পরিস্হিতি২৪ডটকম : ঘর বাঁধা হলো না মেডিকেল শিক্ষার্থী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার। সুখের নীড় গড়ার স্বপ্নে বিভোর পিয়াসা স্বামীর ঘরে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন। একই পরিণতি বরণ করতে হলো তার বোন ও খালাত ভাইয়ের স্ত্রীকে। প্রাইভেট কারের ড্রাইভিং সিটে মদ্যপ অবস্থায় পিয়াসার স্বামী ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি এই দুর্ঘটনা ঘটান। আর তাতে প্রাণ হারান তিনজন।
নিহতরা হলেন শহরের লোন অফিস পাড়ার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা (২৫), তার বোন শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের বাসিন্দা সুমন ইসলামের স্ত্রী তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা (৩০), একই এলাকার বাসিন্দা পিয়াশার খালাতো ভাই মনজুর হোসেনের স্ত্রী তিথী (৩৫)। আহতরা হলেন নিহত তিথীর শিশু সন্তান মাশিয়াব (৪), নিহত পিয়াশার স্বামী প্রাইভেটকার চালক শফিকুল ইসলাম জ্যোতি ও নিকটাত্মীয় কালু (৩০)। গুরুতর আহত মাশিয়াব ও কালুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ তাসমীম আলম বলেন, ’শুক্রবার রাত একটার দিকে পুলিশ কন্ট্র্রোল রুম ও জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর থেকে আমরা জানতে পারি, শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে একটি প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। পুলিশের রাত্রিকালীন দুটি টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর সেখানে আমিও যাই। ওই প্রাইভেটকারে তিনজন পুরুষ, তিনজন নারী ও একজন শিশু ছিল। ঘটনাস্থলে শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের প্রাক্তন কাস্টমস সুপার জিএম কামালের বাড়ির প্রাচীর ও বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে আঘাত করে প্রাইভেটকারটি। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসএবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় আহত প্রাইভেটকার চালক শফিকুল ইসলাম জ্যোতিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তার ডোপ টেস্ট করা হবে। জ্যোতিকে কোতোয়ালী থানায় সোপর্দ করেছে। তাকে আদালতে চালান দেওয়া হবে।’
নিহত তিথির স্বামী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার রাতে শফিকুল ইসলাম জ্যোতি প্রাইভেটকার নিয়ে আমাদের বাসায় যান। শহরে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বলে গাড়িতে আমার স্ত্রী (জ্যোতি) ও সন্তানকে (মানিজুর) গাড়িতে তুলে নেন। ওই গাড়িতে জ্যোতির খালাতো দুই বোনও ছিল। তারা শহরের পালবাড়ি, আরবপুর এলাকায় আলোকসজ্জা দেখতে ও বিয়ে দাওতায় দিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
স্থানীয়রা জানান, শহরের লোন অফিস পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে আদদ্বীন সখিনা মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার ২৭ জুলাই ২০১৮ বিয়ে হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে পিয়াসাকে তাদের তুলে নেওয়ার কথা। সেজন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়। পিয়াসা রাতে ফোন করে জ্যোতিকে জানান, তারা আলোকসজ্জা দেখবেন এবং শহর ঘুরবেন। এ কারণে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেটকারটি নিয়ে বের হন।
গাড়িতে পিয়াসার বোন তানজিলা, খালাত ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন। তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে শহরে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন।