বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভারত সফরের তৃতীয় দিনে “মহিপুরা” হয়ে রাতের আম্বার ফোর্ট : শওনীল হোসাইন

  প্রকাশ : ২০২০-০১-২৩ ১৫:১৯:২২  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : ভারত সফরের তৃতীয় দিন(২৫ ডিসেম্বর-২০১৯)ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখি কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে আকাশ ভাড়ী হয়ে আছে। মোবাইলের স্ক্রিনে ওয়েদার আপডেট দেখাচ্ছে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার দশা। তারপরেও আলু পরটা, পুড়ী ভাজি আর গরম কফির স্বাধ নিয়ে সকাল ৯টায় বের হলাম মেডেন্টা (Medanta)হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। জামাতা হেলালের একটা রক্তের সেম্পল দিতে হবে।
গাড়িতে উঠে বসলাম আজকের চালক আবার সেই রাম বাবু। বেশ খুশিই হল আমাদেরকে পেয়ে। আমার ছেলেও। রওয়ানা দিলাম হাসপাতালের দিকে। কুয়াশার জন্য রাস্তা বেশী দূর দেখা যাচ্ছে না। রাম বাবু গাড়ীর হিটার চালিয়ে দিলেন। আমরা শীতের তিব্রতা অনুভব করতে না পারলেও বাইরে কূয়াশার ঘনত্ব দেখে বুঝতে বাকি থাকলো না মোবাইলের আবহাওয়া আপডেট পুরোপুরি সঠিক ।
হাসপাতালে পৌঁছে রক্তের সেম্পল দিতে হেলাল কে সেম্পল কালেকশন রুমে দিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। জারিফ বলল বাবা চল ফুড স্ট্রিটে (হাসপাতেলর ভিতরেই) কফি খাব(আমরা বাঙ্গালীরা আবার সব খাই, কিছুই পান করি না)।ফুড স্ট্রিটে গিয়ে কফি খেতে খেতে হেলাল চলে আসল আর বলল আজ এই রিপোর্ট পাওয়া যাবে না সব রিপোর্ট একসাথে পেতে তিন দিন লাগবে। বেলা তখন ১০টা ৩০ মি:। হেলালের কথা শুনে বুঝে গেলাম ২ দিন বসে থাকতে হবে দিল্লীতে। আমরাতো আর বসে থাকার পাত্র না। জারিফকে বললাম রাম বাবুকে ফোন কর লবিতে আসতে বল, বলেই আমি বৌকে বললাম চল জয়পুর। যেই বলা সেই কাজ। দ্রুত হোটেলে গিয়ে কাপড়ের ব্যাগ নিতে হবে। রাম বাবুর গাড়ীতে চেপে বসেই রাম বাবুকে বললাম জয়পুর যাব আজই। রাম বাবু একটু অবাক হলেন।

এখন হোটেলে গিয়ে সেখান থেকে রওয়ানা দিয়ে জয়পুর পৌঁছাতে বিকাল ৪টা হয়ে যাবে। তা হোক আমরা রাতের জয়পুর দেখবো। রাতের আম্বার ফোর্ট অনেক সুন্দর। তা দেখতে হবে। রাম বাবু অনেকটা অনিচ্ছায় বলল” লে চলিয়ে, রাজা বাবুকো বোল” আমি রাজা বাবুকে ফোনে আমাদের পরিকল্না জানাতেই উনি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন আর রাতে জয়পুর থাকার জন্য হোটেল ভাড়া করে দিলেন।আমরা হোটেলে পৌঁছে বাকস পেটরা নিয়ে আবার গাড়ীতে, চালক রাম বাবু।রওয়ানা হলাম রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের উদ্দেশ্যে। গাড়ী ছুটছে। আমারাও । দিল্লী থেকে জয়পুরের দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। দিল্লী শেষ হলেই হরিয়ানা প্রদেশ। হরিয়ানার গোর গাও বা গুরু গাঁও। (“Gurgaon is a city just southwest of New Delhi in northern India. It’s known as a financial and technology hub. The Kingdom of Dreams is a large complex for theatrical shows. Sheetala Mata Mandir is an orange-and-white-striped Hindu temple. The Vintage Camera Museum showcases cameras and prints spanning a century. West of the city, Sultanpur National Park is home to hundreds of bird species”.)
দু’পাশে দালান, খোলা জায়গা, মন্দীর, বিশালাকারের কর্পোরেট জোন, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল জোন ইত্যাদি দেখতে দেখতে আগাচ্ছি। হঠাৎ করে আমাদের রাম বাবু গাড়ী থামিয়ে বলল রুক জারা ১০ মিনিট বলেই গাড়ী থেকে নেমে গেল। আমিও গাড়ী থেকে নেমে একটু হাত পা টান টান করে নিলাম। গাড়ী যেখানে রাম বাবু থামালেন সেখানে রাস্তার দু’পাশের দেয়ালে , পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বসে আছে শত শত বানর। রাস্তায় চলাচলরত মানুষেদের সাথে ওদের বেশ সখ্যতা। আমি তাদেরকে দেখছিলাম পিছন থেকে রাম বাবু এক ডিশ ( ৫ কেজি কলা) আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল ওদের খাওয়ান, রাম বাবুর দিকে তাকাতেই দেখি গোটা ৫০ শেক বানর তার সাথে সাথে, আমি তো মনে মনে ভয় পাচ্ছি, আবার থাবা মারে না কি!!! আমি ইতস্ততা করছি দেখে সে নিজেই দেওয়া শুরু করল। দু’চারটা দিয়ে আবার আমাকে দিল। আমি দিতে শুরু করলাম। বানরগুলো একটা একটা কলা নিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আবার দু’একটা বনর একটা নিয়ে মুখে কামড় দিয়ে ধরে আরেকটা নেয়ার জন্য হাত বাড়াচ্ছে, এগুলো হচ্ছে বানরের মধ্যে মহা বানর আমার কলা বিতরণে উৎসাহি হয়ে আমার ছেলেও শেষের দিকে এসে এই বিশেষ বিতরণ যজ্ঞে অংশ গ্রহন করল এবং নিজেকে ধন্য করল। বিতরণ শেষে আমি রাম বাবুর কাছ থেকে জায়গার নাম জিজ্ঞাস কতেই জানালেন এই স্হানটা “মহিপুরা”।


