পরিস্হিতি২৪ডটকম : ১০ম চট্টগ্রাম ইতিহাস উৎসব ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস বিশ্ব দরবারে তুলে ধরুন। বাংলাদেশের ও পৃথিবীর প্রাচীনতম বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরব কথা। আমাদের এই চট্টগ্রামের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, সভ্যতা, পুরাতত্ত্ব, লোকসাহিত্য, জারি-সারি, মারফতি, মাইজভান্ডারী, কবিগান, পালাগান, মরমীবাদী, সুফিবাদী চর্চা, মোগল আমল, সুলতানি আমল, ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, গণতন্ত্র চর্চার ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের। চট্টগ্রামের রাজনীতিক ইতিহাসে রয়েছে মহাগৌরব। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধসহ সর্ব ধর্মের লোকজন আছে শান্তিতে সহ-অবস্থান। চট্টগ্রাম সমতল ও পাহাড় নিয়ে গঠিত। ইতিহাস গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আজ হতে সাড়ে চার হাজার বছর আগে এই চট্টগ্রামে মানব বসতি ছিলো। বর্তমান সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এটি চট্টগ্রামের অংশ ও পরবর্তিতে চট্টগ্রাম বিভাগ ছিলো। তবে এখন আলাদা আলাদা জেলা। মিরসরাই থানা থেকে লোহাগাড়া, সমুদ্রের সন্দ্বীপ থানা পর্যন্ত বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রামের ইতিহাসে পৃথিবীর প্রথম হিন্দু ধর্মীয় অন্যতম পূজা দুর্গাপূজা শুরুর মেধস আশ্রম এই চট্টগ্রামে, মহামানব গৌতম বুদ্ধের আগমনের সংবাদ, নবি মুহাম্মদ (সা) এর সাহাবা হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের (রা) এর চট্টগ্রাম আগমনের সংবাদ ইতিহাসে নন্দিতভাবে প্রচারিত রয়েছে। এই পযর্ন্ত শাসন করেছে বিভিন্ন রাজা বাদশাগণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিলো অসাধারণ। এই চট্টগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হাবিলদার রজব আলী ও বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের গৌরবগাথা ইতিহাস আছে। আছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মদানের ইতিহাসও। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের নাম বদল হয়েছে ৩৭ বার। বর্তমানে চিটাগাং চট্টগ্রাম নামেই পরিচিত। সুফি-দরবেশের প্রভাব চট্টগ্রামে এখনো বিস্তৃত আছে। সে কারণে চট্টগ্রামকে বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি বলা হয়। অন্য দিকে প্রাচ্যের রাণী বীর প্রসবিনী, বন্দরনগরী বাণিজ্যিক রাজধানী, আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী, কল্যাণময় নগরী এমন অসংখ্য নামে পরিচিত এই চট্টগ্রাম। হাজার হাজার বছরের এই প্রাচীন চট্টগ্রামের ক্ষণজন্মা কৃতিপুরুষদের বীরত্বের কথা ইতিহাসে সোনালী অরে লেখা রয়েছে। বক্তারা আরো বলেছেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের গৌরবময় চট্টগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জাতীয় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে প্রাচীন চট্টগ্রামের ইতিহাস চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে পারলে প্রজন্ম সমৃদ্ধি লাভ করবে। একই সাথে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ত্যাগী নেতাকর্মীর জীবনকর্ম ও আদর্শবান সৎ পথের উদ্দেশ্যে দেশপ্রেম এই সমস্ত ইতিহাসগুলো বর্তমান প্রজন্মকে জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আসুন আমরা সকলে মিলে এই প্রজন্মকে ইতিহাস পাঠে আগ্রহী ও প্রকৃতি ইতিহাস তাদের কাছে পৌঁছে দিই। উৎসবে বক্তারা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে লেখালেখি ও গবেষণার মাধ্যমে এই ইতিহাস বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার আহ্বান জানান। চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রতœসম্পদ ও প্রাচীন চট্টগ্রামের গৌরবগাথা ইতিহাস বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার ল্েয ১০ম ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম ইতিহাস উৎসব ২০১৯ গতকাল ৭ এপ্রিল নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে এই উৎসবে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ও চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক লায়ন হাকিম আলী। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থ প্রণেতা এ কে এম আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় এই উৎসবের বিভিন্ন পর্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের জয়েন্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুরুল আবছার চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রম আদালত ৪র্থ জুরিবোর্ড সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কবি এম এ সাত্তার, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক এম এ সবুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিনবোধি ভিুক্ষু, বিশিষ্ট লেখক গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবু তালেব বেলাল, সিএইচআরসি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রহিম, প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা কিরণ লাল আচার্য, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ সিদ্দিকুল ইসলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ পাবলিসিটি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা স্কাউটসের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, কক্সবাজার ইতিহাস চর্চা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ ইউনুছ কুতুবী, প্রাবন্ধিক এস এম ওসমান, বিজয়’৭১ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. জামাল উদ্দিন, কবি দেলোয়ার হোসেন মানিক, প্রবীণ সাংবাদিক সাইফুদ্দিন, সংগঠক অধ্য রতন দাশ, ইতিহাসবিদ অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, শিক্ষাবিদ এ, কে, এম মোফাজ্জল হায়দার, অধ্যাপক রিপন চক্রবর্তী, প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্য জীতেন্দ্র লাল বড়ুয়া, বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক কবি উদয়ন বড়ুয়া ঝুন্টু, পুথিপাঠক ও লেখক ইমাম মোহাম্মদ আবদুল হালিম, লেখক প্রকৌশলী সৌমেন বড়ুয়া, মোপলেসের সভাপতির সজল দাশ, ভদন্ত শ্রীমৎ এস লোকজিৎ থেরো, প্রবীণ শিক্ষাবিদ নুরুল আলম মাস্টার, সাংস্কৃতিক সংগঠক শওকত আলী সেলিম, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমর কান্তি দত্ত, রাজনীতিক মহিউদ্দিন, কবি সাফাত বিন সানাউল্লাহ, মানবাধিকার সংগঠক জাফর ইকবাল, ডা. ডি কে ঘোষ, সাইফুল আবরার, এহেসানুল হক, সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক, হামিদা আকতার, মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সানজিদা ইসলাম কলি, মোহাম্মদ আলী, ফাহমিদা ইসলাম পুষ্পা, জুয়েল বড়ুয়া, কবি মাহবুবুর রহমান, গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, মিহির দাশ, ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক সংগঠন পার্থ দাশ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হ্যাপী দাশ, সাংবাদিক অনুতোষ দত্ত বাবু, মাওলানা আনোয়ার প্রমুখ।