বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সোহেল মো. ফখরুদ-দীন’র “অথৈ” একটি মনোমুগ্ধকর স্মারকগ্রন্থ : মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

  প্রকাশ : ২০১৯-০১-১৪ ১৫:২৭:৪৪  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ইতিহাস মঞ্চ ও চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর যৌথ আয়োজনে এর আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও সাহিত্য সম্মেলন ২০১৮ এর উপলক্ষে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর সভাপতি  ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রাহক এবং  লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন’র সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল কবি সাহিত্যিকদের কবিতা ও প্রবন্ধ সংকলন  “অথৈ” স্মারকগ্রন্থটি মনোমুগ্ধকর একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থটিতে শীত, আশাবাদী, দেশত্ববোধক, মাতৃভাষা বাংলা, বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত, প্রিয়জন মায়ের শাসন ও ভালোবাসা নিয়ে কবিতা সহ আরো কবিতা স্থান পেয়েছে। যা কবিতা প্রেমী এবং লেখক ও গবেষকদের জন্য ভালো লাগার মত সত্যি অসাধারণ গ্রন্থ। তাছাড়া এই বইটিতে প্রাচীন চট্টগ্রাম সম্পর্কে এবং গুণী ব্যক্তিত্বদের জীবনকর্ম সহ অসংখ্য প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।গ্রন্থ: অথৈলেখক ও প্রকাশক: সোহেল মো. ফখরুদ-দীন প্রকাশনী: সাজিদ আলী প্রকাশনপ্রকাশকাল: ০৪ নভেম্বর ২০১৮পৃষ্টা: ৪৮শুভেচ্ছা মূল্য: ২২০ টাকা মাত্র।শুরুতে লেখক তার “প্রাচীন চট্টগ্রাম ও কিরাত বাংলা প্রসঙ্গ” প্রবন্ধে প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে চট্টগ্রামের ইতিহাস জানা ও সচেতনতার বৃদ্ধির লক্ষে ০৯ ই জানুয়ারী ২০১০ সাল থেকে প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাসের বিলুপ্ত অধ্যায়ের ঐতিহাসিক কিরাত ভূখণ্ড ও কিরাত আদি জাতির ইতিহাসকে স্বরণীয় করে ধরে রাখতে কিরাত বাংলা www.kiratbangla.com নামে ওয়েবসাইট চালু করেছিল। বাংলার প্রাচীন ইতিহাসে এ চট্টগ্রামের নামের পরিবর্তন হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে ৩৭ বার। যথাক্রমে- আদর্শদেশ,সুহ্মদেশ,ক্লীং বা কালেন,রম্যভূমি, চিতাগাঁও, চিৎগাঁও, চট্টল,  চৈত্যগ্রাম, সপ্তগ্রাম,  চট্টলা,  চট্টগ্রাম, চক্রশালা, চন্দ্রনাথ, চরতল, চিতাগঞ্জ, চটীগাঁ, শ্রীচট্টল, সাতগাঁও, সীতাগঙ্গা (সীতাগাঙ্গ), সতের কাউন, পুষ্পপুর, রামেশ, কর্ণবুল, সহরেসবুজ, পার্ব্বতী, খোর্দ্দ-আবাদ, porti grando (বৃহৎ বন্দর), ফতেয়াবাদ, আনক, রোশাং, ইসলামাবাদ, মগরাজ্য, Chittagong,  কিরাত, যতরকুল, চক্রশা, কেলিশহর, পেন্টপোলিস। এই রকম তথ্যসহ আরো বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।এই বইয়ে লেখক ও সাংবাদিক এ, কে এম, আবু ইউসুফ এর “অথৈ” আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও সাহিত্য সম্মেলন ২০১৮ প্রসঙ্গ কথা শিরোনামে একটি লেখা স্থান পেয়েছে। এতে লেখকের  ক্ষোভ ফুটে উঠেছে। তবে তিনি অঙ্গীকার ও আশা ব্যক্ত করে বলেন,সমুদ্রের এই বিশাল জলরাশি যেন হারিয়ে যায় অথৈ জলে কোন কিনারা  যেমনি পায়না তেমনি আজ আমার মায়ের ভাষা বাঙালা হারিয়ে যেতে বসেছে অজানা অথৈ সাগরে। আক্রন্ত আজ মাতৃভাষা।