পরিস্হিতি২৪ডটকম : পৃথিবীব্যাপী এখন এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। দিনদিন এই ভাইরাসের প্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এই ভাইরাসের কারণে শঙ্কিত পুরো মানবজাতি, পুরো বিশ্ব। এই পর্যন্ত বিশ্বের ২১২টি দেশ অঞ্চল এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে পৃথিবীর শীর্ষ ২০ দেশের একটি বাংলাদেশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে সংক্রমণের হার দিন দিন আরো বাড়তে পারে। এ ভাইরাস শুধু মানুষের জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না, একই সঙ্গে কেড়ে নিচ্ছে জীবিকাও। ধ্বংস করে দিচ্ছে একেকটি দেশ ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই এ রোগের প্রধান প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবুও আমাদের জীবন বাঁচাতে হবে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে নিয়ম মেনেই। কিন্তু তাতেও রক্ষা হচ্ছে না মানুষের স্বাভাবিক জীবনকর্ম। দিনদিন কাজ হারাচ্ছে মানুষ। বেকার ও অসহায়ত্বের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে কার্যত যখন থমকে গেছে জনজীবন। ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অসহায় মানুষের পাশে সর্বপ্রথম দাঁড়ালেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র একাই।
নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড তিনি ঘুরে ঘুরে নিজ হাতে জীবানুনাশক পানি ছিটিয়েছেন। কখনো ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন সাধারণত মানুষের মাঝে। এ যেন জনসেবার এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন কঠিন করোনা পরিস্থিতিতে। সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও অনেক জনপ্রতিনিধিকে সাধারণ মানুষের কাতারে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি মানুষের কল্যাণে তাঁদের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ। ঠিক সেই সময়ে তিনি ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ছুটেছেন নগরীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে। দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর করোনা আতঙ্কে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের মানুষও যখন ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে, তখন অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে সাধারণ মানুষের জন্য সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্ল্যাভস, এবং রাস্তায় জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো থেকে শুরু করে মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সাধারণ গরীব মানুষের তালিকা করে ঘরে ঘরে নিজ উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রবাসীদের ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ ও মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিটি মেয়র দিনরাত কাজ করছেন। দিনরাত মানুষের সেবা করতে গিয়ে কখনো তাঁকে এতটুকু বিচলিত হতে দেখিনি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশ সবসময় শিরোধার্য। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর নিরাপত্তায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি, রাখবো। করোনা পরিস্থিতির কারণে সহায়তা চাইতে না পারা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ছয় হাজারেরও বেশি পরিবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে এনজিও’র পরিসংখ্যানে ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ হতদরিদ্রের আওতায় পড়ে। যা আমাদের হিসাবে প্রায় ২০ লাখ। সরকারি, চসিক পরিবার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরের চার লাখ পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছি। যারা বাকি রয়েছে, তারাও ত্রাণ বঞ্চিত হবেন না। দুর্যোগ কাটিয়ে না ওটা পর্যন্ত এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও নিজস্ব তহবিল থেকে দুই মাসে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ বিতরণ করেছেন, ২৬ হাজার সাধারণ জনগণ, প্রায় সাত হাজার পরিবহন শ্রমিক, ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের ৬৪৫০ জন নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পত্রিকার হকার, বিভিন্ন মার্কেটের শ্রমিক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করেছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। ইউএনডিপি ইউকে-এইড’র সহায়তায় ১৫শ’ টাকা করে বিতরণ করেছেন ২০ হাজার মানুষের মাঝে। তার এ সেবা থেকে বাদ যায়নি পশুপাখিও। কুকুরদের জন্যও তিনি খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণে তিনি সাহায্য সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর নন্দনকানন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) মন্দিরে ২শ’ ভক্তদের জন্য, বাকলিয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে ৩শ’ নির্মাণ শ্রমিক ও মনসুরাবাদ কর্ণফুলী কমিউনিটি সেন্টারে ৬শ’ পরিবহন শ্রমিকের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী তুলে দেন তিনি। তাছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার ১৫শ’ শ্রমিক-কর্মজীবীর মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া চসিক মেয়রের ভালবাসার উপহার প্রদান কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। আটজনের একটি টিম প্রতিদিন সাহায্য প্রত্যাশীদের ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। মেয়রের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত মোবাইলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত যারা লজ্জায় সবার সামনে সাহায্য চাইতে পারছেন না, তারা মেসেজ পাঠালেই খাদ্যসামগ্রী ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থেকে এসব ম্যাসেজ পর্যবেণ করছেন মেয়র। চট্টগ্রামবাসীর জন্য এ মুহূর্তে ত্রাণের চেয়ে বেশি প্রয়োজন চিকিৎসা। