অব বাংলাদেশ’। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে প্রকল্পটি।
তার কথায়, ‘এটা আমার অনুসন্ধান, খোঁজা, জানা। নিজের জ্ঞান আহরণের জন্য ঘুরছি। সেজন্য কোয়েস্ট নামটি বেছে নিই।’
চট্টগ্রাম ভ্রমণ দিয়ে এলিজা শেষ করলেন ৬৪ জেলার হেরিটেজ জার্নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এই পরিভ্রমণে জেনেছি অনেক, শিখেছি অনেক, পেয়েছি অনেক বন্ধু। শুধু মনে হচ্ছে সব অভিজ্ঞতা যদি লিপিবদ্ধ করতে চাই, তাহলে একজীবন অনেক কম। আমার ৪৩ বছর জীবনের ট্রাভেলার হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এসব।’
ভ্রমণের মাধ্যমে ৬৪ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর বর্তমান অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করেছেন এলিজা। ৬৪ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর ভিডিও, ফটোগ্রাফি ও লেখালেখির মাধ্যমে ডকুমেন্টেশন করেছেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন লেখক ও প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন এই ভ্রমণপিপাসু।
এলিজা বিনতে এলাহী ১৯৯৯ সাল থেকে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো ভ্রমণ শুরু করেন। গত ২০ বছরে এলিজা ভ্রমণ করেন এশিয়া ও ইউরোপের ৪৭টি দেশ। ভ্রমণে সেসব দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর খুঁটিনাটি বিষয় তিনি পরিদর্শন করেন। অচিরেই বাকি দেশগুলো ভ্রমণের ইচ্ছা আছে বলে জানালেন এই হেরিটেজ ট্রাভেলার। দেশগুলো ভ্রমণের সময় তিনি সংগ্রহ করেন সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নানা তথ্য-উপাত্ত। এশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইতিমধ্যে তাঁর দুটি প্রকাশনা রয়েছে। এর একটি ‘এলিজাস ট্রাভেল ডায়েরি’ আরেকটি ‘এলিজাস ট্রাভেল ডায়েরি-২’।
তিনি ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস এর দি হেগ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস-এ কম্যুনিকেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধীনে ‘বাংলাদেশে হেরিটেজ ট্যুরিজম’-এর ওপর গবেষণা সমাপ্ত করেছেন। গবেষণাকর্ম ও হেরিটেজ ভ্রমণে গিয়ে তার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর ঐতিহাসিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যা সঠিকভাবে সংরণ করলে শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি দেশে পর্যটনশিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, প্রায় বিশ বছরের বিশ্বভ্রমণের যাত্রায় আমার নিজেকে সত্যিকার ট্রাভেলার মনে হয়েছে যখন আমি বাংলাদেশের কোনায় কোনায় গেছি। আমার দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মানুষ আমাকে যা আনন্দ দিয়েছে পৃথিবীর বড় বড় দেশ তা দিতে পারেনি। আমি দেখেছি গর্ব করার মত বিশ্বমানের ঐতিহ্য ও স্থাপনা আমাদেরও রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সংরণ, রক্ষণাবেক্ষণ, প্রচার ও প্রসারের।
এলিজা জানান, ৬ এপ্রিল ১৯৭৬ সালে জন্ম তার। ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জননী, স্বামী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তবে পরিবার কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পরিবার থেকেই পাচ্ছেন সবচে বেশি অনুপ্রেরণা। তিনি জানান, এক মাস বিরতির পর আরো ৫০টি দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন তিনি। এভাবে পুরো বিশ্ব দেখে এসে আরো বিস্তর গবেষণা পর তুলে ধরবেন বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত।
সৌজন্য সাক্ষাতে তাঁকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় এবং এ সময়ে তাঁকে ইতিহাসের বই উপহার দেওয়া হয়।

লেখক : কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ; চেয়ারম্যান, বাংলাদে পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)



ফেইসবুকে আমরা