বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রশিদ (রহ) : মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

  প্রকাশ : ২০২১-০৭-১০ ১৬:০৮:২৩  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযের আরবী বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রশিদ গত ২৮ জুন ২০২১ রোজ সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসাপাতালে মহা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দেন। মৃত্যুকালে তাঁর ৭০ বছর বয়স ছিল। বাদে জোহর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ব্যাংক শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. গিয়াসউদ্দিন তালুকদার। বিকেলে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ড. মুহাম্মদ রশিদ ১৯৫০ সালে ১ জানুয়ারী চন্দনাইশ উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মাওলানা ইসমাইল, মাতার নাম মরহুমা কমলজান বেগম। দাদার নাম মুহাম্মদ নকী। তাঁর পিতা একজন শিক্ষাবিদ আলেমে দ্বীন ও পরহেজগার ছিলেন। তাঁর বংশ পরিক্রমা হল- ড. মুহাম্মদ রশিদ বিন মৌলভী মুহাম্মদ ইছমাইল বিন মুহাম্মদ নকী বিন আবদুর রহমান বিন বখশ আলী বিন আমির মুহাম্মদ বিন মির্জা মুহাম্মদ (মির্জা মশকুর তরফ) বিন অলি খাঁজা।
পারিবারিকভাবে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে ড. মুহাম্মদ রশিদ জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি সকল শ্রেণীতে কৃতিত্ব সহিত উত্তীর্ণ হয়ে কামিল (দাওরায়ে হাদীস) অধিকার লাভ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়ার মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী কলেজ থেকে আরবি বিষয়ে বি.এ অনার্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৭৩ সালে (১৯৭৫ সনে অনুষ্ঠিত) একই বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এ (মাস্টার্স) পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থানে কৃতিত্ব লাভ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধীনে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের তত্ত্বাবধানে Growth and Development of Fiqh in Bengal শীর্ষক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ড. মুহাম্মদ রশিদ যাদের সান্নিধ্যে শিক্ষা জীবন অতিবহিত করেন তাদের মধ্যে অন্যতম শিক্ষকমন্ডলীগণ হচ্ছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আফতাব আহমদ রহমান, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সেকেন্দার আলী ইব্রাহিমী, প্রফেসর ড. ইয়াকুব আলী, তাফসীর ইবনে কাসীরের অনুবাদক প্রফেসর মুজিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান, মুফতি আজীজুল হক, খতীবে আজম ছিদ্দিক আহমদ প্রমুখ।
ড মুহাম্মদ রশিদ ১৯৭৫ সালের ২ ডিসেম্বর তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্যভাষা বিভাগে আরবী ও ফার্সী ভাষার প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি বগুড়া জামিল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালের ২৮ এপ্রিল তারিখে তিনি আরবী ও ফার্সী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ২৫ জুন তারিখে তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করার পর ১৯৯৫ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৬ সাল থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ পর্যন্ত তিন বছর বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে কৃতিত্ব সহিত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি সহ বিভিন্ন পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।শিক্ষক সমাজে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন একজন আদর্শ শিক্ষক। ছাত্র সমাজের কাছে একজন প্রাণপ্রিয় মান্যবর উস্তাদ।আর সাধারণ জনগণের কাছে সম্মানিত, মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি অসাধারণ মেধাবী এবং ছাত্রবান্ধব শিক্ষক ছিলেন।ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি খুবই যত্নবান ছিলেন। তিনি ছাত্রদেরকে মন দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর কাছে যারা পড়েছেন কিংবা জ্ঞান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে যে প্রতিষ্ঠানে খেদমত হচ্ছে, সেখানেই তাঁর ছাত্র রয়েছে। বিভিন্ন মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ মুহাদ্দিস, প্রফেসর হিসেবে অনেক ছাত্রই আজ নিয়োজিত।
পারিবারিক জীবনে ড. মুহাম্মদ রশিদ তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বড় ছেলে ডা. ‍মুহাম্মদ তৈয়ব (শামীম ) , সহকারী অধ্যাপক , কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ , মেঝো ছেলে মোহাম্মদ নছিম, সহকারী অধ্যাপক , ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ , চবি, , ছোট ছেলে মুহাম্মদ শিবলী, প্রিন্সিপ্যাল অফিসার , পূবালী ব্যাংক , পাহাড়তলী শাখায় কর্মরত আছেন।
ড. মুহাম্মদ রশিদ একজন সফল আরবীবিদ, শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ছিলেন। কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, উসুল, আরবী, উর্দু ও ফার্সি ইত্যাদি ইসলামী শিক্ষায় পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি সত্য ভাষী, সহিষ্ণু, ধৈর্যশীল এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। তিনি একজন সমাজ সেবকও বঠে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা, শীত বস্ত্র বিতরণ, অসহায় মানুষদের মাঝে ইফতারী বিতরণ, অনেক স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান সহ আত্মমানবতার সেবা কার্যক্রমে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখতেন। আল্লাহ পাক তাঁকে আন্বিয়া, সোলাহা ও শুহাদার সাথে জান্নাতুল ফেরদাউসের আলা ইল্লিয়িনে মর্যাদাপূর্ণ স্থান নসীব করুন।

লেখক: কলামিস্ট।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।

 



ফেইসবুকে আমরা