বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

করোনা যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞলিঃ করুণা আচার্য

  প্রকাশ : ২০২০-০৭-২২ ১৮:১৫:৪৭  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : সর্বগ্রাসী করোনা ভাইরাস এর সাথে যুদ্ধ করতে এসে যুদ্ধের সৈনিকরা যেই হারে মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছেন তাতে দেশের সেবার মান ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। বুকের শক্তি আর মনের বল হারাতে বসেছে দেশের অসহায় জনগণ। ডাল তলোয়ার মওজুদ থাকলে যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে মানুষ সক্ষম হয়।তেমনি করোনার এই চিকিৎসা সেবার মূল অস্ত্র যাঁরা অসময়ে হারিয়ে যাচ্ছেন তাদের অভাবনীয় ক্ষতির পূরণ কিভাবে হবে তাই আজ জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে। কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে যদি ডাল তলোয়ার সংকুলান হয় তাহলে যোদ্ধারা চোখে শস্যে ফুল দেখেন।

বর্তমান কোভিড ১৯ করোনা যুদ্ধে দেশের বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে যারা সন্মুখ যুদ্ধে আছেন শুধু তারাই জানেন কি হচ্ছে আর কি হতে চলেছে। যদি কেউ শাখ দিয়ে মাছ ঢাকতে চান তা হলে তা বেরিয়ে আসতে আর বেশি সময় লাগবে না। এই মহা সংকটের হাত থেকে বাঁচতে হলে অতি দাম্ভিকতা বর্জন করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত উভয়কে প্রধানত ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তির উপায় বের করতে হবে। এখানে কখনোই সরকারের একার পক্ষে দেশের মানুষ বাঁচানো সম্ভব নয়। সুতরাং দেশের মানুষ যাহারা এখনো দলে দলে বিভক্ত হয়ে আছেন। আর ভোট আসলেই জনদরদী সাজেন তারা এখন সরকারের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করলে চরম মাশুল গুনতে হবে আশা করি।

কারণ মৃত্যু এসে সবার দুয়ারে এখন সমান ভাবে কড়া নাড়াচ্ছে। মৃত্যু ভয়ে সবাই এখন উর্দ্ধশ্বাসে দৌঁড়াচ্ছে।
বর্তমানে কোভিড করোনা কালীন সময়ে যেই হারে সেবাদানকারীরা আত্নমানবতার পরিচয় রাখতে গিয়ে একের পর এক মৃত্যু বরণ করে মানব সেবায় অবদান রেখে যাচ্ছেন এর প্রতিদান জাতি কিভাবে শোধ করবে ? আর সেবাদানকারীদের মূল ডাল যদি এইভাবে ভেঙে পড়তে থাকে তাহলে আমাদের দেশের চিকিৎসা সেবার পরিস্থিতিরই বা কোন্ হাল হবে তা নিয়ে মানুষ বড়ই হতাশায় নিমজ্জিত। মুলত যাঁরা বর্তমান করোনা যুদ্ধের প্রধান সৈনিক হিসাবে স্বাস্থ্য সেবা ও দেশের সমস্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাচ্ছেন তদ্মধ্যে সরকার প্রধানসহ ডাক্তার,,নার্স, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী সেচ্চাসেবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারী,মন্ত্রী, এম পি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পুলিশ, বিডিয়ার, আর্মি, আনসার, সাংবাদিক, সংবাদকর্মী, এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এই মহৎপ্রাণ প্রতিনিধিরা দায়িত্ব-কর্তব্য ও মানবতার সেবক হয়ে ২৪ ঘন্টা নিরলস ভাবে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রাণ উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। তাদের কাছে জাতি চির ঋণীও কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবেন।তাদের মহত্বের প্রতি জাতিকে অসংখ্য অসংখ্য শ্রদ্ধা ওকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেই হবে। এই যোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য।

