বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

করোনা মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জন প্রতিনিধিদের জোড়ালো ভুমিকা থাকতে হবে : মো: দিদারুল আলম চেীধুরী

  প্রকাশ : ২০২১-০৬-২৭ ১৫:৫৯:৩৬  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : বিশ্বব্যাপী নতুন আতংক আর অদৃশ্য এক শত্রুর নাম করোনা ভাইরাস।এই ভাবিরাসটির প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘঠছে আর আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ।বিজ্ঞানীরা কোভিড -১৯ নামে অভিহিত করেছেন। ২০১৯ সালের শেষদিকে চীন দেশে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই এ ভাইরাস ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং গতবছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়ে। ক্রমান্বয়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকলে গতবছরের মার্চ মাসের শেষ দিক থেকেই সরকার দেশে ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করে। এই ভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে বাংলাদেশেও এর প্রভাবে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে সাথে বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যা। এই ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়। অত্যাবশ্যকীয়ভাবে মাস্ক পরা,কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মানা, সাধারণ ছুটি, জনসমাগম না ঘটানো বা জনসমাগম স্হানে না যাওয়া ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এর সুফল অবশ্যই জনগন ভোগ করেছে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শিতা ও করোনা মোকাবেলায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহনে আমাদের এই দেশে করোনার থাবা ভয়ানক হয়নি। কিন্তু করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে অর্থনীতির সকল খাত। মফস্বল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত আর ধনী, গরীব, চাকরি জীবি, শিল্প উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সবার উপর কঠিন ঝড় বয়ে গেছে। সবাই কম বেশী অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে। নাজুক এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকার ও শিল্পোদ্যোক্তারা অফিস-আদালত, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে ক্রমান্বয়ে খুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষিজমির সদ্ব্যবহার ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।


কিন্তু এমন অবস্থা হয়েছে কে শুনে কার কথা! ব্যাপারটা এরকম। স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে সকল প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা খোলা হলেও কেউ মানেন নি। চরম অবহেলা করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিধি মানায়। যার কারনে বর্তমানে করোনা ভয়াবহ পরিস্হিতির মুখোমুখি। প্রতিদিন হাজার হাজার সংক্রমিত হচ্ছে আর মৃত্যুর হার বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। তাই স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে কঠোর হয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আবারো ঘোলাটে হওয়া শুরু করেছে। মুল কারন একটাই আমরা স্বাস্থ্য বিধি মানতে চরম অবহেলা করেছি এবং উপেক্ষা করেছি সকল বিধি নিয়ম। কিন্তু এই যদি অবস্থা হয় তাহলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে অর্থনীতির চাকা তা এখনই ভাবতে হবে। মুলত দেশের অর্থনীতি সচল রাখা গেলেও করোনা পরিস্থিতির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, ডব্লিউএফপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও থিংক ট্যাংক অর্থনৈতিক মন্দাসহ দারিদ্র্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। আর আমাদের দেশেও এই করোনার ফলে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চরম পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এখনও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।আর বর্তমানে করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সরকার আবার কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেছে।কিন্তু স্বাস্হ্যবিধি না মানলে আর মানুষ যদি স্বাস্হ্যবিধি মানতে অনীহা প্রকাশ করে তাহলে পরিস্হিতি আরো ভয়াবহ হবে ।তাই করোনা’ ভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সকল স্তরের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকলকে দল-মতের উর্দ্ধে উঠে করোনা মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। আমরা যদি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা তথা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগাতে পারি তাহলেই করোনার মহামারী থেকে বাচাঁ কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে।এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে স্হানীয় সরকারের প্রতিনিধি তথা ইউপি, চেয়ারম্যান , মেম্বারগন থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সকল সদস্যগণ।সাধারণত স্থানীয় সরকার বিভাগের হিসেব মতে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪৫৭১টি। সে হিসেবে মোট ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ৫৯৪২৩ জন, পৌরসভায় ৪২৪৪ জন উপজেলা পরিষদে ২৪৬০ জন, সিটি কর্পোরেশনে ৫৩৯ জন এবং জেলা পরিষদে ৬১ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ৯১৫ জন সদস্য, সংরিক্ষত ৩০৬জন নারী সদস্য আছে। সবমিলিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ৬৭৯৪৮ জন। সংখ্যায় এটি একেবারে কম নয়।


