পরিস্হিতি২৪ডটকম : খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মগুরু ও চট্টগ্রামের আর্চবিশপ মজেস কস্তা শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি নিয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
সোমবার (১৩ জুলাই) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ জানান, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জ্বর ও কাশি নিয়ে গত ১৩ জুন আর্চবিশপ মজেস কস্তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৭ জুলাই পর্যন্ত তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। গত ৯ জুলাই তাকে আবার আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
চিকিৎসকদের বরাতে তিনি জানান, করোনা উপসর্গের পাশাপাশি তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে একাধিকবার স্ট্রোক করেন এতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
জেমস গোমেজ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার তার মরদেহ সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পাথরঘাটাস্থ ক্যাথিড্রাল গির্জা প্রাঙ্গণে রাখা হবে। এই সময়ে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন। দুপুর সাড়ে ৩টায় খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে তাকে ক্যাথিড্রাল গির্জা সংলগ্ন কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হবে।
আর্চবিশপ মজেস কস্তা ২০১১ সালের ২৭ মে চট্টগ্রামে বিশপ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এর আগে ১৯৯৬-২০১১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি দিনাজপুর ডাইয়োসিসের বিশপ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামকে আর্চডাইয়োসিস হিসেবে উন্নীত করা হলে ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মজেস কস্তাকে চট্টগ্রামের প্রথম আর্চবিশপ হিসেবে নিযুক্ত করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগে ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু।
ব্যক্তিজীবনে আর্চবিশপ মজেস ছিলেন চট্টগ্রামের সব ধর্মের ও শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। উদার, মানবিক মানুষ হিসেবে রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে সমীহ করতেন।
বড়দিনসহ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসবে পাথরঘাটা গির্জায় সকল ধর্মের মানুষ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সম্মিলনের আয়োজন করতেন আর্চবিশপ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও নিজেকে জড়িত রেখেছিলেন।
মজেস কস্তার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৭ নভেম্বর গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া গ্রামের সাধু যোহনের গির্জায়। শিক্ষাজীবনে তিনি ১৯৬৯ সালে হলিক্রশ হাইস্কুল থেকে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। পরে ১৯৭১ সালে নটরডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ ও ১৯৭৩ সালে বিএ পাস করেন।
১৯৮১ সালের ২০ জানুয়ারি আজীবনের জন্য সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের পরদিন তিনি ডিকন পদে অভিষিক্ত হন। ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও কর্তৃক তুমিলিয়াতে যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হন মজেস কস্তা।
যাজকীয় কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ১৯৮১-১৯৮৩ সালে শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বনানী উচ্চ সেমিনারিতে মনোবিজ্ঞান ও পালকীয় ধর্মতত্ত্বে অধ্যাপনা করেন তিনি। একই সঙ্গে ১৯৯৫-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রামপুরাস্থ হলিক্রস স্কলাস্টিকেটের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।