নানা ভাবে, নানা কারণে প্রিয় মায়ের এই ভাষাটিকে হারিয়ে যেতে দিচ্ছি আমরা। আমাদের এই প্রিয় মাতৃভাষা রক্ষার জন্য বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। যে কোন মূল্যে এ ভাষাকে ভিনদেশী ভাষার অগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হবে। ভাষা শহীদের আত্মদানে অর্জিত এই মায়ের ভাষাকে রক্ষার যে আলোর প্রজ্জ্বলন তারা জ্বেলেছিল আমরা সেই পথ ধরে অগ্রসর হতে চাই। অজানা, অগভীর অথৈ সমুদ্রে আমাদের এই মাতৃভাষাকে হারিয়ে যেতে দেবো না। এমন কি লেখক বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ইতিহাস মঞ্চ ও চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর যৌথ আয়োজনে এর আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও সাহিত্য সম্মেলন ২০১৮ এর উপলক্ষে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর সভাপতি  ইতিহাস-ঐতিহ্য সংগ্রাহক এবং  লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন’র সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল কবি সাহিত্যিকদের কবিতা ও প্রবন্ধ সংকলন  “অথৈ” স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত করার জন্য মোবারকবাদ জানাতে ভুলেন নি।এই বইয়ে শীত নিয়ে কবি বিপুল কুমার দত্তের “ঝরে পড়া পাতার বীণা” কবিতা এবং নাছির বিন ইব্রাহীমের “তুমি আসবে বলে” কবিতা স্থান পেয়েছে। কবি বিপুল কুমার দত্ত তার কবিতায় লিখেছেন- ঝরে- পড়া পাতার বীণা/শীত নেমেছে/গায়ে কুয়াশার সাদা চাদর/সাদা চাদরের নীচে বাজে/ঝরে- পড়া পাতার বীণা/সকরুণআর নাছির ইব্রাহীম তার কবিতায় লিখেছেন-” তুমি আসবে বলে হে শীতের হিমবাহ/আমিও দূরবীন নিয়ে প্রস্তুত,পশু আর মানুষের ফারাক খু্ঁজতে/অবশেষে তুমি এলে হে শীতের বহুরুপী ঋতু।”সবাই শান্তি চাই! কবি উদয়ন বড়ুয়া (ঝুন্টু)ও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। লেখক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার স্মারকগ্রন্থে উদয়ন বড়ুয়া (ঝুন্টু)’র “সর্বোপরি আমি শান্তি চাই” কবিতাটি স্থান দিয়েছেন। কবি লিখেছেন-                     “আমি মৈত্রী চাই                      জাতিতে জাতিতে                       শত্রুতা মিত্রতে                        সকল বাদ বিবাদে                        শাসক-শাসিতের সম্পর্কে                        আর ধনী দারিদ্র্যতার মাঝে                         সর্বোপরি আমি শান্তি চাই”এই বইয়ে দেশত্ববোধক বরুণ চক্রবর্তীর “আমার বাংলাদেশ” ও তারকনাথ দত্তের “রূপসী বাংলা” কবিতা স্থান পেয়েছে। বরুণ চক্রবর্তী তার কবিতায় লিখেছেন-দুই বাংলা এই বুকেতে আমার কাছে তাই /বাংলাভাষার ঊনিশ-একুশ শহিদ এর গান গাই /বুকের রক্তর হউক অবসান দ্বন্ধ-বিদ্ধেষ /নাক বরাবর ওই চেয়ে দ্যাখ আমার বাংলাদেশ।তারকনাথ দত্ত তার কবিতায় লিখেছেন- কেমনে কই ভালো আছি/তোমায় ছাইড়া শেষ/ওই দেখা যায় পদ্মা পাড়ে/আমার বাংলাদেশ।লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার “অথৈ” স্মারকগ্রন্থে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল হালিমের “বাংলা ভাষা”, শংকর হালদারের “ভাষায় একুশ-ভালোবাসায় একুশ”, ডা এম এ মুক্তাদীরের “৮ ফালগুন ২১ ফেব্রুয়ারী” এবং আমি অধম (মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন) এর “অমর একুশ” সহ কবিতাগুলি স্থান দিয়েছেন। এই বইয়ে দেলোয়ার হোসেন মানিকের “মা” কবিতাটি স্থান পেয়েছে। “মা” কবিতাটিতে মায়ের শাসন ও ভালোবাসা ফুটিয়ে উঠেছে। কবি লিখেছেন-সকাল বেলা সূর্যি মামা ঘরে উকি দেয়,/মা জননি হাত বুলিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়।/খেলার মাঠ থেকে আসতে দেরী হলে,/একটু খানি বকা দেয়।”