বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চাই গাছ

  প্রকাশ : ২০১৯-১১-১৩ ১৭:৪৩:৪২  

পরিস্হিতি২৪ডটকম/মো: মির হোসেন সরকার : বৃক্ষ পরিবেশ ও প্রকৃতি জীবজগতের পরম বন্ধু।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বৃক্ষ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য অতি জরুরি অক্সিজেনটা কিন্তু আসে বৃক্ষ থেকেই। তাই বলা যায় পরিবেশ রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা যে সর্বাধিক তা বলাই বাহুল্য। জীবন জোগাতে খাদ্য বা শক্তির জোগান উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে। অন্য কোনো প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদ কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ নামক মৌলিক খাদ্য উপাদান প্রস্তুত করে।তারপর পর্যায়ক্রমে তার রূপান্তর ঘটে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়ে শক্তির জোগান দেয়। প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শক্তির জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল,তা সে মাংসাশী হোক বা নিরামিষাশিই হোক। তাই উদ্ভিদ হলো উৎপাদক আর বাকি সব প্রাণীই ভক্ষক। এক কথায় উদ্ভিদ ছাড়া এ পৃথিবীতে জীবন অকল্পনীয়।

এক কথায় বলা যায়, গাছ যেমন সজল মাটি,অবাধ আলো এবং উৎকৃষ্ট সার পেলে সতেজভাবে বেড়ে ওঠে, ঠিক আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তেমনই চাই উৎকৃষ্ট পরিবেশ। পৃথিবীর বুকে প্রাণের স্পন্দন বজায় রাখতে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। মানবজীবন ও অরণ্য জীবনের সদাই বেজে চলেছে একটি ছন্দ। বৃক্ষই পারে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, আমাদের সেই প্রাণবায়ু জোগাতে। তার পত্রমর্মরে, নানা বর্ণের পুষ্পসম্ভারে মানবমনকে করে তোলে সতেজ, প্রাণবন্ত। বৃক্ষ প্রতিনিয়ত দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। বিনিময়ে পৃথিবীকে ফিরিয়ে দেয় জীবনধারণের প্রধান উপাদান অক্সিজেন। শুধু কি তা-ই? মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি, ভূমিক্ষয় রোধ, বায়ুর গতিবেগ প্রতিরোধ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে গাছ উদ্ধার করে মানুষকে।

বন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, জাতীয় অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। বন্যা,জলোচ্ছ্বাস,খরা,ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধে বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষের জন্ম থেকে মৃতু্ পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে আমাদের বসবাস চিন্তা করা যায় না। পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য, ওষুধ,বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সঠিক রাখা, পরিষ্কার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন ও বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রে বৃক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছ না থাকলে পৃথিবীর মধ্যে বন ও বন্যপ্রাণী থাকত না। বৃক্ষ আলস্নাহ প্রদত্ত এক অমূল্য সম্পদ। তাই বৃক্ষহীনতা যে কোনো দেশের জন্য,যে কোনো জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ।
এই বৃক্ষের যে মূল্যয়ন কত তা বুঝানো অসম্ভব। এই তো শনিবার (০৯ নভেম্বর) ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আক্রমন করেছিলো বাংলাদেশেও। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা। তবে, বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে। পরেরদিন কয়েকটা অনলাইন পত্রিকা পড়ে দেখলাম আবহাওয়াবিদ ড.আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনের ওপর দিয়ে আসায় গতি-শক্তি অনেকটাই কমে গেছে। ফলে বড় ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। ঝড়টি সুন্দরবন না হয়ে বরিশাল দিয়ে আসলে অনেক বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হতো। আরও দেখলাম- ড. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, চলতি বছর যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার বেশিরভাগই সুন্দরবন কেন্দ্রিক হওয়ায় রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ সুন্দরবন অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় বেশিদূর এগোতে পারে না। তার আগেই ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যায়। কিন্তু একই ঘূর্ণিঝড় যদি বরিশাল কেন্দ্রিক হতো তাহলে বাংলাদেশের জন্য বড় দুর্যোগ বয়ে আনতো। সুতরাং এ কথা বলা অনস্বীকার্য যে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এখন বৃক্ষের প্রসঙ্গে আসি, ঘূর্ণিঝড় যদি সুন্দরবন কেন্দ্রিক না হয়ে অন্য দিক দিয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হতো তাহলে কত ক্ষতিই না হতো। সুন্দরবনের গাছপালার কারণে বাতাসটা অনেক টা দূর্বল হয়ে পড়ে। একমাত্র বৃক্ষই পেড়েছে ঘূর্ণিঝড়ের হাতে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করতে। তারপরও এ ঘূর্ণিঝড় “বুলবুলের” কারণে মারা গেছে ১৬ জন। আহত হয়েছে অনেক মানুষ। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ লক্ষ্য করলে বলা যায়, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী ড. মো.আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে উপকূলীয় ১৬ জেলায় ২২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৭২ হাজার ২১২ টন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২৬৩ কোটি ৫ লাখ টাকা । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৫০৩ কৃষক।
এখন আসুন আমরা সবাই মিলে নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় স্কুল,কলেজ,মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যত বেশী সম্ভব বৃক্ষচারা রোপণ করি আর তা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বড় করে তুলি।বৃক্ষরোপণ করি,পরিবেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলি।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের মূল্যয়নটা অনেক বেশি।গাছপালা পরিবেশের সৌন্দর্যকে সুন্দর করে তোলে।তাই আমরা সবাই মিলে গাছ লাগাই পরিবেশ বাঁচাই।



ফেইসবুকে আমরা