বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস সেবার মান বাড়াতে আন্তরিক ও সেবা সহজীকরণে নিয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ

  প্রকাশ : ২০২২-০২-০২ ২৩:৩৩:৫৩  
  পরিস্থিতি২৪ডটকম : পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার ।এটি একটি আর্ন্তজাতিক ভ্রমন দলিল ও বটে।এই পাসপোর্ট একজন নাগরিকের জাতীয়তার পরিচয় বহন করে।বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বিদেশ ভ্রমনের জন্য পাসপোর্ট অত্যাবশ্যাক। সাধারণত প্রচলিত ধ্যান ধারনায় পাসপোর্ট পেতে একজন নাগরিকের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা শুনা যায়।আর একটি পাসপোর্ট একজন নাগরিকের হাতে তুলে দিতে কয়েকটি সংস্হা কাজ করে সেই ক্ষেত্রে ঝামেলাও যে নেহায়েত নাই তাও আবার নয়। এসব ধ্যান ধারনা বদলে দিতে নগরীর মনসুরাবাদস্হ বিভাগীয় পাসপার্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।সেবা প্রত্যাশীদের সেবার মান বাড়াতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে নানান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন পরিচালক মো. আবু সাইদ। তাঁর তৎপরতায় ইতিমধ্যে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের সেবার মান বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এই মনসুরাবাদের এই কার্যালয়। উচ্ছেদ করা হয়েছে দালালের আস্তানা খ্যাত কম্পিউটারের দোকান সহ আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন সব সেবা পাচ্ছেন হাতের নাগালেই।সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্টের পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম প্রবর্তনের পর সেবা প্রত্যাশীদের আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।সুশৃংখল ভাবে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট ফরম জমা দিচ্ছেন আর পাসপোর্ট ডেলিভারী নিচ্ছেন।বিদেশ যেতে নতুন পাসপোর্ট করতে এসেছেন আবদুল কাইয়ুম ,তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি  ই- পাসপোর্ট ডেলিভারী নিতে এসেছেন এবং কাঙ্খিত সেবা পেয়ে খুশি।
আর বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সেবা প্রত্যাশীদের সেবা সহজীকরণ ও উপযুক্ত সেবা নিশ্চিতকল্পে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ।জানা গেছে, প্রায় ৭.৫০ মিলিয়ন প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অফিস ও মিশনে প্রায় ১৭-১৮ হাজার পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ এই বিষয়ে বলেন, অক্টোবর-২১ থেকে ডিসেম্বর-২১ পর্যন্ত তিন মাসের চিত্রে পর্যালোচনা করে দেখেছি,পাসপোর্টের জন্য প্রায় ৭ লাখ নতুন আবেদন জমা পড়েছে তারমধ্যে থেকে ৬ লাখ পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে যা জমাকৃত আবেদনের বিপরীতে ৯২% ইস্যু হয়েছে এছাড়াও বাকী ৮% প্রসেসিং এ আছে।তিনি বলেন,ই-পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশীদের আবেদন ফরম পূরণ সহজীকরণে ফরম পূরণের পদ্ধতি, পূরণকৃত নমুনা ফরম, ই-পাসপোর্ট এর বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, সরকারি নির্দেশনা ও কিছু পরামর্শ সন্নিবেশিত করে আমরা ‘ই-পাসপোর্ট তথ্য সহায়িকা’ নামের পুস্তিকা প্রকাশ ও অডিও ভিজ্যুয়াল সম্বলিত নির্দেশনা প্রনয়নের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে।মুলত অনলাইন এবং অফলাইন দুইভাবে পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে বেশিরভাগ আবেদনকারীই কিভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয় তা সহজে বুঝতে পারেন না বিধায় তারা অন্য লোকের শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে তাদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ফরম পূরণ সহজীকরণের মাধ্যমে সেবা প্রতাশীদের সেবাপ্রাপ্তি সহজ করার উদ্দেশ্যে এ উপস্থাপনায় ই-পাসপোর্ট আবেদন করার পদ্ধতি, পূরণকৃত নমুনা ফরম প্রদর্শন, ই-পাসপোর্ট ফি, আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ও এতদসংক্রান্ত কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।