পরিস্হিতি২৪ডটকম : আর মাত্র দুই দিন পরেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হবে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারারুদ্ধ হন তিনি। এরপর থেকে বেগম জিয়ার জামিনের জন্য অব্যাহত আইনি লড়াই চালিয়ে আসছেন তার আইনজীবীরা।
সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে হতাশ হয়ে পড়েন দলের নেতা-কর্মী ও তার আইনজীবীগণ। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করে যেতে চাচ্ছে বিএনপি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এখন নতুন করে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে রিভিউ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন আইনজীবীরা। রিভিউ শুনানিতে ড. কামাল হোসেনসহ সিনিয়র আইনজীবীরা অংশ নিতে পারেন।
খালেদা জিয়ার অন্যতম কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ইত্তেফাককে জানান, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে জামিন আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে শিগিগরই রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করবেন। খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে। ইতিমধ্যে এর প্রস্তুতি শেষ করেছি। পাশাপাশি নিম্ন আদালতেও যেতে পারি। দুটি পথই আমাদের জন্য খোলা আছে। তবে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে রিভিউয়ে জামিন পাবেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনে যা আছে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া তো অসুস্থ। ফলে তার দণ্ডাদেশ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুযোগ দেওয়া হোক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) অনুযায়ী তার জীবন রক্ষার্থে এবং যেহেতু তিনি বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় নেত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতির স্ত্রী-এসব বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দিতে পারে আদালত।
যদিও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন খারিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ করে জামিন পেয়েছে এমন নজির কম। এই অবস্থা আইনগত লড়াইয়ের পাশাপাশি তার মুক্তির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের কথাও ভাবছেন তার পরিবার। চিকিৎসা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ এনে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার মুক্তির আবেদন করার কথা ভাবছেন তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তির বিষয়ে আবেদনের কথা বলা হলেও দলের অবস্থান ভিন্ন। দলের সিনিয়র নেতারা মনে করেন স্বয়ং খালেদা জিয়ার অনুমোদন ছাড়া কোনো উদ্যোগের সঙ্গেই দল সম্পৃক্ত থাকবে না।ৎ
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানান, তার যে অবস্থা তাতে এখনি বের করতে না পারলে জীবনহানীর আশঙ্কা আছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের পরিবারের সদস্যরা বিশেষ আবেদনের কথা ভাবছেন। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করছেন। তবে কবে নাগাদ করা হবে, তা ঠিক করা হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ আবেদনের বিষয়টি নিয়ে দলে ও পরিবারের মধ্যে আলোচনা চলছে। আমাদের মধ্যেও আলোচনা চলছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও মুক্তি নিয়ে তার পরিবারের বিশেষ আবেদনের বিষয়টি দলীয় কোনো বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ তার পরিবার ও বেগম জিয়ার ব্যাপার। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তার চিকিৎসা, তার শারীরিক অবস্থার যে অবনতি, তাতে বিশেষ আবেদনের বিষয়টি একান্তই পারিবারিক। এটা তো রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে না, দলেরও সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তার পরিবার যেভাবে ভালো মনে করবে, সেভাবে করতেই পারে।
সুত্র : দৈনিক ইত্তেফাক