পরিস্হিতি২৪ডটকম : সমাজকর্ম, দেশ উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার, এতিম অনাথ শিশুদের কল্যাণ সহ ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় মানুষকে সেবার নিয়তে নিজের জীবনকে পরের জীবনের জন্য উদ্ভাসিত করে গেছেন স্মরণীয় ও বরণীয় মনীষী আহমদ সিরাজ চৌধুরী। আহমদ সিরাজ চৌধুরী দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আনোয়ারা উপজেলার পীরখাইন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- সৈয়দ আহমদ চৌধুরী, মাতা- সহরা খাতুন। তৎকালীন সময়ে বৃহত্তর আনোয়ারা ও দণি চট্টগ্রামে সৈয়দ আহমদ চৌধুরী ছিলেন একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর নাম-ডাক এখনো মুখে মুখে রয়েছে। মানবতার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গকৃত। জনাব আহমদ সিরাজ চৌধুরী ১৯৩০ সালে আনোয়ারা থানার পীর খাইন গ্রামে নবাব চৌধুরী বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন। শিশুকাল থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন সিরাজ আহমদ চৌধুরী। শিশুকালেই সমাজ কর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ লনীয়। যুব বয়সে এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য, পাড়া প্রতিবেশির ভাল কাজের জন্য তিনি এগিয়ে আসতেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি ব্যাংকার হিসেবে সোনালী ব্যাংকে চাকুরীতে যোগদান করেন। ব্যাংক থেকে অবসর জীবনের পড়েও তিনি আসিফ স্টীল মিলস লিঃ এর অফিসার হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্বপালন করেন। মানবতাবাদী, সমাজকর্মী, শিক্ষানুরাগী আহমদ সিরাজ চৌধুরী বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত জমিদার বাড়ী শেখ বদলমুন্সির নাতনি ও শেখ হাফিজুর রহমান চৌধুরীর কন্যা শেখ দিলোয়ারা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আহমদ সিরাজ চৌধুরী ও শেখ দিলোয়ারা চৌধুরীর পারিবারিক জীবনে তাঁদের প্রথম সন্তান সফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রাশেদা খানম পারভিন। সফিকুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এ চাকুরীরত। দ্বিতীয় ছেলে তৌহিদুল আলম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রিকু আকতার। সে ট্রানস্কম ইন্টারন্যাশনাল লিঃ এ চাকুরীরত। তৃতীয় ছেলে ওয়াহিদুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফারিহা পারভীন খানম চৌধুরী। সে স্ট্যান্ডার ব্যাংক লিঃ এ চাকুরীরত। মেয়েদের মধ্যে শিরিন আকতার চৌধুরী স্বামী এস এম ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। সে একজন ব্যবসায়ী। মেহেরুন্নেসা চৌধুরী স্বামী সৈয়দ নুর। সে একজন ব্যবসায়ী। নুরুন্নেছা চৌধুরী স্বামী কামাল মোস্তফা চৌধুরী। সে ব্যবসায়ী। আহমদ সিরাজ চৌধুরী একজন সফল মানুষ। তাঁর পরিবারের সকল সদস্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। দেশ এবং মানুষের জন্য নিবেদিতভাবে সমাজ উন্নয়নে জড়িত। আহমদ সিরাজ চৌধুরীর স্ত্রী শেখ দিলোয়ারা বেগম চৌধুরী পীরখাইন পোষ্ট অফিসের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও একজন সমাজকর্মী ও শিানুরাগী। আহমদ সিরাজ চৌধুরী ২০০৪ সালে ২৬ আগস্ট নিজ বাড়িতে পরিণত বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের পর হাজার হাজার মানুষের জানাযার নামাযে অংশগ্রহণে দোয়া শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মানুষ ও মানবতার জন্য তাঁর অবদান স্মরণীয় ও বরণীয়। তাঁর মৃত্যুপরবর্তী দোয়া ও শোক সভা পারিবারিক ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় সম্মানিত আলোচকগণ আহমদ সিরাজ চৌধুরী সম্পর্কে বলেছেন, তিনি মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সৎ এবং ভাল মানুষ ছিলেন। মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, ছিলেন পরোপকারী। টাকা পয়সা করতে চাইলে তিনি অনেক বড় ধনী মানুষ হতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে পথে যায়নি। তিনি মানুষ হিসেবে বড় হতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর ফরম আত্মীয় ও বড় মামা অধ্যাপক সোলাইমান আলম খান এর আদর্শে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন। সোলাইমান আলম খান ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ। খেলাফত রব্বানী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, ঐতিহাসিক তমুদ্দুনমজলিস এর সাধারণ সম্পাদক এবং ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র। সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক। আপন মামা ভাসাসৈনিক সোলাইমান আলম খানের সাথে আহমদ সিরাজ চৌধুরী তরুণ বয়সে ভাষা আন্দোলনের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হন। মামার সাথে বিভিন্ন সভা সেমিনারে যোগদান করে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা আন্দোলনে শরিক হন। আহমদ সিরাজ চৌধুরী পিত্রধিক থেকে সম্ভ্রান্ত ও নানার দিক থেকেও সম্ভ্রান্ত পরিবার ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে বড় হয়েছেন। আহমদ সিরাজ চৌধুরী চাকুরী জীবনে বিভিন্ন এলাকায় কর্ম পালন করেছেন। যেখানে যেখানে তিনি ছিলেন সেখানেই আহমদ সিরাজ চৌধুরী নিবেদিত সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী শেখ দিলোয়ারা বেগম চৌধুরীও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে সমাজকর্মে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। প্রাপ্তিক একটি গ্রামীন জনপদে শিক্ষা বিস্তারে এই মহিয়সী রমনীর অবদান এলাকাবাসী আজও স্মরণ করেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা পিতা-মাতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে সমাজের জন্য কাজ করে চলেছেন। মহান আল্লাহ প্রয়াত স্বরণীয় ও বরণীয় মনীষী আহমদ সিরাজ চৌধুরীকে জান্নাতবাসী করুক। আমীন। আহমদ সিরাজ চৌধুরী ২০১৯ সালের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীর এইদিনে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। সমাজে গুণীমানুষকে সম্মান করলে গুণীর জন্ম হয়। আসুন আমরা সকলে গুণীমানুষকে সম্মান ও মর্যাদার মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত ও আদর্শবান সমাজ হিসেবে গড়ে তুলি। আমীন।