পরিস্হিতি২৪ডটকম : পূর্বে প্রকাশিত চতুর্থ পর্বের পর…. ভারত সফরের ৫ম দিন ২৭ ডিসেম্বর-২০১৯,রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে আর একটি সুন্দর রাত কাটালাম সেই ভিকানের হাবেলীতে। সকালে নাস্তার জন্য নিচের কেষ্টুরেন্টে ঢুকতেই কানে ভেষে আসছিল সুন্দর একটি প্রার্থনা সঙ্গীত। পান্জাবী ভাষায় দক্ষতা না থাকায় গানের কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তবে গানের সুরের মূর্চনায় অবিভূত হলাম, অনেক মনোযোগ সন্নিবেশ করার পর একটা শব্দ পরিচিত পেলাম বা বুঝতে পারলাম তা হলো “গুরু নানক জ্বী” এতেই বুঝতে পারলাম গুরু নানকের নামের বন্দনা করে এ গান বা ধর্মীয় সঙ্গীত রচিত। চমৎকার সুর, তাল, লহরী….. বাহ্!পরে কৌতুহল ধরে পাখতে না পেরে রেষ্টুরেন্টের ম্যানাজার কে জিজ্ঞাসা করেই কৌতুহল নিবারণ করলাম।
প্রাতরাশ সেড়ে বের হলাম নাহারগড় ফোর্ট (Nahargarh Fort) আর জায়গড় ফোর্ট (Jaigarh Fort) দেখার জন্য। আমের ফোর্ট বা অম্ভর ফোর্ট ভ্রমনের কথা ও ছবি ৩য় দিনের সফরে উল্লেখ করেছি।
সেখানে সংক্ষেপে আমের ফোর্টের বর্ণনা করেছিলাম গোগল মামা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
আজো তার ব্যতিক্রম নয় তবে বাংলায় আর একটু সহজ করে ধারাবাহিক ভাবে তিনটি কিল্লার পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
আমি আগেই বলেছিলাম আজ আমাদের বেড়ানোর তালিকায় রয়েছে নাহারগড় ও জায়গড় ফোর্ট। আজ এই দুই ফোর্টের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করে পরে আমের ফোর্টের কথা বলবো।
নাহারগড় :
পুষ্কারের মরুতে উটের পিঠে ঘুরতে ঘুরতে এই মরুরাজ্যের সৌন্দর্য আস্বাধন করার পর পাহাড়ের চূড়ার উপর অবস্থিত এই ফোর্ট দেখে আপনি একটু নড়ে চড়ে উঠবেন। রাজপুতদের রাজকীয়তার ইতিহাস যদি আপনার জানা থাকে তবে ভাল নচেৎ আপনি যদি তাঁদের রাজকীয় ইতিহাসের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান তবে পাহাড়ের চূড়াতে নির্মিত এই ফোর্ট ভ্রমণ না করে আপনার কোন উপায় নাই।
এই ফোর্টের দাম্ভিকতা, সৌন্দর্য আপনাকে রাজপুতানদের রাজকীয়তাকে বুঝতে অনেকখানি সাহায্য করবে।
জয়পুর শহর থেকে আমাদের যাত্রা শুরু করে পাহাড়ের গা ঘেষে আঁকা বাঁকা পথ বেয়ে উঠতে শুরু করি পাহাড়ের চূড়ায় যেখানে এই ফোর্ট নির্মিত।আপনাকে বহনকারী গাড়ীটি যখন উপরের দিকে উঠবে তখন আপনার দৃষ্টি গাড়ীর গ্লাসগলে নিচের দিকে গেলে মনে ভয়ের সামান্য সন্চার হতে পারে আবার নিচে লেকের অসাধারণ শোভা আপনার নজরে পরলে আপনার মনকে ভরিয়ে দিবে এক অজানা ভললাগায়।যদি ভয় পান তবে লেকে সৌন্দর্য না দেখে পথের পাশের হাল্কা বনের দিকে তাকান দেখতে পাবেন বানর ও ময়ূর এবং ময়ূরের অপূর্ব খোলা পেখম যা আপনার মনকে আনন্দে ও ভাল লাগায় উৎফুল্ল করে দিবে।
যে পাহাড়ের চূড়ায় এই সুরৌম্য নাহারগড় ফোর্ট নির্মিত তার নাম আরাবল্লী পাহাড়(Aravalli Range or Hill)। নাহারগড় কেল্লা থেকে নিচের গোলাপি শহরের দারুণ সৌনিদর্য দেখতে পাবেন। অন্য পাশ থেকে দেখতে পাবেন মান সাগর লেকের মধ্যখানে নির্মিত জলমহল। জয়পুরের পিন্ক সিটি বা গোলাপী শহরের গল্প নিশ্চয় আপনাদের জানা। জলমহল ও পিন্ক সিটি সম্পর্কে আমি পরের কোন অংশে নিশ্চয় কিছুটা ঊল্লেখ করবো আপনাদের স্মৃতিকে চাঙ্গা করতে।
১৭৩৪ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজা দ্বিতীয় সওয়াই জয় সিং এই কেল্লা তৈরি করেন গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ হিসেবে। এই ফোর্টের পাথরের তৈরি বিস্তৃত সীমানা প্রাচির গিয়ে মিশেছে জয়গড় ফোর্টে। এই ফোর্ট বৃটিশ সাহেব ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা করে হয়েছে অন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী।১৮৫৭ সালের সিপাই বিদ্রোহের সময়ে তৎকালিন রাজা সওয়াই রাম সিং এই অঞ্চলের ইউরোপীয় সাহেব ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে এখানে এনে রেখেছিলেন।
ফোর্টের দিকে যেতে যেতে এখানকার ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের গাইড কাম ড্রাইভার রাম সিং বাবু।
এই কেল্লার আসল নাম ছিল সুদর্শণগড়। সুদর্শনগড় তৈরী করার পর এই ফোর্টের ভেতর নাহার সিং ভোমিয়ার অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াত এমনটাই এখানকার স্থানীয়দের বিশ্বাস।নাহার সিং ভোমিয়ার এই অতৃপ্ত আত্মাকে শান্ত করতেই কেল্লার ভিতরে একটি মন্দির তৈরি করা হয় এবং কেল্লার নাম বদলে করা হয় নাহারগড়। নাহারগড় শব্দের অর্থ হল “বাঘের গৃহ বা ঘর বা আলয়”।
কেল্লা বা ফোর্ট ঘুরতে ঘুরতে আপনার স্মৃতি আপনাকে থমকে দাঁড় করিয়ে দিবে স্মৃতির জানালায়। নিয়ে যাবে আপনাকে কয়েক শো বছর পিছনে রাজপুতানদের রাজকীয় বিলাসী জীবণ ও শাসনের মানষপটে। কিছু কিছু জায়গা আপনার চেনা চেনা লাগবে। এইরকম হলে অবাক হবেন না বা আপনার স্মৃতি ভ্রম হচ্ছে মনে করে হাতে বা গালে চিমটি কাটবেন না, অবাক হবেন না কারণ এখানেই শ্যুটিং হয়েছে সোনার কেল্লা, রং দে বসন্তি এবং শুদ্ধ দেশি রোম্যান্সের মতো বেশ কিছু জনপ্রিয় হিন্দী ছবির।
লেখক : শওনীল হোসাইন
চলবে…