করোনায় বিপর্যস্ত ভবঘুরে ও পথশিশুদের মাঝে গত ১১ এপ্রিল থেকে আজ অবধি খাবার দিচ্ছেন ইতিহাসবেত্তা সোহেল ফখরুদ-দীন
পরিস্হিতি২৪ডটকম : চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাটে করোনার মহামারীতে বিপর্যস্ত ছিন্নমূল পথশিশু ও ভবঘুরে বৃদ্ধ নর-নারীদের মাঝে দৈনিক ৬০ জন করে আজ ১ জুন ২০২০ পর্যন্ত ৪৭ দিন ধরে ৩৯২০ জনকে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি, ইতিহাস গবেষক, মানবতার ফেরিওয়ালা সোহেল মো. ফখরুদ-দীন।আজ অবধি তা চলমান রয়েছে। গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু করে প্রথমে সপ্তাহে ২ দিন, পরে প্রতিদিন রান্না করা খাবার বিতরণ করেন তিনি। করোনা মহামারীতে আক্রান্ত সমগ্র পৃথিবীর সাথে বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের মানুষ মহাবিপর্যয়ের মধ্যেই রয়েছে। এর মাঝে চট্টগ্রাম নগরীর পথে পথে পথশিশু ও বৃদ্ধ বয়স্ক ভবঘুরে নর-নারী রয়েছে মহাবিপদে। পথে পথে ছিন্নমূল পথশিশুগুলোর খাবারের অভাব ও ভবঘুরে মানুষগুলোর খাদ্য সংকট দেখা দেয়। কারণ সাধারণ মানুষ করোনার কারণে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে, প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ী থেকে বের হচ্ছে না। তাই ভিুক শ্রেণির পথের মানুষ ও পথশিশুদের মহাবিপদ। কোথাও কোন খাবারের দোকান খোলা নেই, নেই কোন মসজিদের সামনে মুসল্লী, কিংবা মাজারের সম্মুখে জিয়ারতের মানুষ, মানুষের চলাফেরা না থাকায় ভিুক, পথশিশুরা খাবার পাচ্ছে না। সেই কারণে মানবিক একটি কর্মসূচি হাতে নিয়ে প্রাথমিকভাবে নিজ থেকে অর্থ দিয়ে এবং নিজের পরিবার থেকে রান্না করা খাবার বিতরণের জন্য উদ্যোগী হন ইতিহাসের মানুষ সোহেল মো. ফখরুদ-দীন। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পথে পথে সীমিত সংখ্যক মানুষের হাতে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে তিনি এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন। তার মহৎ এই কর্মকাণ্ড ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়ায় মানবিক এই কাজে হাত প্রসারিত করেন তাঁর দেশ বিদেশের বন্ধু-বান্ধব এবং চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের কয়েকজন উপদেষ্টা। এই পর্যন্ত তিনি ৪৭ দিন ধরে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। প্রতিনিয়ত এই রান্না করা খাবারগুলো তাঁর বাসায় তৈরি হয় এবং খাবারগুলো মানসম্মতভাবে প্যাকেট করে মানুষের হাতে হাতে রোজার ইফতারের আগে পৌঁছে দেওয়া হতো। এখন দুপুরের খাবার হিসেবে বেলা দুটায় পৌঁছে দেওয়া হয়। সোহেল ফখরুদ-দীন নিজেই এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, অধ্যক্ষ মো. ইউনুস কুতুবী, মো. আবু বাক্কর, ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন বড়ুয়া, ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, কাজী মো. আরফাত, সাজিদ মো.শরফুদ-দীন, মোহাম্মদ সাফায়েত উদ-দীন, এবিএম মাসুদ, মো. আলমগীর ইসলামসহ আরো কয়েকজন প্রতিনিয়ত তাঁরা পথে পথে এই খাবারগুলো তুলে দিয়ে আসেন। মানবিক এই কর্মসূচিতে এই কাজগুলো করতে পেরে তাঁরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং খুশি। ইতিহাসবেত্তা সোহেল মো. ফখরুদ-দীন জানান, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, পেশায় ইতিহাস লেখক, জীবনীকার ও আলোকচিত্রশিল্পী। লেখালেখির সাথে জড়িত কিন্তু পৃথিবীর থেমে থাকা এই অবস্থায় মানবিক কর্মকাণ্ডে আমি গৃহে বসে থাকতে পারলাম না। নিজের অর্থ এবং বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতা নিয়ে মানবিক এই কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লাম। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিদিন এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া আমার ইচ্ছা রয়েছে। আশা করবো বন্ধু স্বজন এই কর্মকাণ্ডে আন্তরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত রাখবেন। আমার মতো এরকম উদ্যোগ গ্রহণ করে আরো মানুষ মানবিক কাজে নেমে আসে তাহলে সত্যিকার অর্থে সরকারের পাশাপাশি আমরা নিজেদের অবস্থানটুকু একদিন জাতির কাছে প্রমাণ করতে পারবো। আমরা মানুষ ছিলাম। মানুষ মানুষের জন্য, মানুষের জন্য আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আসুন সকলে মিলে এই করোনার মহাবিপদের সময়ে বিশেষ করে পথে-প্রান্তরে যে সমস্ত ভবঘুরে এবং পথশিশু রয়েছে তাদেরকে আমরা নিজ উদ্যোগে একটু খাবার দিয়ে জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি।