পরিস্থিতি২৪ডটকম : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গরমের তীব্রতা।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে গরম আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় তিন দিনের জন্য হিট অ্যালার্ট দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিতে। কর্মজীবীদের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি। গরমে যেসব রোগ দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো- ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক ইত্যাদি। এ পরিস্থিতিতে একটু অসতর্কতায় ঘটতে পারে বিপদ।
তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এমন তীব্র গরমে অসুস্থ হওয়া স্বাভাবিক, তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এ গরমেও নিরাপদ থাকা যায়, ভালো থাকা যায়। বাইরে বের হলে বা রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
শরীরের কোনো অংশে সরাসরি দীর্ঘক্ষণ রোদ লাগানো যাবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, সানগ্লাস ও ছাতা, মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার পানি বা শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে অবশ্যই নিরাপদ পানি নিতে হবে।
বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, এ গরমে যারা সরাসরি সূর্যের আলোতে কাজ করেন, তাদের প্রচুর ঘাম হয়, ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। শরীর থেকে পানি ও লবণ কমে গেলে পানিশূন্যতা বা ডি-হাইড্রেশন হয়।
তিনি বলেন, শরীর থেকে পানি ও লবণ কমে গেলে মানুষ শকে চলে যেতে পারেন, ব্লাড প্রেশার কমে যেতে পারে, মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, কিডনি অচল, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়ে যেতে পারে। তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গরমে সুস্থ থাকতে করণীয় সম্পর্কে এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী বলেন, এ সময়ে অনেক পানি পান করতে হবে, সঙ্গে ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। সহজে হজমযোগ্য তরল খাবার খেতে হবে। প্রচুর ঘাম হলে স্যালাইন বা হালকা লবণ মিশ্রিত পানি পান করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, শ্রমিক, বিশেষ করে যাদের বাইরে কাজ করতে হয়, তারা যেন ছাতা ব্যবহার করেন। ছাতা না হলেও অন্তত মাথায় ক্যাপ কিংবা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কাজের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপর অন্তত কয়েক মিনিট ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি কথা হলো, টানা কেউ যেন বেশি সময় রোদে কাজ না করেন।
ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ঝড়, বন্যার মতো হিট অ্যালার্টকে আমরা এখনো তেমনভাবে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারিনি। হিট অ্যালার্ট যে স্বাস্থ্যের জন্য বড় দুর্যোগ, তা আমাদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে। শুধু হিট অ্যালার্ট ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, তীব্র গরমকে দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অবলম্বনের আহ্বানও জানান এ চিকিৎসাবিজ্ঞানী।