দেশের অপ্রতুল স্বাস্থ্যব্যবস্থার মাঝেও যা আছে তা দিয়েই আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধারা অন্তত অনেক মানুষ বাঁচাতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু এখন এমন পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশের প্রকৃত সেবাদানকারীরাও এখন আর নিজেকে নিজে রক্ষা করতে পারছেন না। ওরাও আজ একের পর এক করোনার আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।প্রাণে বাঁচার তাগিদে যাদের ভরসায় করোনা আক্রান্ত মানুষ হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন তাঁরাই যদি এমন করুণ ভাবে নিঃশেষ হয়ে যান, তাহলে দেশের মানুষ বাঁচার আশা কোথায় খুঁজে পাবেন? করোনাক্রান্ত মানুষের বাঁচার আকুতি ও আর্তচিৎকারে পৃথিবী আজ ভারী হয়ে উঠেছে। সবার মাঝে যখন এই মৃত্যু ভয় প্রকোট হয়ে উঠেছে তখনও মানুষ শুধু মানবতার দিকেই একমাত্র ভরসা করে আছেন।
কারণ একের বিপদে -আপদে অন্যকে সাধ্যমত সাহায্য সহায়তা দিয়ে মানুষে মানুষে মানবতার পরিচয় রেখে