কবি আরো লিখেছেন-অসুস্থ হলে সারা রাত জেগে থেকে,/বিদাতার কাছে ফরিয়াদ করে,/মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।এই বইয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতি উৎসর্গকৃত সিরাজুল করীমের “তুমি বঙ্গবন্ধু মানেই আমার বাংলাদেশ” কবিতাটি স্থান পেয়েছে।কবি তার কবিতায় বলেন,বঙ্গবন্ধু মানেই লাল-সবুজের অহংকৃত পতাকার আমার বাংলাদেশ………/বঙ্গবন্ধু মানেই গণমনুষের খেটেখাওয়া দাবিনামার ছেষট্টির ছয়দফা……../ বঙ্গবন্ধু মনেই সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহাকালের মহানায়ক…….এই বইয়ে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার নিয়ে শিহাব ইকবালের “কক্সবাজারে” কবিতাটি স্থান পেয়েছে। কবি তার কবিতায় লিখেছেন-            “কক্সবাজারে অনেক কিছুই আছে,               আছে অনেক স্বর-               দরিয়া নগর।”কবি আরো লিখেছেন-        “কক্সবাজারে অনেক কিছুই আছে,           আছে স্বপ্নছবি-          লক্ষ তরুণ কবি।”বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ইতিহাস মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র এর সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও সাহিত্য সম্মেলনের আহবায়ক  সোহেল মো. ফখরুদ-দীন কে উৎসর্গ সাফাত বিন ছানাউল্লাহর “ইতিহাস ও সাহিত্য সম্মেলন” কবিতাটি স্থান পেয়েছে। একই সাথে  সৈয়দ ছাদেক শিবলী কফিলের “বাংলাদেশ ভারত নেপাল ইতিহাস মঞ্চ” কবিতাটিও গুরুত্ব পেয়েছে।লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার “অথৈ” স্মারকগ্রন্থে এস. জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু (নিপুন বড়ুয়া) এর “মহাজ্ঞানী অতীশ দীপঙ্করের মহাঅভিযাত্রা” গবেষণাধর্মী লেখাটি স্থান দিয়েছেন।এই বইয়ে দেবাশীষ বড়ুয়া রাজুর “রমেশ-বিনয়-শেফালি তিন দিকপাল” লেখাটি স্থান পেয়েছে। লেখক তার লেখায় তিন গুনী শিল্পীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন। এ তিন গুনী শিল্পীর জন্ম চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়।তিন জনই বাংলাদেশ সরকারের সর্ব্বোচ্চ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাদের সৃষ্টি কর্ম নিয়ে চলছে গবেষণা। এমন কি তাদের নিয়ে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে।এই বইয়ে মো:কামাল উদ্দিনের “পর্যটন শিল্পে ‘ফুল প্যানোয়া’ বা কক্সবাজার” লেখা স্থান পেয়েছে। এই লেখাটিতে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা এবং সম্ভাবনা বাংলাদেশ ফুটে উঠেছে।এই বইয়ে অধ্যাপক জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়ার “মহামন্য নবম সংঘরাজ নাগসেন মহাস্থবির’র জীবনী” এবং রাখাল মজুমদারের “মিসকল”  অনুগল্পসহ আরো কিছু কবিতা ও প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।তাছাড়া লেখক ও গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ-দীন তার “অথৈ” স্মারকগ্রন্থে  নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস এর সাথে লেখকের ছবি সহ বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ইতিহাস মঞ্চের উদ্যেগে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আলোকচিত্র সমূহ স্থান দিয়েছেন।এই স্মারকগ্রন্থটি সব মিলিয়ে একটি মনোমুগ্ধকর। যা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীপ্তময় পথচলায় তার প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভ কামনা জ্ঞাপন করছি।
আলোচক : কলামিস্ট। 



ফেইসবুকে আমরা