বাংলাদেশ, , শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র

  প্রকাশ : ২০১৯-০১-২৭ ১৮:১৭:৪৩  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ‘অ্যাক্টিভিটস অব সিলেকটেড এজেন্সি টু অ্যাড্রেস পোটেনশিয়াল ইমপ্যাক্ট অন গ্লোবাল মাইগ্রেশন’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের অভিবাসন ব্যবস্থায় কী প্রভাব ফেলছে বা বদলে দিচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এতে মার্কিন সরকারের বিভিন্ন ভূমিকার পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মোকাবেলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গ।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০১৬ সালে তার প্রচেষ্টায় তৈরি হয় ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি’ নামে প্রেসিডেন্সশিয়াল মেমোরেন্ডাম। সেই মেমোরেন্ডামের আলোকেই মার্কিন ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট ও এজেন্সিগুলোকে সারা বিশ্বে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকাশ করা হয় সাম্প্রতিক ওই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী যুগে উন্নত দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে গলছে উত্তর মেরুর হিমবাহের বরফ, উত্তপ্ত হচ্ছে সমুদ্র, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ঋতুচক্র।

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি, স্থানচ্যুত হচ্ছে মানুষ। অভিবাসী কিংবা শরণার্থীতে রূপান্তরিত হচ্ছে তারা। এরই মধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই সামনের কাতারে।

মার্কিন ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ও মৎস্য চাষের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করায় মানুষ নিজেদের এলাকা ছেড়ে উপকূলবর্তী অঞ্চলে আবাস গড়ছে। অথচ ওই উপকূলীয় অঞ্চলগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব মোকাবেলা করছে। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কবলে পড়ে উপকূলীয় এলাকা কিংবা নদীর কাছাকাছি অঞ্চল।

বাংলাদেশের ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রভাবে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে গেছে হাজার হাজার বাড়ি ও ফসল। ২০১৭ সাল ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন দুই লাখ মানুষ।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, তাপমাত্রা বাড়লে ওই ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। এতে বাড়ি, জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সময় পরিবর্তন হলে খরা আরও বেড়ে যাবে এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা আরও বেশি হুমকিতে পড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ত পানি বেড়ে গেলে ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হবে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসন এখন বেঁচে থাকার সাধারণ কৌশল। অনেক কৃষক এখন লবণাক্ত পানির প্রভাবে নিজেদের চাষাবাদের কৌশল পাল্টেছেন। কেউ এখন লবণ সহিষ্ণু ধান উৎপাদন করছেন, আবার কেউ ফসল ফলানো বাদ দিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। আর অনেকে গ্রাম ছেড়েছেন। জীবিকার আশায় পাড়ি জমিয়েছেন শহরে।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট আর সাসেস্ক সেন্টার ফর মাইগ্রেশন রিসার্চ নামের দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিবাসনের এই ধারা ভবিষ্যতে আরও তীব্র হতে পারে। ক্লাইমেট চেঞ্জ রিলেটেড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৯৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অভিবাসী বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে। আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব বাংলাদেশে প্রায় ১৫ শতাংশ দারিদ্র্য বাড়াতে পারে।



ফেইসবুকে আমরা