পরিস্হিতি২ডটকম : সংস্কৃতি একটি বিকাশমান বিষয় এতে কোন সন্দেহ নেই। সংস্কৃতির এ বিকাশের সূচনা সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্ম লগ্ন থেকেই। মানুষ যখন বস্ত্র পরিধান করতো না তখনো মানুষের মধ্যে জীবিকা নিবারণের কৌশল ছিল, নিজেদেরকে সংঘবদ্ধ রাখার জন্য বা গোত্রের সকল সদস্যদের মাঝে আনন্দ দানের জন্য নানা রকমের আয়োজন ছিল। সেটা সেই সময়কার রিনোদনের মাধ্যম । এ রকমের নানান রকমের কৌশল,আদেশ নিষেধের মধ্য দিয়ে গোত্রগত নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকতেন গোত্রপ্রধান গন। কালে কালে ঐ সকল গোত্রের জন্য ঐ সকল আচার তাদের সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। এর পর মানুষ সভ্যতার প্রথম ধাপে গাছের পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারন করতে শুরু করেছে। আগুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জীবণের আমুল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এ এক নতুন দিগন্তের সূচনা। এর পর থেকে মানুষকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মানুষ ভূমি ও পানির ব্যবহার করতে শিখেছে, কৃষি কাজের সূচনা হয়েছে। দুনিয়া জুড়ে কাল মানুষ সাদা মানুষ হরেক রকমের মানুষে মিলে এক এক অন্চলে প্রকৃতির এক এক রূপের সাথে এক এক আচরণে অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে উঠেছে। তাদের প্রকৃতি, নিজেদের ভাষা, আচার, চলন বলন, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে তাদের নিজেস্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতা। এশিয়াতে চীনের মানুষের মাঝে এক ধরনের সংস্কৃতির বিকাশ, ভারতীয়দের মাঝে আরেক ধরনের, আরব্য দেশ সমূহে অন্য রকমের জাপান, ইন্দোনেশীয়া দ্বীপ রাষ্ট্র গুলোতে ভিন্ন প্রকৃতির সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে অঞ্চল ভেদে নিজস্ব সংস্কৃতিতো আছেই। আফ্রিকায় শত রকমের জাতি তারা তাদের প্রকৃতি, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ি সৃষ্টি করেছে তাদের শত রকমের নিজস্ব সংস্কৃতি। ইউরোপেও তাই।
আমরা বাঙালি আমাদেরো আছে নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, পোশাক আশাক। আমাদের ভাষা পৃথিবীর যে কোন ভাষার চাইতে সাবলিল ও গুরুগম্ভীর, আমাদের আছে নিজস্ব সংগীত , ভাটিয়ারী, মুর্রশিদী পল্লিগিতী, লালন, আমাদের আছে রবী – নজরুল কি নাই।
এত সম্মৃদ্ধশীল সংস্কৃতি পৃথীবির খুব কম জাতির আছে। আমরা তা উপলব্ধি করি না বা জানি না বা জেনেও অবজ্ঞা করি। তার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব সংস্কৃতির বিকাশ যেভাবে বাংলা সংস্কৃতিতে বিকশিত হয়েছে বাংলা সংস্কৃতি কি সেভাবে বিশ্ব সংস্কৃতিতে বিকশিত হয়েছে? হয়নি। কারন অনেক থাকতে পারে তবে প্রধান কারনটি হল আমাদের পরশ্রীকাতরতা। পরের সব কিছু আমাদের ভাল লাগে আর ঘরেরটা ভীষন তেতো।
আমরা পশ্চিমা সংস্কৃ্তিতে অভ্যস্ত হয়ে তাদের ঢঙে নিজেকে রাঙাতে পারলে নিজেকে খুব সভ্য ও আধুনিক ভাবছি। আমাদের পোষাক, আমাদের গান, আমাদের আচার, আমাদের আমিত্ব পশ্চিমা সংস্কৃতির নিকট লীন করে দিয়েছি, মেয়েরা শাড়ী ছেড়ে জিন্স কিংবা স্কার্ট বা মিনি স্কার্ট ধরেছি, ছেলেরা ওয়েস্টার্ণ পোষাক না পরিধান করলেতো একেবারেই ক্ষেত। ইংরেজী গান গাইতে পারলেই ভীষন মর্যাদাশালী শিল্পী। ইংরেজী রক, হাই মেটালিক গান না গাইলে তো সে কোন গায়কের মধ্যেই পরে না। তারা আমাদেরকে খেয়ে ফেলেছে।
আমরা কি পেরেছি আমাদের জারি শারি, ভাটিয়ারী, মূরশিদি, পল্লী – লালন কিংবা রবী – নজরুলে তাদেরকে আসক্ত করতে? আমাদের শাড়ী কি তাদের মধ্যে জনপ্রিয় পোষাকে পরিনত করতে? আমাদের যা কিছু আছে গর্ব করার সেমগুলো কি তাদের মধ্যে আমরা বিকশিত করতে পেরেছি? ময়ুরের পুচ্চ লাগালে কাক ময়ূর হয় না শুধু মাত্র হাসির পাত্র হয়। আমরাও আজ পশ্চিমাদের কাছে তাই।
তাদের তুলনার আমাদের আমিত্বের ঘনত্ব কম বলেই তাদের সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে অভিশ্রুত হচ্ছে। এটাই অভিশ্রবন পক্রিয়ার ধর্ম।
বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ হোক বিশ্ব সংস্কৃতিতে ।
বাঙালি হই। ভালবাসতে শিখি নিজেকে। শ্রদ্ধাশীল হই নিজের আমিত্বের প্রতি।
চলবে…
লেখক : কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক।