পরিস্হিতি২৪ডটকম : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের ওপর বার বার আঘাত এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের নাম এখনও সমুজ্জল। আওয়ামী লীগের শিকড় এতই গভীরে প্রথিত যে, শত ষড়যন্ত্র করেও কেউ উপড়ে ফেলতে পারেনি, বরং আওয়ামী লীগের ওপর যতবার আঘাত এসেছে, ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে- আওয়ামী লীগ ততই শক্তিশালী হয়েছে।’
গত ৭০ বছরের ইতিহাসে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের নামই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেশবাসীর কাছ থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিশ্বাস-আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল মাত্র ২৯টি আসন পায়। ক্ষমতায় থাকতে বল্লাহীন দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলা, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি, হাওয়া ভবনের নামে দেশের মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার, দুঃশাসন এবং মানুষের সম্পদ লুট করে খাওয়ার ঘটনায় দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি অতিষ্ট ছিল। তাই তারা নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যান করে।
আওয়ামী লীগের জন্মদিনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কারণেই বারবার আঘাত ও নির্যাতনের পরও দল শক্তিশালী হয়েছে। আওয়ামী লীগ দিনে দিনে যে ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, তা ধরে রাখতে দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মুজিবাদর্শে দিক্ষিত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে দেশের মানুষের কল্যাণ, মুক্তি, স্বাধীনতা ও সকল অর্জনের ইতিহাস জড়িত। দেশের জন্য আওয়ামী লীগের বিপুল নেতাকর্মীর বিশাল আত্মত্যাগ রয়েছে। অন্য কোন রাজনৈতিক দলের দেশ ও দেশের মানুষের জন্য এতো আত্মত্যাগ নেই। আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে বার বার আঘাত ও ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ হচ্ছে হীরের টুকরার মতো। যতবেশি আঘাত এসেছে ততবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পচাঁত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে শত আঘাতেও আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে গেছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন সম্মান পাচ্ছে, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। ৪১ ভাগ থেকে দারিদ্র্যের হার আমরা ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। অনেক উন্নত দেশেও এখন দারিদ্র্যের হার ১৭/১৮ ভাগের মতো রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, যখন দেশের একেকটা অর্জন হয়, মনে হয় নিশ্চয় আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু) বেহেস্ত থেকে দেখছেন। তিনি দেখছেন বাংলাদেশের এখন কেউ আর না খেয়ে থাকে না, কেউ ছেঁড়া কাপড় পরে চলে না। তিনি বলেন, দেশের একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, না খেয়ে থাকবে না। কারণ আমি মনে করি, দেশের একটি মানুষ কষ্ট পেলে বঙ্গবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে।
বার বার দেশসেবার সুযোগ প্রদানের জন্য ভোটারসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখেছে। বার বার নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দিয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই আমরা দেশের এতো উন্নয়ন করতে পেরেছি। তাই আমরা কোনো অহমিকা করবো না, দেশের মানুষ সারাবিশ্বে যেন মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে- সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে শুধু উন্নতিই করছি না, আমরা শত বছরের পরিকল্পনা দিয়েছি। আগামী একশ’ বছরের জন্য ডেল্টা প্লান দিয়েছি। আমরা ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি পালন করবো। আমরা কেউ বেঁচে থাকবো না। তবুও আগামী প্রজন্মের জন্য ও দেশের উন্নয়নে আমরা একশ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলবোই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপি ও দক্ষিণের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত। সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পরিচয় আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। পঁচাত্তরের পর, ২০০১ সালের পর এবং ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে অনেকে নীরব ছিলেন; কিন্তু আমি শেখ হাসিনার পাশে ছিলাম। আওয়ামী লীগের কর্মীরা পাশে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে আমি তখন ছাত্র ইউনিয়ন করতাম। ছয় দফা দেওয়ার পর একদিন বঙ্গবন্ধু পাবনায় আমাদের বাসায় আসলেন। বাবা শহীদ এম মনসুর আলীকে বঙ্গবন্ধু বললেন, নাসিম কোথায়? আমি কাছে যেতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, মুনসুর আলীর সন্তান হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করিস। আজ থেকে ছাত্রলীগ করবি। তখন থেকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দল করতে হলে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। এটা যেন সবার মনে থাকে। নেতাকর্ম?ীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, মনে রাখবেন একজন রাজনীতিকের জীবনে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই। সাহস ও সততা নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি। আমাদের নেত্রীর সততাকে সম্বল করে আমরা আগামী দিনেও এগিয়ে যাব। আমরা আজ শপথ নেব নির্বাচনের আগে দলের পক্ষ থেকে যে ইশতেহার দিয়েছিল তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করব। আমরা ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করব।