গাড়ীতে চেপেই রামবাবুকে জিজ্ঞাস করলাম” কলা খাওয়ানোর মাহাত্ম কি?” তিনি বললেন হনুমান জ্বীকো কলা খাওয়ানো পূণ্য, তাই !
পুণ্য কাজ করে একটু কিছুদূর যেতেই আমাদের গাড়ীর পিছনের চাকা পাংছাড়,রাম বাবুর মাথায় হাত,অনতি দূরে কোন ভলকানাইজিং এর দোকান আছে বলে মনে হলো না, যদিও রাস্তার পাশে অনেক দোকান মিলবে যেখানে ট্রাকের সাজ সজ্জার হরেক রকমের জিনিসের পশরা নিয়ে বসে আছে দোকানি। রাম বাবু চাকা বদল করল । আমরা আবার রওয়ানা দিলাম। গাড়ী ছুটছে। আমি ভলকানাইজিং এর দোকান দেখলেই বলি এই তো এই তো ! রাম বাবুর চাকা ঠিক করার বিকার নাই। সে ছুটছে আর আমি তো মনে মনে ভয় পাচ্ছি এবার যদি পাংছাড় হয় তবে মাঝ রাস্তায় বসে থাকতে হবে।রাম বাবুকে বলতে বলে “ চিনেতা মদ কর সাব জ্বী! ম্যাঁ হু না কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর বেী-বাচ্চার ক্ষিধা পেয়েছে বলাতে তা নিবারণের জন্য হোটেল খুঁজতে থাকলাম। গাড়ীতো ছুটছে। রাম বাবু গাড়ী থামাল রাস্তার পাশের এক সুন্দর ধাবাতে। নাম জান্নাত ধাবা। ভেজেটেরিয়ান ফুড অনলি। কি করা ! এই দেশের ধাবাতে আবার নন ভেজ হয় না ! রাস্তার পাশের বিশাল সবুজে ঘেরা খোলা জায়গায় ধাবাটা। শীতের কন কনে তীব্রতা অনুভুত হলেও পেটের ভিতরকার উষ্মতায় তা জেড়ে ফেলে ধাবায় ডুকে বসলাম।
রুটি, পনির নান, ডাল মাখনি, পনির সব্জীর অর্ডার হলো সবার জন্য আমি ভাতুরে বাঙ্গালী এক প্লেট ভাত যোগ করলাম এর সাথে।দারুন স্বাধ। তৃপ্তির সাথে নন ভেজ খেয়ে আবার যাত্রা শুরু জয়পুরের উদ্দেশ্যে।


