পরিস্হিতি২৪ডটকম : কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারি সড়কের হিমছড়ি ঢালায় সশস্ত্র ডাকাতের গুলিতে বাবার সামনেই এক শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জনি দে রাজ (২০) রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ঈদগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরপাড়ার (শিয়াপাড়া) এলাকার তপন দের ছেলে। জনি ঈদগাঁও কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গান করত সে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন জানান, ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় আসার পথে হিমছড়ি ঢালায় সিএনজিবাহী যাত্রীরা ডাকাত দলের কবলে পড়েন। এ সময় ডাকাতের গুলিতে কণ্ঠশিল্পী জনি নিহত হয়।
অন্য যাত্রীদেরও আঘাত করেছে ডাকাত দল। সড়কটি দিয়ে পার্বত্য নাইক্ষংছড়ি, রামু ও কক্সবাজার সদরের তিন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনকে চলাচল করতে হয় বলেও জানান তিনি।
নিহতের বাবা তপন দের বরাত দিয়ে ঈদগড়ের সমাজকর্মী নুরুল আবছার জানান, বুধবার রাতে একটি সামিজক আয়োজনে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিল জনি রাজ। সঙ্গে তার বাবা এবং এলাকার আরও একজন ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সিএনজি নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন বাবা-ছেলেসহ অন্যরা।
ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় পৌঁছামাত্র ১০-১৫ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল তাদের গতিরোধ করে। তারা জনি রাজকে অপহরণ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে জনি। তখন তাকে এবং অন্যদেরকে প্রহার করে ডাকাতদল। ধস্তাধস্তি হাতাহাতিতে রূপ নিলে এক পর্যায়ে জনির মাথার ডানপাশে গুলি করে পাহাড়ের ভেতর ঢুকে যায় ডাকাতদল। জনিকে উদ্ধার করে ঈদগাঁও মেডিকেল নামে একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থলের অদূরে পশ্চিম ভোমরিয়াঘোনা এলাকার পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ জনি রাজকে হাসপাতালে আনার সময় পুরো পথেই রক্ত পড়েছে। এ সময় সঙ্গে থাকা তার বাবা গাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ছেলের মৃত্যু হয়েছে জেনে হাসপাতালে বার বার জ্ঞান
হারাচ্ছিলেন তিনি।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক আবদুল হালিম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজার জেলার পুরো পুলিশ টিমই নতুন। ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রে আসা সকল পুলিশ সদস্য এখানকার জন্য নতুন। সবখানে চিনে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। নতুন জায়গায় এসে আমি নিজেসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি এলাকাটিতে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পুলিশ পাহারা থাকত জানতে পেরে সেভাবেই পুলিশ টহল চালু রয়েছে। তবে, সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ টহল শুরুর আগে সিএনজি পেয়ে দুর্বৃত্তরা অ্যাটাক করেছে বলে জানান তিনি।
ওসি হালিম আরও বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি এর আগেও নিহত জনি রাজকে দুর্বৃত্তরা অ্যাটাক করেছিল। আজও (বৃহস্পতিবার) তাকে অপহরণ করতে চেয়েছিল বলে প্রকাশ পেয়েছে। পূর্ব কোনো ঘটনার জেরে এটা হলো কিনা তাও খতিয়ে দেখছি আমরা। তার মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও সড়কটির হিমছড়ি ঢালায় ডাকাতের গুলিতে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটে। বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আবু মুছা ও এসআই আনিস দায়িত্বপালনকালে ঝুঁকি নিয়ে এসব ডাকাতদের গুলি করতে করতে পাহাড়ে ধাওয়া দেয়ার পর কয়েক বছর ডাকাতি ও অপহরণ বন্ধ হয়। তারা বদলি যাওয়ার পর সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে না ওঠায় ডাকাতদল আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।