বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

রওশন আরা বাঁশির কাব্যগ্রন্থ “সমুদ্রের কাছে চিঠি”!

  প্রকাশ : ২০২০-০১-২৩ ২০:৩০:৫৩  

পরিস্হিতি২৪ডটকম/রফিকুল ইসলাম জসিম : রওশন আরা বাঁশি বাংলা কবিতায় শ্যামল উপত্যকায় এক নবীন পথিক। কবিতা লিখেছেন নিজের একান্ত ভালোবাসার টানে, জীবনের চারপাশের দেখা ও অদেখা নানা বিষয়ের উপজীব্য করে অমর একুুশে বইমেলা ২০২০- এ ঘাস প্রকাশন থেকে আসছে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” সমুদ্রের কাছে চিঠি” প্রচ্ছদ করেছেন কবির ছেলে শিহাব মোস্তাকিম আপন।

রওশন আরা বাঁশি কবিতাকে ভালোবেসে সাহিত্যের বেদীমূলে তাঁর প্রথম উৎসর্গ সমু্দ্রের কাছে চিঠি। বিভিন্ন বিষয় ও বৈচিত্রকে ধারণ করা এই কাব্যগ্রন্থে আছে দেশপ্রেম প্রকৃতি ও মানবিক প্রেম বা জীবনের আট পৌরে নানা ঘটনার বর্ণনা নিয়ে রচিত কবিতার সম্ভার৷ বাংলাদেশের মণিপুরি মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এটি ৷ তাই এ প্রয়াসটি পাঠক মহলে সাড়া ফেলবে৷

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন রাজকান্দি পাহাড়ঘেঁষা কোনাগাঁও (খিল) গ্রামে মণিপুরি মুসলিম পরিবারে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে কবি রওশন আরা বাঁশি জন্মগ্রহণ করেন৷ কবি যেখানে জন্মগ্রহণ করেন সেখানকার আবহ-ভাবনা-প্রকৃতি মিলেমিশে কবির এ লেখাকে ত্বরান্বিত করে। চিন্তার বহিঃপ্রকাশের মধ্যে তার কাব্যগ্রন্থটিতে গ্রামের সবুজ শ্যামলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছোটবেলায় থেকে কবিকে মোহিত করেন৷ তাই তিনি আমাদের গ্রাম কবিতায় লিখেন- ফলে ফুলে রুপে সাজে / ঝরা পাতার নুপুর বাজে।/ পাতার ফাঁকে রোদের খেলা/ পাখি করে গানের মেলা। || গ্রামটি আমার মায়ের মতো/ খেলতাম তাহার বুকে কত। /রাজকান্দি ঐ পাহাড় পাশে/ শৈশব স্মৃতি হাজার ভাসে।

রওশন আরা বাঁশির কবিতায় আবেগটাই প্রধান৷ মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি তাঁর অন্তর্গত ভালোবাসা শব্দে ও ছন্দের নানা ভাবে প্রকাশিত হয়েছে৷ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতায় ” সমুদ্রের কাছে চিঠিতে তিনি তাই লিখেন – তোমার উত্তাল ঢেউয়ের স্পর্শে অনুভব করেছি /তুমি কত ভালবাসতে জানো,/পাগলপারা জলতরঙ্গের রঙ্গ দেখে/হারিয়েছি সকল বেদনার সুর !/ নীল জল দেখে অনুভব করেছি/ কত দুঃখ তোমার বুকে !/ কত বেদনা তোমার সুরে।/ একটি কবিতা সার্থক হয়ে ওঠে তখনই, যখন এটি জীবনের অদেখা অংশকে আমাদের সামনে দৃশ্যমান করে তুলতে পারে। সেদিক থেকে এই বইয়ের প্রতিটি কবিতাই সফল ও সার্থক।

ভালোবাসার প্রিয় সুর ধ্বনিত হয় এরকম আরও কিছু ভালোলাগার কবিতা হলো – খুঁজে ফিরি তারে, যে কথা হয়নি বলা, ভুলে যেতে চাই , ভাবনা বিলাস, এবার জ্যোৎস্না স্নানে যাবো কবিতাটিতে তিনি লিখেন – তোমার চোখে চোখ রাখিনি কখনও/যে চোখে আছে সমুদ্রের গভীরতা ! / আজীবন লজ্জায় ফিরিয়েছি/আমার এ দু’টো চোখ।/ || তোমার উদার প্রেমময় দু’টো হাত ধরে/ এবার জ্যোৎস্না স্নানে যাবো। /বিশুদ্ধ জ্যোৎস্নায় অঙ্গ ভিজাবো/ শিহরণ স্নাত মায়াময় স্নিগ্ধ পরশে। /

