পরিস্হিতি২৪ডটকম : কক্সবাজারের টেকনাফে দলীয় বর্ধিত সভায় বক্তব্যের বিরোধিতা করায় পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিসহ কয়েকজন নেতাকে পিটিয়েছেন বিতর্কিত সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদি।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা হল রুমে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এরইমধ্যে হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বদির নেতৃত্বে তার ভাই আবদুশ শুক্কুর, নুর মোহাম্মদসহ তাদের লোকজন সভা চলাকালে হলরুমে ঢুকে এক ব্যক্তিকে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে শুইয়ে ফেলেন। একেকজন তাকে একেক দিক থেকে ধরে তুলছেন আর ফেলছেন। আর শুক্কুর ও কয়েকজন সমানে বুকে, শরীরের নানা অংশে লাথি দিচ্ছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্দয়ভাবে প্রহৃত হওয়া ব্যক্তি হলেন টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো)। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুফ ভুট্টো ও উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক।
হামলার শিকার মো. ইউছুফ (মনো) বলেন, বর্ধিত সভা চলাকালে সাবেক এমপি বদি পৌর কমিটিকে ডিঙিয়ে বারবার ওয়ার্ড কমিটিকে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলছিলেন। আমি বদির বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় সেখানে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বদি মঞ্চ থেকে নেমে হল রুমের বাইরে অপেক্ষমাণ তার লোকদের ডেকে আবার দ্রুত হলে ঢুকে নিজের নেতৃত্বে আমাকে কিল-ঘুষি মেরে মেঝেতে ফেলে লাথি দিতে থাকেন। এসময় আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে যুগ্ম সম্পাদক ইউছুফ ভুট্টোও বদি ও তার লোকের হাতে মারধরের শিকার হন।
হলে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। বদি ও তার লোকজনের ভয়ে কেউ ভুক্তভোগীদের ছাড়াতে যাননি। ঘটনাটি ভিডিও করতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হককেও মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেন বদির লোকজন। প্রতিহত করতে চাওয়ায় পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদ হোসেন মুন্নাকেও হামলার চেষ্টা করা হয়। এসময় পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য জেলা সাংগঠনিক টিমের নেতাদের উপস্থিতিতে শুক্রবার পূর্বনির্ধারিত বর্ধিত সভা চলছিল। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ আলম চৌধুরী রাজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ, ইউনুস বাঙ্গালী, উপজেলা সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরসহ জেলা, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিম লিডার (উখিয়া-টেকনাফ) শাহ আলম চৌধুরী রাজা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সভা শেষ হয়েছে। বাইরে কোনো কিছু ঘটে থাকলে সেটা আমার জানা নেই।
হামলার ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু এখনো চোখে পড়েনি। মূলত দলের সভা বিঘ্নিত হয় এমন কিছু সেখানে ঘটেনি।
এদিকে, ঘটনার বিষয়ে জানতে শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ফোন না ধরায় খুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি তিনি।