আর এই সময় কিছু কুখ্যাত অপরাধী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার তালে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। এরাই জাতির কলঙ্ক। একেই বলে –(একে দোষ করে সবে কষ্ট পায় বালকে আগুন দিলে ঘর পুড়ে যায়।)। মানুষের দুর্সময়ে যারা অতি লোভে আখের গুছানোর জন্য প্রতারণা করে যাচ্ছে তাদের ঠাঁই নরকেও হবে বলে মনে হয় না। হাতির পাঁচ পা বলে একটা কথা আছে এরা ঐ প্রকৃতির। এদেকে নরকের কীট বললেও ভুল হবে। এই নরকের কীটেরাই দেশের মানুষকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দেশের প্রকৃত মুখোশধারীদের মানুষ এখন ভালোভাবে চিনে নিচ্ছে। আমাদের দেশের বিখ্যাত শিল্পী কুদ্দুছ বয়াতির একটা গান অবশ্যই সবাই শুনেছেন, এই দিন, দিন নয়, আরো দিন আছে এই দিনকে নিয়ে যাবে সেই দিনের কাছে। আরো একটা প্রবাদ আছে — মাছে বুঝে না জাল, মানুষে বুঝে না কাল। এই মহা সংকটের দিনে যারা কুকর্ম করে রেখে যাবে তারা তার ফল টু ডে টুমরো অবশ্যই ভোগ করবে।
আর এই করোনা মহামারিকে নিয়ে যারা মৃৃত্যুর সাথে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরাই ইতিহাসের পাতায় প্রকৃত করোনা যোদ্ধা নামে অভিহিত হবেন। আর যাঁরা এই যুদ্ধে মারা যাচ্ছেন তাঁরা শহীদের মর্যাদায় বীরোচিতো হবেন।
আজ বিশ্বের সমস্ত মানুষ শুধু মাত্র “করোনা ভাইরাস” নামক এই মহামারী নিয়ে আতংকিত ও তটস্থ হয়ে পড়েছেন। অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাসকে রোধ করার কল্পে বহু জ্ঞানী- বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি-নিযুক্তি প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো মুক্ত বা সরল সমাধান এখনো মুক্তির আলো জ্বালাতে সক্ষম হচ্ছেন না। ইতিমধ্যে যদিও অনেকেই অনেক আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবে এখনো আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। প্রতিদিনের মৃত্যু মিছিল তো কমছেই না বরং বেড়েই চলেছে।হচ্ছে তো! হবে তো! এই আশাতেই লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির পরেও মানুষ এখনো মনোবল টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ধনী দেশ গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের বাংলাদেশেও বেড়ে চলেছে কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাস এর মহাতান্ডব। এর প্রতিরোধ বা প্রতিকারের বিশদ কোন সু বন্দোবস্ত বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় না থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যহত রেখেছন। সরকারের বিচক্ষণতায়এখন মূল প্রসংশার দাবীদার। তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে যতটুকু প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন সেই তুলনায় অপ্রতুল চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্যখাত ততটাই দুর্বল রয়ে গেছেন।যার বাস্তবতা এখনই প্রমাণিত হচ্ছে।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে দেশের ধনাট্য ব্যক্তিদের কিছু ভুলের খেসারত এখন দরিদ্র জনগনকেও গুনতে হচ্ছে।
আমাদের দেশে বর্তমানে ভুঁড়ি ভুঁড়ি ধনাট্য ব্যক্তি আছেন। সম্ভোবত রাষ্ট্রীীয় কোষাগার থেকেও বেশী ধন সম্পত্তি আছেন এমনও ধনাট্য ব্যক্তিও এই বাংলাদেশেই আছেন।যারা ধনী ,মহাধনী, মহারতি,মহাপরাক্রমশালী নামে পরিচিত। তারা অনেকেই বিদেশে অর্থ পাচারকারী ও সম্পাদের মওজুদ দাতা। কিন্তু যারা দেশের জন্য আগে কখনো যা করেননি বা ভাবেননি তারা এখন নিশ্চয় অনুসূচনায় ভুগছেন। ঐ মহা ধনবানদের সেই ধনসম্পদও এখন তাদের আর কোন কাজে আসছে না। কারণ কথায় আছে “পুথিগত বিদ্যা, পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা, নহে ধন হলে প্রয়োজন”। দেশের আজকের পরিস্থিতিতে ঐ ধনীদের অবস্থান তাই প্রমাণ করে।
বাংলাদেশের ধনী -গরীব উভয়কে এমনিতেই প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিতে হামাগুড়ি দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হতো। এই মহাসংকটের দিনে সেই বিদেশের চিকিৎসার পথও আপাততঃ কুক্ষিগত হয়ে যাওয়ায় অনেক ধনবান ব্যক্তিও দেশের মাটিতেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। নিজেদের মা, মাটি,ও দেশকে পিছনে ফেলে যারা এতোদিন ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন, তাদের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় এই ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার। এই দেশের মানুষকে আগামীতে এমন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যা দেশের চিকিৎসা খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের দিকে চেয়ে না থেকে এবং অতি সুখের আশায় বিদেশে অর্থের পাহাড় গড়ে না তুলে, দেশের উন্নত শিক্ষাও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বিভিন্ন তথ্যমতে দেশের অসংখ্য ধনাট্য ব্যক্তিরা দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্য দেশে গিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন,। আর তারা ঐ অট্টালিকা দিয়ে সুখ ও ভোগ বিলাসে মত্ত থেকেছেন। অনেকে দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার কথায় কর্ণপাত না করে বিদেশে গিয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয়ে শিক্ষিত হচ্ছেন এবং চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।আর যেই ধনী ব্যক্তিরা দেশে আছেন তারাও অতি সুখের আশায় এবং সাত পুরুষকে ধণীও সম্পদের মালিক বানাতে ধন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। তারা এটাই ভেবেছেন যে, এই সম্পদের পাহাড় তাদেরকে মৃত্যু নামক মহাকাল থেকে রক্ষা করবেন। অতি দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, তারাও আজ অনেকেই এই করোনা ভাইরাস এর কাছে হেরে যাচ্ছেন। এখানেও একটা কথা আছে, মানুষ মানুষকে বলতে শুনেছি, (সময় থাকতে হাটো আর সম্পদ থাকতে বাঁটো) এই কাজটা বাংলাদেশের ধনীরা যদি করার চেষ্টা করতেন তা হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতো। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে সকল
সম্ভাবনার দেশ।
এই মহাসংকট মহামারীর দিনে বিদেশের চিকিৎসাও আজ আর কারো প্রাণ রক্ষার আধার হচ্ছেনা। সারা বিশ্বের মানুষও এখন এই মহামারীর মৃত্যু গর্তে ডুবে যাচ্ছে। যার কোন প্রতিকার – প্রতিরোধ আজো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই মহামারী এখন পৃথিবীর মানুষের দুয়ারে মহাকালের মহাশিক্ষারূপে অবস্থান করে আছে। প্রকৃত অর্থে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কবে- কোথায়- কখন হবে তাও কেউ জানে না।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ভিন্নভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যেই নির্দেশনাগুলো প্রতি নিয়ত জন স্বার্থে প্রচার করা হচ্ছে তা মেনে চলে মানুষ অনেকটা সুরক্ষা পাচ্ছেন বলেও জানা যাচ্ছে। নিজের সুরক্ষা নিজেই বজায় রাখুন আর প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে মানবতার পরিচয় দিন।
আজ এই মহা সংকটের দিনে একমাত্র মহান সৃষ্টি কর্তার নিকট প্রার্থনা জানানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
হে ঈশ্বর! মহামারি করোনা ভাইরাস এর আক্রমণ থামিয়ে বিশ্ব মানব জাতির শান্তি ফিরিয়ে দাও। মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করো প্রভু রক্ষা করো।

লেখক ও কবি, সভাপতি কলম সাহিত্য সংসদ লন্ডন চট্টগ্রাম জেলা।



ফেইসবুকে আমরা