বাংলাদেশ, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আমদানি রপ্তানী করার নিয়ম (৩য় পর্ব ) : মোহাম্মদ আলাউদ্দীন চেীধুরী মোর্শেদ

  প্রকাশ : ২০১৯-১১-২১ ১৯:৫৮:২২  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : গত পর্বের পর আপনাদের সুবিধার জন্য এল/সি ? কত ধরনের হয় তা উল্লেখ করা হলো :

১)রিভোকেবল এলসি : যে কোন সময় আমদানিকারকের সুবিধার ধরণ অনুয়ায়ী ইস্যুয়িং ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়,এই ক্ষেত্রে বেনিফিশিয়ারী বা রপ্তানী কারকে নোটিশ দেওয়ার দরকার নেই।
২)ইরোভোকেবল এলসি : আমদানি কারকে ও রপ্তানী কারকে উভয়ে একমত না হলে ইস্যুয়িং ব্যাংক এল/সি এর কোন ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধণ করতে পারবেনা। এতে উভয়ের সম্মতি প্রয়োজন হয়।
৩)স্ট্যান্ডবাই এলসি : স্ট্যান্ডবাই এল/সি যে কোন ভুলের ক্ষেত্রে রপ্তানীকারকে পেমেন্ট প্রেরনের নিশ্চিয়তা প্রদান করে থাকে।
৪)কনফার্মড এলসি : যখন আমদানিকারকের হয়ে এল/সি এডভাইজিং ব্যাংক রপ্তানীকারকে পেমেন্ট পাওয়ার নিশ্চিয়তা প্রদান করে থাকে।
৫)আনকনফার্মড এলসি : পেমেন্ট প্রদানের বিষয়ে একমাত্র ইস্যুায়িং ব্যাংকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে,এতে সেকেন্ড ব্যাংকের কোন প্রয়োজন পরে না।
৬)রিভলভিং এলসি : আমাদনিকারক ও রপ্তানীকারক উভয়ের মধ্যে কতিপয় দেনা পাওনা পেমেন্ট আদান প্রদানে সমর্থ এই রিভলভিং এলসি
৭) ব্যাংক টু ব্যাক এলসি : রপ্তানী কারকের অনুকূলে এল/সি খোলার পর যখন যখন পণ্য সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় মূলধন রপ্তানীকারকের না থাকে তখন আর্থিক জোগান দেওয়ার জন্য সহায়ক হিসাবে ব্যাংক টু ব্যাক এল/সি কাজ করে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের আমদানি ও রপ্তানী কাজ ব্যাক টু ব্যাক এল/সির মাধ্যমে হয়ে থাকে। সহজ কথায় ব্যাক টু ব্যাক এলসি রপ্তানীকারকের অনুকূল পদ্ধতি।
রপ্তানী পণ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহের জন্য রপ্তানী এল/সির সহায়ক জামানত হিসাবে রেখে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান এর ব্যবস্থা হয়ে থাকে এই এল/সি AT SIGHT ৬০/৯০/১২০/১৮০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট করবেন মর্মে ওপেন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত মোতাবেক প্রত্যেকটি পোশাক রপ্তানীকারকে/ যে কোন রপ্তানী কারকেকে তার পণ্যে রপ্তানী করতে মোড়ক জাতীয় বা যে কোন এক্সসরিজ নিতে হলে বিদেশী ক্রেতার মাস্টার এল/সি/ সেইল্স কন্টাক্ট এল/সি এর বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এল/সি খোলার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।

৮) রেড কজ : রপ্তানী কারকের/ বিক্রেতার কাছ তেকে লিখিত অনুমোদন পাওয়ার পর পণ্য প্রেরণ করার পূর্বেই অগ্রীম অর্থ প্রদান করা হয়।

৯)সরসরি/ডাইরেক্ট পে : এই এল/সি ইস্যুয়িং ব্যাংক বেনিফিশিয়ারীকে ডাইরেক্টলি অর্থ পরিশোধ করে থাকে।

১০)ডিফারড/ বিলম্বে পেমেন্ট : এল/সি তে যদি পেমেন্ট কন্ডিশনে এই শর্ত থাকে তবে ক্রেতা বিলম্বে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে।