জয়পুর যখন আমরা পৌঁছায় তখন বিকাল ৪ টা বেজে গেছে। রাম বাবু বলল আগে আমরা অম্ভর ফোর্ট জলমহল দেখে আসি দিনের আলো থাকতে আর সন্ধ্যার পর দেখবো রাতের দৃশ্য। আমরাও রাজী হয়ে গেলাম। রাম বাবু তার চাচা(ডাইক্যা) হনুমান জ্বীকে ডেকে নিল। আমাদের গাইড হনুমান জ্বী। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ এই মহৎ কাজে নিয়োজিত। তিনি আমাদেরকে অম্ভর বা আমের ফোর্ট এ নিয়ে গেলেন।
Amer Fort or Amber Fort is a fort located in Amer, Rajasthan, India. Amer is a town with an area of 4 square kilometres (1.5 sq mi) located 11 kilometres (6.8 mi) from Jaipur, the capital of Rajasthan. Located high on a hill, it is the principal tourist attraction in Jaipur.The town of Amer was originally built by Meenas, and later it was ruled by Raja Man Singh I. Amer Fort is known for its artistic style elements. With its large ramparts and series of gates and cobbled paths, the fort overlooks Maota Lake, which is the main source of water for the Amer Palace.
Mughal architecture greatly influenced the architectural style of several buildings of the fort Constructed of red sandstone and marble, the attractive, opulent palace is laid out on four levels, each with a courtyard. It consists of the Diwan-e-Aam, or “Hall of Public Audience”, the Diwan-e-Khas, or “Hall of Private Audience”, the Sheesh Mahal (mirror palace), or Jai Mandir, and the Sukh Niwas where a cool climate is artificially created by winds that blow over a water cascade within the palace. Hence, the Amer Fort is also popularly known as the Amer Palace. The palace was the residence of the Rajput Maharajas and their families. At the entrance to the palace near the fort’s Ganesh Gate, there is a temple dedicated to Shila Devi, a goddess of the Chaitanya cult, which was given to Raja Man Singh when he defeated the Raja of Jessore, Bengal in 1604. (Jessore is now in Bangladesh).
আমের ফোর্ট এ প্রবেশ মুল্য ইন্ডিয়ানদের জন্য ১০০ রুপী আর অন্যদের জন্য ৫৫০ রুপী।আর রাতে ১০০ রুপী। আমরা দিনে আলোতে বাইরের দৃশ্য দেখে রাতের আলোক সজ্জা ও অন্দর মহলের রাত্রীকালিন সুন্দৌর্য উপভোগ করার অপেক্ষা করছিলাম। হনুমান জ্বী বললেন তাহলে আমরা এই সময়টাতে জল মহল দেখে আসি।
(“Jal Mahal (meaning “Water Palace”) is a palace in the middle of the Man Sagar Lake in Jaipur city, the capital of the state of Rajasthan, India. The palace and the lake around it were renovated and enlarged in the 18th century by Maharaja Jai Singh II of Amber”.) জল মহল দেখতে চলে এলাম আমরা। হনুমান জ্বী জল মহল সম্পর্কে জানালেন- মান সাগরের উপর তৈরী এই বিলাশ মহলে রাজ পরিবার আসতেন ঠান্ডা হাওয়ার পরশ নিতে।
জলমহল দেখে সূর্য অস্ত গেলে আমরা পুনরায় চলে যায় আমের ফোর্ট এ। রাতের আমের ফোর্ট সে এক অন্য রকমের মন মাতানো, রকমারী আলোক সজ্জায় সজ্জিত। কিছু চবি ফোষ্ট করলাম আন্দাজ করার জন্য। আমের ফোর্ট এ ভিতরে সবচাইতে আকর্ষনিয় হলো শিষ মহল।
রাতের আমের ফোর্ট দেখে হনুমান জ্বী আমাদেরকে নিয়ে গেলেন রাজস্থান পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত সুপার মল “রাজস্থান টেক্সটাইল ডেভলেপমেন্ট কর্পোরেশন” এ । সেখানে গিয়ে দেখলাম Organic color, Organic Color তৈরীর পদ্ধতি, organic colors দিয়ে প্রিন্ট করা শাড়ী, থ্রি- পিছ, বেড কভার,উটের চামড়ার তৈরী বিভিন্ন প্রকারের ব্যাগ, জুতা,রাজস্থানী জুয়েলারী, পাথর ।সবচাইতে যে জিনিসটি আমাদেরকে আকর্ষন করেছে তাহলো রাজস্থানের স্পেশাল রজায় বা লেপ । এই লেপের বৈশিষ্ঠ হলো এটা শীতের সময় গরম, গরমে ঠান্ডা ও শতরন্জী হিসেবেও ব্যবহার করা যায় ।বেশ হাল্কাও ।
ওখান থেকে বের হয়ে সোজা জয়পুর গ্রিন প্যালেস রেষ্ট্রুরেন্ট এ। পেটে ইদুরের দৌড়ানি শুরু হয়েছে।জয়পুর যেহেতু রাজা মহা রাজাদের শহর এখনো এইখানকার বাড়ী ঘর সহ প্রায় সকল স্থাপনা, আচার আচরনে একটা চাপ দেখানোর চেষ্টা বহমান। রেষ্ট্রুরেন্ট এ ডুকে দেখতে পেলাম লাইভ গান চলছে আর মন্চে দুইজন নাচছে। দেশী- বিদেশী সকল পর্যটককে আনন্দ দেয়ার জন্য ও তাদের রাজকীয় ভাব দেখানোর চেষ্টা।
আমরাও সেই আনন্দ গ্রহন শেষে পেট পূজা করে সোজা আমাদের হোটেল বিকানের হাবিলিতে ।
একটা ব্যাস্ততম দিনের সমাপ্তি করলাম আরামের একটা ঘুম দিয়ে।
লেখক : শওনীল হোসাইন
চলবে…



ফেইসবুকে আমরা