সবার মধ্যে সদিচ্ছা থাকলে করোনা মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারীর সংখ্যা গড়ে এর ৩ গুণ হলে সংখ্যা গিয়ে দাড়ায় দুই লাখের অধিক। এই দুই লাখের অধিক ব্যক্তি যদি সাধারণ মানুষের মধ্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করে স্বাস্হ্য বিধি মানতে বাধ্য করে তাহলে এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া আমাদের মতো দেশে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে। সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নিদের্শনা থাকলেও করোনা প্রতিরোধে তৃণমূলে খুব একটা প্রতিফলন দেখা যায়নি কার্যকরভাবে। একদিকে যেমন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য সংকটে ফেলেছে তার চেয়েও বড় বিষয় হলো সাধারণ মানুষকে করোনা প্রতিরোধে সচেতন করে তোলা। পরিবেশ এবং পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে তাতে আমরা যদি আমাদের গ্রামগুলোকে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে চাই, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদ প্রতিনিধিদের কার্যকর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের এখনই সময়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই যে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখার কথাই বলা হয়েছে মূল ভাবেই।মুলত গ্রাম পর্যায়ের
এলাকাগুলোতে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে বসছে হাট-বাজার, আড্ডা, একসাথে একাধিক লোকের চলাফেরা, স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করা।এ বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জোড়ালো ও কার্যকর ভূমিকা থাকতে হবে । তবে এই চিত্রের ভিন্ন চিত্রও কিছু কিছু স্থানে দেখা গেছে, তা অস্বীকার করা যাবেনা, তবে সকলের সমন্বিত অংশগ্রহণের ফলে একটি ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। তাই জনসচেনতা সৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধিকে এখনই কাজে নামতে হবে।তাহলে সংক্রমন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে ।কেননা রাষ্ট্রের শাসনকার্য সঠিকভাবে পরিচালনায় স্থানীয় সরকার, কেন্দ্রিয় সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশহিসেবে গড়ে উঠেছে। এই সরকার ব্যবস্থা গড়ে ওঠার মূল কারণ হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যা স্থানীয়ভাবেই সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া। গণতান্ত্রিক ধারণার উপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জনগণের স্বার্থকে তুলে ধরতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, পরিষদের প্রধান কার্যাবলীতে জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে সেই সাথে আরো বিষয় যুক্ত রয়েছে। একটি ইউনিয়নের আওতাধীন মানুষের জীবন যাপনকে সুন্দর করার স্বার্থেই এ জন্য আইন অনুযায়ী নির্ধারিত কাজ সবমিলিয়ে ১১০টির মতো।
অনুচ্ছেদ ৫৯ ও ৬০ বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে কার্যকর পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যাতে প্রশাসন প্রতিটি ইউনিটের জন্য জনগণকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনঅংগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্ব অনেক।
উপজেলা পরিষদের জন্য ৩১টি কাজ আইনগতভাবে নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে এই পরিষদের কাজ খুবই সীমিত। জেলা পরিষদের (তিন পার্বত্য জেলা ব্যাতিত) জন্য নির্ধারিত কাজ রয়েছে ৬৩টি। কিন্তু উপজেলা পরিষদের মতো তারাও এডিপিভুক্ত কিছু উন্নয়নকাজ ছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো কাজ করে না। জেলা পরিষদের এই কাজও দৃশ্যমান হয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর। পৌরসভার জন্য আইনে সবমিলিয়ে কাজের সংখ্যা ১৭২টি।
কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন, নর্দমা পরিষ্কার, জন্ম-মত্যু নিবন্ধন ও কিছু প্রত্যয়নপত্র দেওয়া, টিআর-কাবিখা বিতরণের মধ্যেই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ। আইনে সিটি করপোরেশনের জন্য ১৬০টি কাজ নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু তারাও অনেকটা বৃহত্তর পরিসরে পৌরসভার কাজগুলোই করে থাকে। বড় শহরগুলোতে সিটি করপোরেশনের কাজে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ ও রয়েছে।
এখন সময় এসেছে জনপ্রতিনিধির কার্যকর ও সঠিক দায়িত্ব পালনের। করোনা মহামারীরর এ সময়ে সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুবিধা যেমন পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নেবেন আমাদের স্হানীয় জনপ্রতিনিধিরা, ঠিক করোনা প্রতিরোধে ও স্বাস্হ্য বিধি মানতে এবং স্বাস্হ্য সচেতনতা বিষয়ে একটি কার্যকর শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে এমনটাই প্রত্যাশা।তাহলেই করোনা প্রতিরোধে ও সংক্রমন কমাতে সফল হবো আমরা ।
লেখক : কলামিষ্ট,প্রাবন্ধিক, সহ সভাপতি – বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি ( বাপউস ) চট্টগ্রাম ।



ফেইসবুকে আমরা