পরিস্হিতি২৪ডটকম : পাটশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাবলিক-প্রাইভেট প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এই শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দেশে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত দিবসটির এবারের স্লোগান ‘সোনালি আশেঁর সোনার দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ’। আলোচনা সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পাটপণ্যের মেলা উদ্বোধন করেন।
পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাটশিল্প টিকিয়ে রাখতে হবে। পাট কৃষিজাত পণ্য। এর সঙ্গে আমাদের কৃষকদের ভাগ্য জড়িত। তাই এটি অন্য কৃষিজাত পণ্যের মতো প্রণোদনা পাবে। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের ক্ষেত্রেও এই পাট ছিল একটা বড় ইস্যু। পাটের বহুমুখি ব্যবহারের মাধ্যমে সামনে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। তাই এই পাট শিল্পকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। এখানে আমরাও প্রণোদনা দেব।
পাটের বহুমুখি ব্যবহারের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট এমন একটি পণ্য যার কোনোটিই ফেলা যায় না। পাটের ব্যাগ পরিবেশ বান্ধব। এটা পলিথিনের মতো না। মাটিতে পড়লে পচে যায়। পাটশাক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। পাটখড়ি জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগে। আগে পাট দিয়ে ঘরের বেড়াও দেয়া হতো। ছোটবেলায় আমরা পাঠখড়ি দিয়ে ফড়িং ধরে বেড়াতাম। পাঠখড়ি দিয়ে খেলতাম।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক জঙ্গি ধরপাকড়
পরোক্ষভাবেও পাটের উপকারিতার কথা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। পাটের পাতা মাটিতে পড়লে সেখানে উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়। তাই পাটের পর ধান চাষ করলেও সেখানে ভালো ফলন হয়। এখন পাটের চাও এখন তৈরি হচ্ছে। পাট দিয়ে এখন হারবাল মেডিসিন, প্রসাধনী সামগ্রীও তৈরি হয়। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃস্মরণ করে পাট ক্ষেত। এর মাধ্যমে পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে পাটক্ষেত।
তিনি বলেন, পাটপণ্যকে আমরা যাতে আরও রপ্তানী করতে পারি সেদিকে নজর দিতে হবে। এটাকে ব্র্যান্ডিং করে বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এটিকে এগিয়ে নিতে হবে। পাট চাষকে সহজ ও প্রযুক্তি বান্ধব করতে পাটগাছ লাগানো থেকে আঁশ বের করা পর্যন্ত আমরা আধুনিক প্রযুক্তি বের করছি।
পাটশিল্পকে এগিয়ে নিতে তার সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছে। অথচ এটাই ছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ। পাটের ন্যায্যমূল্যের দাবি নিয়ে আমরাও আন্দোলন করেছি। এরপর সরকারে এসে পাটকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে এটিকে একটি অর্থকরী ফসলে পূর্ণ করলাম। আমরা গবেষণায় মনযোগ দিলাম। মকসুদুল আলম সাহেব আমাকে বললেন তিনি গবেষণা করে কিছু বের করবেন। আমরা সেই সুযোগ করলাম। তিনি পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচন করলেন।
তিনি বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে পাটে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হলো। উন্নত প্রযুক্তির বীজ তৈরির মাধ্যমে ফলন বাড়ানোর সুযোগও আসল। তাছাড়া এই গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হলো পাট যে আমাদের পণ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি পাট খাতে লোকসানের কথা তুলে ধরেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক পাটমন্ত্রী মির্জা আজম। তাকে আমি এই সংসদের বস্ত্র ও পাট বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান করেছি। তিনি অনেক লোকসানের কথা বলে গেলেন। কিন্তু এত হতাশ হওয়ার কী আছে? যার কিছুই ফেলে দেওয়া যায় না, সেই পাটে লোকসান হবে কেন?