এছাড়াও আবেদনকারী ঘরে বসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং অনলাইনে ফি জমা দিতে পারেন শুধু বায়োমেট্টিক সংক্রান্ত কাজের জন্য পাসপোর্ট অফিসে আসতে হয়,সব ঠিক থাকলেই কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সহজেই পাসপোর্ট মিলবে। এই বিষয়ে যদি সকলে সচেতন হয় তাহলে সেবা আরও তরান্বিত হবে।তিনি বলেন, এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক অফিস আঙ্গিনার উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেন চার্টার বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি আবেদনকারীদের পাসপোর্ট ফরম পূরণের সুবিধার্থে উন্মুক্ত স্থানে পাসপোর্ট আবেদনের পূরণকৃত নমুনা ফরম প্রদর্শন করা হচ্ছে।কোভিড-১৯ সময়কালিন সময়ে বেসিন স্হাপনের মাধ্যমে হাত ধোয়ার ব্যবস্হা, মাস্ক বিতরণ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী ও চলাচলে অক্ষম সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং ব্যবস্থা, পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবং হজ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদানের জন্য পৃথক হজ বুথ স্থাপন সহ প্রতি মঙলবার গণশুনানী গ্রহণ এবং যে কোনও সমস্যা ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য পরিচালকের সঙ্গে প্রতিদিন সরামরি সাক্ষাতের ব্যবস্থাও রেখেছি। শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।সেবা প্রত্যাশীদের জন্য খোলা মতামত রেজিস্টারে উপকারভোগীরা লিখছেন নিজেদের সন্তুষ্টির কথা।দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ রেদওয়ান আলম বলেন, পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আবেদন করার পর ২৭ জানুয়ারী নতুন পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। এখান সেবা কার্যক্রমে আমি সন্তুষ্ট।তিনি বলেন,তিনি ২০১৯ সালে এই অফিসে যোগদান করেন এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইই পাসপোর্ট অফিসের অধীনে প্রায় ২৬৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জিত হয় এবং ৬৬ লাখের অধীক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা পাসপোর্ট উস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে জিরো টলারেন্স এ আছেন এবং এই পর্যন্ত ৭ জনকে ধরে থানায় সোপার্দ করে মামলা দিয়েছেন।এবং রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী ১ জনকেও ধরে থানায় মামলা দিয়েছেন।তিনি বলেন মুজিববর্ষ চলাকালীন সময়ে এই অফিসকে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে সাজানো সহ নানান কর্মসূচী পালন করেছেন ভকিষ্যতেও তাঁর কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এই অফিসকে ঘিরে।বর্তমান ভবণটি চথুর্ত তলা পর্যন্ত সম্প্রসারনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন এবং একটি লিফট সংযোজন করার ইচ্ছা রয়েছে এ ছাড়াও একটি বঙ্গবন্ধু কর্নার স্হাপন ও আবেদনকারীদের জন্য শেড নির্মানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে।পরিশেষে তিনি বলেন,
সঠিক তথ্যে দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে নির্ভুল পাসপোর্ট গ্রহণ করতে সবাইকে সচেতন করতে হবে। মিথ্যা তথ্য প্রদান কিংবা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করা পাসপোর্ট আইনে দন্ডণীয় অপরাধ।পাসপোর্ট করার জন্য কোন অবাঞ্চিত লোকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত নয়। এ সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার জন্য অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাহায্য পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১০ সালে সনাতন পদ্ধতিতে ইস্যুকৃত হাতে লেখা পাসপোর্ট এর পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তির আন্তর্জাতিকমানের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের নির্দেশনা দেন। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট এর শুভ উদ্বোধন করেন।
….


ফেইসবুকে আমরা