এল/সি এর মাধ্যমে পণ্য আমাদানি রপ্তানীতে যে সব সুবিধা বা অসুবিধা রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো :
আমদানি রপ্তানী বানিজ্য যেহেতু এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য ক্রয় বিক্রয় হয়ে থাকে সেহেতু ঝুকির মাত্রটা থেকে যাই, তাই পেমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে এই লেটার অব ক্রেডিট ভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানী বানিজ্য স্থাপনে নিশ্চিত গ্যারান্ট্রি প্রদান করে থাকে। বৈধ ভাবে অর্থ প্রাপ্তির একটি সহজ মাধ্যম হচ্ছে লেটার অব ক্রেডিট। তবে যথা সময়ে যথাযথ অর্থ প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত সময়ে এল/সি বর্ণিত সকল শর্তাবলী পুরোপুরি ভাবে প্রতিপালন স্বাপক্ষে রপ্তানী কারক ব্যাংকে ফাইল নথি জমা প্রদান করলে ব্যাংক তা যাচাই বাচাই করে পাঠিয়ে দিবে, আর আমদানিকারকের ব্যাংক ডকুমেন্ট প্রাপ্তির পর ডকুমেন্ট এ কোন Discrepant না থাকে তবে পেমেন্ট প্রদানে বাধ্য, এই ক্ষেত্রে আমাদানি কারকের বেশি ঝুকি থাকে যে সে যথাযথ পণ্যে পাচ্ছে কিনা, তবে সেই ঝুকি এড়ানোর জন্য সর্ব মহলে পরিচিত সর্বদা বিশ্ববাজারের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্টানের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করা, তাই রপ্তানী কারক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে চুক্তিবদ্ধ হলে উভয়ে লাভবান হতে পারে। তবে লেটার অব ক্রেডিটের মাধ্যমে আমদানি রপ্তানী সম্পন্ন করতে উভয়কে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়, এলসি ব্যবহারের ফলে পণ্যে ডেলিভারীতে অনেকটা বেশি সময় ব্যয় হয়। ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকার চার্জ, কমিশন এর খরচ তো রয়েছে, তাই চার্জ, কমিশন, মারর্জিন এর বিষয়ে ব্যাংকের সাথে নিজের লাভ নিশ্চিত করে ব্যাংক থেকে পূর্বে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে, অন্যথায় ব্যাংক তার লাভ বেশির জন্য রেইট অব ইন্টারেস্ট,এল/সি চার্জ, SWIFT চার্জ, কমিশন এর হার নিজের ইচ্ছা মতো নিবে। তাই সফল ব্যবসায়ী হতে হলে অবশ্যই আপনাকে ব্যাংকের সাথে দরদার ভেঙ্গে নিতে হবে। তখন ব্যাংক ও বুঝবে আপনি আসলে ব্যবসায়িক মনমানসিকতার লোক।
ব্যবসায়িদেরকে আরো বেশি ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে তফশিলি ব্যাংক গুলোকে বারবার নির্দেশনা প্রদান করে আসছে। রপ্তানী পর্যায়ে ক্যাশ প্রনোদনার ব্যবস্থা করেছেন। তাই আমি বলবো চাকরীর পিছনে সময় নষ্ট না করে নিজে উদ্যোক্তা হোন, হোক সেটা ছোট ব্যবসা, কথায় আছেনা, বিন্দু থেকে সিন্ধু, সেই সিন্ধুর খোজে আমাদের সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে তবে আপনি সফল হতে পারবেন, আপনার জন্ম স্বার্থক হবে, আপনার দ্বারা দুইটি পরিবারে কর্মসংস্থান হবে। এটাও কম কিসে, কয়জনে বা তা পারে, পারিবনা এই কথাটি বলিও না আর, কেন পারিবেনা তাহা বাব একবার। এই সমাজে যাদের গল্পগাঁথা কাহিনী আমরা শুনি সবাই তো আমার আপনার মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, তাহারাতো অন্য জগৎ থেকে আসেনাই, সততা, মেধা, পরিশ্রম, অধ্যবসাই একজন সাধারণ মানুষকে অসাধারণ হওয়ার পথ দেখাই, তাই আমি অসাধারণদের দলে,আপনি চিন্তা করুন, সাধারন হবেন নাকি অসাধারণ? তার ভার আপনাদের উপর দিলাম। আগামীতে একজন সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে অসাধারণ হয়ে উঠার গল্প নিয়ে আপনাদের সাথে হাজির হবো, অন্য কোন আলোচ্য বিষয় নিয়ে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদ থাকুন, অসাধারণ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলুন। তবে দূর্ণীতি মুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্টা হবে।

লেখক :
তরুন ব্যবসায়ী উদ্যেক্তা,রাজনীতিবিদ



ফেইসবুকে আমরা