বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আগামীর নগর পিতার নিকট প্রত্যাশা : সমৃদ্ধ এই বন্দর নগরীকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে বাস্তবায়নে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন

  প্রকাশ : ২০২১-০১-১৫ ১৮:৪৯:২২  

পরিস্হিতি২৪ ডট কম : প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ঘেরা সৃষ্টির অপরুপ লীলা ভূমি বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রামকে বিল্পবীদের তীর্থভূমি ও বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি বলা হয়। এই নগরীর রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। আর চট্টগ্রামের বুকের উপর দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর অবস্হিত দেশের লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর এদেশের প্রাণ ভোমরা। রাষ্ট্রের সিংহভাগ রাজস্ব অর্জন হয় এ বন্দর থেকে। দেশী বিদেশী ব্যাবসা বানিজ্য আর আমদানি রপ্তানি হয় এ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। অথচ এতটি বছর পার হয়ে গেলেও এ নগরী আজও বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। কেননা আধুনিক একটি চট্টগ্রাম পেতে চাইলে সব সেক্টরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।কিন্তু কেন যানি এখানে সেবা সংস্হাগুলোর মধ্যে সমন্বয় হীনতা রয়েছে। তা দূর করে নিশ্চিত করতে হবে সকলের অংশগ্রহণ। সম্পৃক্ত করতে হবে তরুণদেরও।চাইলে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা যায় ।আর এই গোলটেবিল বৈঠককে কেন্দ্র করে একটি ক্যাম্পেইনে নিয়ে যেতে হবে। যেখানে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবে। কেননা, জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো কিছুর সফলতা অসম্ভব।মুলত এই

চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণায় আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই।আর বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও এখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় নেই। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের যে কোনো কাজের জন্য দৌড়াতে হয় ঢাকায়। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অর্ধশত শিল্পকারখানা বসে আছে। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না তারা। ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে হলে প্রধান কার্যালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। অথচ বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেই হওয়ার কথা ছিল বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কাগজে-কলমে উন্নয়নের ছড়াছড়ি থাকার পরও হতাশ চট্টগ্রামের মানুষ। জনগণের চাওয়ার সঙ্গে যোগসূত্র হচ্ছে না উন্নয়ন প্রকল্পের। যে যার মতো করে প্রকল্প নিচ্ছে। আবার যে যার মতো করে তা বাস্তবায়ন করছে। একটি বাসযোগ্য সুন্দর নগরী করতে এখনও অগ্রাধিকার ঠিক হয়নি। হয়নি একটি যুগোপযোগী মাস্টারপ্ল্যান। আগামী ১০ বছর পর চট্টগ্রাম শহর কেমন হবে তা জানি না আমরা।আর ১০ বছর পর এ নগরীর জনসংখ্যা কত হবে তার সম্ভাব্য হিসাবও জানা নেই আমাদের। এ শহরে পাঁচ বছর পর কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার হবে। এবং ৮০ লাখ মানুষ হলে কতটি হাসপাতাল দরকার তাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রকৃত উন্নয়ন চাইলে বিষয়গুলো জানা জরুরি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন কোন আঞ্চলিক দাবি নয়। এটি এখন জাতীয় দাবি,এটি সারা দেশের দাবি। এই চট্টগ্রামের প্রকৃত উন্নয়ন করতে গেলে এখানকার স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ভাবনা, অনুভূতি, চাহিদা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব রাখবে এটা আমাদের আন্তরিক বিশ্বাস।মনে রাখতে হবে
উন্নয়ন শুধু প্রবৃদ্ধিই বাড়ায় না, উন্নয়ন পরিবর্তনও সাধন করে থাকে। বর্তমানে দেশের সর্বস্তরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি শিল্প গড়ে না উঠলে দেশের কাঙ্খিত সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না।এ ছাড়াও চট্টগ্রামে বন্দর, পর্যটন এবং মৎস্য খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শিপব্রেকিং এবং আরএমজি খাতেও এ অঞ্চলে সম্ভাবনা প্রচুর। বর্তমানে চীন থেকে অনেক কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে সারা দেশের উন্নয়ন হবে। এবং সামুদ্রিক অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে পরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। মিরসরাই ও আনোয়ারায় ইকনোমিক জোনের কাজ দ্রুত শেষ হলে দেশে-বিদেশে বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপনের সহায়তা করবে এবং এক্ষেত্রে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।এছাড়াও আগামী ৫০ বছরের চাহিদা পূরণে বে-টার্মিনাল ফার্স্ট ট্রেক প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন, বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত ৫টি করে গেইট চালু করা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে অন্তত ৫টি ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের একটি কেবিনেট মিটিং চট্টগ্রামে আয়োজন করা দরকার। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য বিমানের ফ্লাইট চালু করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও রাষ্টয়াত্ব বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামে স্হাপন জরুরী ।চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়ন করতে মাননীয প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন, এক গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে ।এই বিষয়টিও ধীরগতিতে আগাচ্ছে।আর কয়েকদিন পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন । নির্বাচিত হবে আগামীর নগর পিতা । আমরা আপামর জনতা আগামীর নগর পিতার নিকট প্রত্যাশা রাখি সমৃদ্ধ এই বন্দর নগরীকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে বাস্তবায়ন করতে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন ও মাননীয প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়ন বিষয়ে নিজ হাতে যে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা ও দায়িত্ব নিয়েছেন, তা সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে উদ্যত হবেন ।
লেখক : কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক : বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)



ফেইসবুকে আমরা