বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

চন্দনাইশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান : লেখার মধ্যেই সাহিত্যিক আহমদ ছফার দর্শন পাওয়া যায়

  প্রকাশ : ২০১৯-০৭-২৮ ২০:১৮:১৫  

পরিস্হিতি২৪ডটকম/(সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল,চন্দনাইশ ) : চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার লেখক ও গবেষক মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘আহমদ ছফাকে সবাই সাহিত্যিক বলেন অথচ তিনি কী ছিলেন না। তিনি সাহিত্যিক ছিলেন, তিনি কবি ছিলেন, তিনি সাংবাদিক ছিলেন, তিনি প্রবন্ধকার ছিলেন, তিনি অনেক কিছুই ছিলেন।’
তিনি ২৭ জুলাই শনিবার বিকেলে সাহিত্যিক আহমদ ছফা’র ১৮তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত স্মারক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
সাহিত্যিক আহমদ ছফা স্মরণসভা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা।
মো. আবদুল মান্নান বলেন, “চট্টগ্রামে তিন-তিনটি ‘আ’ আছে। অধ্যাপক আবুল ফজল, আহমদ শরীফ এবং আহমদ ছফা। এ তিনটি মানুষ বাংলা সাহিত্যে আমাদের সংস্কৃতিতে অমরত্ব লাভ করেছেন। তিনটি মানুষই এ চট্টগ্রামে জন্ম লাভ করেছেন। আহমদ শরীফ অসাধারণ পণ্ডিত ছিলেন। তার চাচা আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ তাকেও এদেশের মানুষ ভুলবে না। অধ্যাপক আবুল ফজল জীবনে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন ছোট্ট একটি মাদ্রাসায়, হাই স্কুলে বিভিন্ন জায়গায় থেকে তিনি লেখাপড়া করেছেন। তিনি যে ক্লাসে পড়েছেন তার নিচের ক্লাসে তিনি শিক্ষকতা করতেন। আহমদ ছফা এ তিন জনের মধ্যে বয়সে কম ছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালে। রাষ্ট্র বিজ্ঞান থেকে এমএ পাশ করেছিলেন তিনি। তার মধ্যে কিছুটা পাগলামি ছিল কিন্তু সততা ও প্রজ্ঞা ছিল প্রকট। মেধা-মননে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তার সমসাময়িক লেখকরা তাকে ভালো চোখে দেখেননি। তার সাহিত্য, তার কবিতা, তার উপন্যাস, প্রবন্ধ আছে। অসংখ্য লেখা তার।’
তিনি বলেন, ‘লেখার মধ্যে মানুষের দর্শন পাওয়া যায়। লেখার মধ্যেই আহমদ ছফা’র দর্শন পাওয়া যায়। তার মধ্যে অনেক মানবিক গুণাবলী ছিল। পাখিদের নিয়ে তিনি লিখেছেন, আহত বেগুন গাছকে নিয়ে লিখেছেন, বটবৃক্ষকে নিয়ে লিখেছেন। তার লেখালেখি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তিনি পত্রিকায় অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। এসব প্রবন্ধে বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী, তিনি কাউকে পরোয়া করে কথা বলতেন না। এজন্য তার শত্রুও ছিল। স্বাধীনতার পরে ৩ জন বিখ্যাত লেখক তারা একসাথে শপথ নিলেন। তারা দেশের জন্য অনেক কিছু করবেন। তিনজনই বিয়ে না করার শপথ নেন। তারা হলেন আহমদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদ, আনিচ সাবেদ কিন্তু তিনজনের মধ্যে শপথ রক্ষা করতে পেরেছিলেন আহমদ ছফাই। তিনি সংসার জীবন করেননি। তিনি এদেশের সকল শিক্ষার্থীকে নিজের সন্তান হিসেবে দেখতেন। হুমায়ুন আহমেদ এবং আনিচ সাবেদ তাদের লেখাতেই তা বর্ণনা করেছেন। শতাব্দীতে দু’একজন আহমদ ছফার জন্ম হয়। তার দর্শন আমাদের মনে জাগ্রত করতে হবে।’
স্মরণসভা পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক শাহাজাহান আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান, চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুল আলম খোকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একরাম হোসেন,সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিবেদিতা চাকমা, অনুপম চক্রবর্ত্তী, সাবেক মহিলা কাউন্সিলর এড. রেহেনা বেগম রানু, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ, ডা. আবু রাশেদ মো. নুরুদ্দীন, লেখক ও গবেষক শামসুল আরেফীন, একাডেমিক সুপার ভাইজার দীপেন চন্দ্র রায়, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আলম মামুন, বিষ্ণু যশা চক্রবর্ত্তী, মোহাম্মদ মতিন, সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, মাওলানা মোজাহেরুল কাদের, মাওলানা মো.আবুল বশর, শিক্ষক গাজী বোরহান উদ্দীন, সরওয়ার আহসান, যিতেন্দ্র নাথ বড়ুয়া, শওকতুল ইসলাম প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরো বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভোমত্ব বিরোধীরা এখন বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে দেশে অস্তিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ২০১৩ সালেও তারা মাওলানা সাইদীকে চাঁদে দেখেছে বলে অস্তিরতা সৃষ্টি করেছিল। গুজবে যারা প্রচারকারী তারা এ কাজটি করেছে। আবার দেশে গুজব আসছে, নানা গুজব। পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুদের মাথা লাগবে। এখন আবার বিদ্যুৎ নিয়েও গুজব সৃষ্টি করেছে। তারা বিদেশে বসে এসব গুজব প্রচার করছে। তোমরা গুজবে কান দেবে না। তোমাদের প্রধান কাজ পড়ালেখা করা। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে যতগুলো শতবর্ষী স্কুল-কলেজ আছে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এই গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে জাতীয়করণ হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কারও বিতরণ করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি



ফেইসবুকে আমরা