পরিস্হিতি২৪ডটকম : পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষের আগমন ঘটে যাঁরা তাঁদের স্বীয় গুণে এবং অসীম কর্ম ও ত্যাগের দ্বারা এই দেশ তথা সমাজকে আলোকিত করে তোলেন। আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার তেমনি একজন ব্যক্তিত্ব। বিশিষ্ট শিল্পপতি, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, আওয়ামীলীগ নেতা ও অগণনিত মানুষের প্রেরণার বাতিঘর। বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৫ সালের ১২ জানুয়ারী ফটিকছড়ির নানুপুরের ডালকাটা গ্রামে এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে জনপদের জননায়ক। মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। সাবেক সংসদ সদস্য, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব রফিকুল আনোয়ার।
পুরো জনপদের অপ্রতিরোধ্য জনগণমননন্দিত জননেতা তিনি। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে গেছেন রাজনীতির ধারালো সড়কে। রাজনীতিকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। আর মনে গেঁথেছিলেন জনগণকে অকৃত্রিম সেবাদানের অনুপম আদর্শ। শুদ্ধচারী রাজনীতিক রফিকুল আনোয়ার রাজনীতিতে অবলীলায় ঢেলেছেন প্রতিনিয়ত। মরহুম রফিকুল আনোয়ার দিনের পর দিন সমাজের মানুষের জন্য অকাতরে বিলিয়েছেন। আতংকের জনপদ ফটিকছড়িকে আলোকিত সমৃদ্ধশালী জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আশির দশকের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হয়ে রফিকুল আনোয়ার দলে পরিহার্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এত অল্প সময়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়া খুব কম রাজনীতিবিদদের কপালে জুটেছে। রফিকুল আনোয়ার ছিলেন সেই বিরলপ্রজ রাজনীতিবিদ যিনি রাজনীতিতে এসেই ‘এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন’। নববইয়ের দশকের শুরুতে সমগ্র ফটিকছড়িতে অকাতরে অনুদান প্রদানের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসেন রফিকুল আনোয়ার। প্রতিষ্ঠা করেন অসংখ্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তিনি সম্পূর্ণ নিজ অর্থ ব্যয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি নানুপুরে প্রয়াত মা-বাবার স্মরণে প্রতিষ্ঠা করেন নানুপুর লায়লা-কবির ডিগ্রি কলেজ। ক্রমেই পরিণত হন ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের অকৃত্রিম বন্ধুতে। আলহাজ রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমদকে পরাজিত করে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচন ছিল প্রহসনের ও ষড়যন্ত্রমূলক। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে। এই নির্বাচনে তিনি তৎকালীন বিএনপি প্রার্থী আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকেও পরাজিত করে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। কেননা রফিকুল আনোয়ার ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি ফটিকছড়িবাসীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন। সে কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মধ্যেও চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে ফটিকছড়ি আসন থেকে রফিকুল আনোয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল ফটিকছড়ির জনগণ তাকে ভালোবেসে ছিল বলে। ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়কের সময় তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগের কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। আলহাজ রফিকুল আনোয়ার ব্যক্তি জীবনে একজন সফল ব্যবসায়ী। এছাড়া এলাকায় এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মসজিদ মাদ্রাসা মন্দির নেই যেখানে আলহাজ রফিকুল আনোয়ারের অনুদান বা উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। তিন ভাই চার বোনের মধ্যে রফিকুল আনোয়ার সবার বড়। তাঁর এক ভাই আলহাজ ফরিদুল আনোয়ার ২০০২ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সমাজ কর্মের পাশাপাশি তিনি খেলাধুলার প্রতিও ছিলেন সমান আন্তরিক। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম আবহানী লি. এর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। রফিকুল আনোয়ার ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ ত্যাগী নেতা, একনিষ্ঠ সমাজ সেবক। চট্টগ্রামসহ ফটিকছড়ির উন্নয়ন এবং আধুনিক ফটিকছড়ি প্রতিষ্ঠা, চট্টগ্রামের শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতির উন্নয়নে রফিকুল আনোয়ার যে অবদান রেখে গেছেন ফটিকছড়িসহ চট্টগ্রামবাসী তা আজীবন মনে রাখবে। বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হয়েও তিনি সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ধনের চেয়েও মনের দিক থেকে তিনি অনেক বড় মাপের মানবিক মানুষ ছিলেন। গরীব দুঃখী সাধারণ মানুষের বেদনা তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করত বলেই তিনি গণমানুষের রাজনীতিকে ধারণ করে তাদের প্রিয় নেতা হতে পেরেছিলেন। আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভুগে অবশেষে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর সকাল ৮.৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি এক ভাই, স্ত্রী, এক কন্যা, আত্মীয়স্বজনসহ অনেক গুণাগ্রাহী রেখে যান। তাঁর অকাল মৃত্যুতে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয় এবং সমাজ হারিয়েছে একজন বরেণ্য মানবতাবাদীকে। এই সময়ের রাজনীতিতে রফিকুল আনোয়ারের মতো উদার চিত্তের নেতার বড়ই অভাব। বর্তমানে তাঁর একমাত্র কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ফটিকছড়ির মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ারের অবদান ছিল সমাজের প্রতিটি কল্যাণকর কাজে। মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁকে ওপারে ভাল রাখুক এই প্রত্যাশা।
লেখক : প্রাবন্ধিক, মরমী গবেষক ও গ্রন্থপ্রণেতা।