কবি রওশন আরা বাঁশির অনেক কবিতায় দেশকে ভালোবাসার কথা যেমন আছে তেমনি জাতির পিতাকে নিয়ে লিখেছেন এমন কবিতাও আছে৷ এরকম কবিতা হলো, বিজয় ইত্যাদি৷ জাতির পিতা কবিতাটিতে তিনি লিখেন – হে মহান নেতা ! জাতির পিতা/ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ! || সব বাঙালির হৃদয় কোণে/ এক খাটি কোহিনূর। || বিপ্লবী হে মহান নেতা ! /তোমায় স্মরণ করি।/ শ্রদ্ধানত সালাম জানাই/অশ্রুতে চোখ ভরি।

আবার অনেক কবিতা আছে যেগুলো নিমিষেই ভালো লাগার এক বোধে আচ্ছন্ন করে পাঠকে৷ এ জাতীয় কবিতা হলো- এক স্বপ্ন , সুখ পিয়াসি কবিতাটিতে লিখেন -পূর্ণতারই মাঝে বাজে/ অপূর্ণতার সুর !/ সুখ পাখি তুই আর কতকাল থাকবি অচিনপুর ! || সুখের তরে সুখের ঘরে/ অহর্নিশি বাস।/ সুখ বিলাসী মনে তবু/ দুঃখ বারোমাস।

রওশন আরা বাঁশি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর সরকারী চাকরীর সুবাদে দেশের অনেক জায়গায় থেকেছেন ও ঘুরেছেন৷ বর্তমানে সিলেট শহরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন৷ জীবন কি এমনই হয় কবিতায় তিনি লিখেন – অপূর্ণ স্বপ্ন পুরণের সাধ/ আমাকে চেপে বসে।/ভাবনা আমার বড়ই অসহায়/ জীবন বুঝি এমনই হয় ! / সময় চলে যায়/ সকল বাসনা থেকে যায় হে জীবন আমার !

কবি ও খ্যাতিমান লেখক এ.কে.শেরাম সমুদ্রের কাছে চিঠি কাব্যগ্রন্থে জন্য কবি রওশন আরা বাঁশিকে অভিনন্দন দিয়ে বাংলা কবিতার বর্ণিল ভুবনে স্বাগত জানায়৷ কবি রওশান আরা বাঁশিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন , কবিতার সাথে সহবাস আরও ফলবতী হবে, সুখের হবে। আরও অনেক সৃজন – সম্পদে তিনি অধিকতর সমৃদ্ধ করবেন তাঁর আগামী পথচলা৷

এছাড়াও রওশন আরা বাঁশি ২০০৫ সালে চ্যানেল আই “সেরা রাধুণী ১৪১২ “প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করেন৷ রান্নায় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মণিপুরি মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম অংশগ্রহণকারী হিসেবে প্রয়াত রন্ধনশিল্পী সিদ্দিকা কবিরের ভূয়সী প্রশংসা পাই৷ ২০১৯ সনের মার্চ মাসে ভারতে মণিপুর রাজ্যের ইম্ফালে আন্তর্জাতিক মীতৈ পাঙাল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

শব্দকে ভেতর থেকে ফুটিয়ে তোলার এক বিদ্যা জানেন বাঁশি, ফলে তার কবিতায় তৈরি হয় আলাদা এক ঘোর। আলাদা এক জগত। আশা করি ২০২০ সালের বইমেলায় এ সমুদ্রের কাছে চিঠি কাব্যগ্রন্থটি পাঠকমহলে সাড়া জাগাবে।

সমুদ্রের কাছে চিঠি এই কাব্যগ্রন্থে ছোট বড় সবার পাঠ উপযোগী এমন ৬২টি কবিতা নিয়ে বইটি সাজানো হয়েছে। প্রতিটি কবিতা এক একটি বার্তা। বইটি ঢাকার বইমেলায় পাওয়া যাবে গতি প্রকাশন–৬৮৪ নং স্টলে। সিলেট বইমেলায় পাওয়া যাবে ঘাস প্রকাশন এর স্টলে।



ফেইসবুকে আমরা