পরিস্হিতি২৪ডটকম : বন্দরনগরীর ফুসফুসখ্যাত চিরসবুজ সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) বুকে ছয় একর জায়গাজুড়ে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে এবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ আটজনকে বিবাদী করে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ (লিগ্যাল নোটিশ) জারি করেছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)।
আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয় নোটিশে।
বুধবার (১৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বিএইচআরএফ পরিচালক, ট্রাস্টি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবিব আহসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডাক ও ইমেইলযোগে এ নোটিশ জারি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
নোটিশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও বিবাদী করা হয়- রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, উন্মুক্ত স্থান দখল, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন ও শতবর্ষী গাছ নিধন করে শহরের প্রাণকেন্দ্র সিআরবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ইউনাইটেড গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।
নোটিশে বিবাদীদের আগামী সাতদিনের মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী এ প্রকল্পের স্থান অন্যকোনো যৌক্তিক জায়গায় সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। যাতে পরিবেশ, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট না হয়।
এছাড়া প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে বিএইচআরএফ-এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপযুক্ত আদালতে মামলা কিংবা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার ঘোষণাও দেয়া হয় নোটিশে।
নোটিশে বিবাদীদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়, সিডিএ প্রণীত তালিকা অনুসারে ঐতিহাসিক, নান্দনিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সিআরবির মত জায়গা ও স্থাপনাসমূহকে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যা সিডিএর ওয়েবসাইটেও দেয়া।
অন্যদিকে, ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও গাছ নিধন করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে, সংবিধানের ১৮-ক ও ২৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। যেখানে পরিবেশ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানসমূহকে সংরক্ষণের কথা স্পষ্ট বলা আছে।
ছায়াদানকারী শতবর্ষী গাছ, বিভিন্ন প্রজাতির সবুজ বৃক্ষ ও পাখির বিচরণক্ষেত্র মিলিয়ে প্রকৃতির এক দারুণ মায়াজাল সিআরবি। সেইসঙ্গে শহরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা, ঐতিহাসিক স্থাপনা রেলওয়ে বিল্ডিং, শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণদের আড্ডা ও খেলাধুলা এবং পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নগরীর প্রধানতম স্থান এই সিআরবি।
যেখানে হাসপাতাল নির্মিত হলে সেই হাসপাতালকে ঘিরে মানুষ ও যানবাহনের অবাদ চলাচল এবং বর্জ্য নিঃসরণসহ নানা কারণে হুমকির মুখে পড়বে সিআরবি সৌন্দর্য্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য।
জানতে চাইলে আবেদনকারী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন বলেন, ‘নোটিশের মেয়াদকালে সমস্যার সমাধান না হলে বিএইচআরএফ মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করতে বাধ্য হবে না।’
এর আগে গত সোমবার (১২ জুলাই) চট্টগ্রামের ১৭ বিশিষ্ট নাগরি সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতেও বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ থেকে সংশ্লিষ্টদের সরে আসার আহ্বান জানান। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলন ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেয়া হয়।
সুত্র : জাগো নিউজ২৪ডটকম।