পরিস্হিতি২৪ডটকম : ২৫শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী জাতীর সোনার ছেলেদের হত্যা করে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তেমনি সমৃদ্ধিময় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে জাতীয় যাদুঘর অন্যতম। সৈয়দ সাইফুর রহমান দেশের রাজনীতির অবস্থা আগাম অনুধাবন করে তাহার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে গ্রামের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি ছাতিওয়াল মসজিদের পাশে বাসায় বসবাস করেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনের পর তিনি বুঝতে পারলেন যে আমরা পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতালাভ করতে যাচ্ছি। তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে যাদুঘরের সংগ্রহসালার প্রয়োজনীয়তা বুঝালেন। আর জাতীর প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁচাতে সাহায্য চাইলেন। তিনি দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে যাদুঘরকে রক্ষা করে স্বাধীন জাতীর নবপ্রজন্মকে বাঙালীর সমৃদ্ধিময় অতীতের ইতিহাস জানার সুযোগ সৃষ্টি করতে বাসার বদলে যাদুঘরে থাকা আরম্ভ করেন। পাকবাহিনীরা ২৫শে মার্চ কালো রাত্রিতে যাদুঘরে প্রবেশ করে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে তিনি পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। তিনি যুদ্ধ শুরু হলে জাতীর বৃহত্তর সার্থে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাদুঘরের অমূল্য সম্পদ গুলো রক্ষায় পিছপা হলেন না। যাদুঘর রক্ষায় বিভিন্ন কৌশলে দিনের বেলায় কাজ করলেও রাতের বেলায় তিনি ছদ্মবেশে যাদুঘর পাহারা দিতেন। আর রাতে যতটুকু সম্ভব যাদুঘরের গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা মেঝে ও বাহিরে পুতে পেলেন যেন পাকবাহিনী চুরি ও অগ্নি সংযোগ করলেও অমূল্য সম্পদ গুলো নষ্ট না হয়। এই সংগ্রহ শালাগুলোকে অত রাখতে জীবনের মায়াত্যাগ করে প্রায় চার মাস পর্যন্ত বিরামহীন পরিশ্রম করে এক পর্যায়ে অনুধাবন করলেন যে পাকবাহিনী থেকে তিনি রক্ষা পাবে না। এমন সময় স্থানীয় কোন আওয়ামীলীগ নেতার সাহায্য না পেয়ে তিনি যাদুঘরের সমস্ত চাবি একটি পাত্রে নিয়ে যাদুঘর ইশান কোনে পুতে মাটিছাপা দিয়ে তার উপর একটি গোলাপ ফুলের গাছ রোপন করে আর পরিচালকের টেবিলের ড্রয়ারে একখানা পত্র লিখে রাতের অন্ধকারে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্র করেন। ১৫ দিনের অধিক সময় পায়ে হেটে নিজ জন্মভূমি (চট্টগ্রাম) বাঁশখালীর ডোংরা গ্রামে আসে। প্রতিমধ্যে তিনি মুক্তিবাহিনীর সংবাদ বাহাকের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা উত্তর তিনি চাকুরিতে যোগ দিয়ে সমৃদ্ধিময় সংগ্রহ সমূহ অতভাবে জাতীর সামনে উপস্থাপন করেন। সৈয়দ সইফুর রহমান অতীত জাতীর সমৃদ্ধিময় পূরাকৃর্তি আবার জাতীর সামনে অতভাবে তুলে ধরলেও জাতি তাঁর অবদানের জন্য এখনও স্বীকৃতি ও পুরস্কারে ভূষিত করতে পারেনি। তাহার তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে স্বপ্নচারী লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক এস.এম.ওসমান সর্বকনিষ্ট। তিনিও বাবার মতো জাতীয় কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কর্ণফুলী টানেল, মেরিনড্রাইভ সড়ক, গভীর সমুদ্র বন্দর, ব্লু ইকুনুমিসহ সমৃদ্ধির অর্থনীতির উপর প্রবন্ধ লিখে বুদ্ধমহলের কাছে প্রসংশিত হয়েছেন। সৈয়দ সাইফুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার অপরধে জিয়ার কুকৃর্তির শিকার হলে তার সামনে দুইটি পদ খোলা বলে জানানো হয়। একটি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া। না হয় তাকে হত্যা করা হবে। জাতীয় সংস্কৃতির বাতিঘরটি পূর্ণ জন্মদাতা চাকুরী ছেড়ে শেষ সময়ে পৈত্রিক জমিদারী দেখাশুণা ও সমাজসেবী হিসেবে জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করে ১৬ সেপ্টেম্বর নিজ বাসভবনে সকলকে কাঁদায়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
লেখক: শিক্ষাবিদ।