পরিস্হিতি২৪ডটকম/মোঃ মির-হোসেন সরকার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লেখা এই দিনটি উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জের জন্য স্মরণীয় একটি দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দেশের মত রক্তে মুক্তির বাণ জেগেছিলো এই জেলার সূর্য সেনাদের।
আজ ১২ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ৪৮ বছর আগে ঠিক এই দিনই গোবিন্দগঞ্জ বাসীর জন্য নিয়ে এসেছিল বিজয়ের বার্তা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অবশেষে সমাপ্তি ঘটে এই দিনে। ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে মুক্তিকামী বাঙালী ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাটাখালী ব্রিজে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিকামী বাঙালীর ত্রিমূখী আক্রমনে নিহত হয় দুই শতাধিক পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য। আর ১২ ডিসেম্বর শক্রু মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই দিনটির নাম দেয়া হয় “গোবিন্দগঞ্জ হানাদার বাহিনী দিবস”।
১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার মুক্তিকামী ত্রিমূখী আক্রমনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করে গোবিন্দগঞ্জবাসীকে। উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র জনতার উল্লাসে গোবিন্দগঞ্জ ছিল উল্লসিত। গৌরব গাঁথার এই দিনটির জন্য গোবিন্দগঞ্জবাসীকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। স্বীকার করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ ও অবর্ণনীয় নির্যাতন। দীর্ঘ ৯টি মাস লড়তে হয়েছে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশিয় দোসরদের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৯৭১ সালে ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাটাখালী ব্রিজে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এবং মুক্তিকামী ত্রিমূখী আক্রমনে এই দিনে দুই শতাধিক পাক হানাদার বাহিনী নিহত হয়। এবং এরই মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত হয়েছিল গোবিন্দগঞ্জবাসী।
গোবিন্দগঞ্জবাসীকে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে থেকে মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও এ অঞ্চলের স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টায় নিবেদিত প্রাণ হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, কুলি, শ্রমিক, ছাত্রজনতা, কৃষক, সংগঠক, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মীসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
২৭ মার্চ সকালে শত শত মুক্তি পাগল তরুন, যুবক, ছাত্র জনতা কোদাল, শাবল, হাতুড়ি, খুন্তি ইত্যাদি নিয়ে ট্রাক যোগে কাটাখালীতে জড়ো হয়। সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কাটাখালী ব্রীজ ধ্বংস করার কাজ শুরু করে তারা।
ব্রিজের উত্তর পাশের কিছু অংশ ভাঙ্গা হলে হঠাৎ করে রংপুর দিক থেকে পাক হানাদার বাহিনীর একটি কনভয় ছুটে আসে ব্রীজের কাছে। কনভয়টি সেখানে উপস্থিত হলে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে মুক্তি পাগল বাঙালীর উপর। এ সময় এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে পালায় অনেকেই। পাক বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে শহিদ হন আব্দুল মান্নান, বাবলু মোহন্ত, বাবু দত্ত সহ অজ্ঞাত পরিচয় এক কিশোর ও একজন বৃদ্ধ। তখন থেকে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে হিলি, গাইবান্ধা, বোনাপাড়া ও মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদেরও ত্রিমুখী আক্রমনে প্রায় দুই শত পাকসেনা নিহত হয়। এবং সেখানে উপস্থিত থাকা অনেকই পাকসেনাদের হাত থেকে প্রাণনাঁশের ভয়ে অস্ত্র ফেলেত্যাগ করে সেখান থেকে।
এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১২ ডিসেম্বর জয় বাংলা শ্লোগানে গোবিন্দগঞ্জের আকাশ বাতাস প্রকল্পিত উল্লসিত করে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র জনতা গোবিন্দগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করার মধ্যে দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ।
এ দিকে ১২ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।