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ভাই দিনরাত পরিশ্রম করে করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করছেন। তিনি নিজেই উপস্থিত হয়ে চিকিৎসার মান যাচাই করছেন। দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিরলস কাজ করছেন তিনি। দিনরাত ছুটে চলেছেন নগরীর এলাকা থেকে এলাকায়, হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করছেন নতুন আইসোলেশন সেন্টার। নিজে করোনায় সংক্রমিত হবেন কিনা তা চিন্তা না করেই হরহামেশাই বেরিয়ে পড়ছেন নগরীর অলিগলিতে। শুধু তাই নয়, করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছেন। বিতরণ করছেন সুরাসামগ্রী, খাদ্য ও নগদ অর্থ। মাইক হাতে নিয়ে সচেতনতামূলক মাইকিং করছেন। হাসপাতাল-মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। সেবার মান ও পরিসর বাড়াতে নগরীর ১২টি পয়েন্টে করোনা টেস্টিং বুথ চালু করা হয়েছে। ব্র্যাক বাংলাদেশের সহায়তায় বুথগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও পাঁচটি হাসপাতালে করোনা বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের অ্যাক্সেস রোডের সিটি কনভেনশন হলে ২৫০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার করেছেন এবং ঐ আইসোলেশন সেন্টারের যাবতীয় সরঞ্জাম নিজেই পরীা করে দেখেন। এমন কি করোনা রোগীদের জন্য তৈরি বেডে শুয়েও দেখেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সহায়তায় বাস্তবতার পরিপ্রেেিত নগরীতে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ৮০ শয্যা, ভাটিয়ারীর বিএসবিএ হাসপাতালকে ১০০ শয্যা, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, আগ্রাবাদস্থ সিটি হলে ৩০০ শয্যা ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা করোনা আইসোলেশন সেন্টার বানানো হচ্ছে। তাছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আগ্রাবাদ সিটি হল কনভেনশন সেন্টার ৩০০ শয্যার আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত করা হবে। করোনাকালীন সময়ে নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর এই উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে নগরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরো কিছু কমিউনিটি সেন্টারকে প্রয়োজনে আইসোলেশনের আওতায় আনা হবে। চট্টগ্রামের কোভিড আক্রান্ত রোগীরা যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তার সবটুকু ব্যবস্থা তিনি দেখভাল করছেন। মানবসেবা নিজেকে ব্রত রেখে যিনি দিনরাত নগরীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি আমাদের নগরপিতা, আমাদের অভিভাবক আ জ ম নাছির উদ্দিন। মূলত তিনি আ জ ম নাছির উদ্দিন নামে পরিচিত হলেও পূর্ণনাম আবু জাহেদ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। নাসির উদ্দিনের জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা সৈয়দ মঈনুদ্দিন হোসাইন ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী এবং মা ফাতেমা জোহরা বেগম। তিনি ১৯৭৩ সালে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস করেন। তিনি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। বিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দেন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে। আশির দশকের শুরুতে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৭ সালে, তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং একই সাথে নগর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৯৮০ এবং ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। আবু জাফর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পর পর দুইবার নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। নভেম্বর ২০১৩ সালে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে ও লেখালেখিতে যুক্ত থাকায় অনেক কাছ থেকে তাঁকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। হয়েছে তাঁর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ। আমি যতবারই কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর সহযোগিতা চেয়েছি, তিনি এতটুকু কাপর্ণ্য করেননি, অবলীলায় তিনি সমাধান দিয়েছেন বিষয়টির। নিরহঙ্কার এই ব্যক্তিটি সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে নগরের প্রতিটি মানুষের কল্যাণের চিন্তা করেন। করোনাকালীন সংকটময় এই মুহূর্তে মানবসেবায় নগরীর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে তাঁর বিচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি ঋণী তাঁর প্রতি। তাঁর এই অবিরাম সেবার প্রতি, তাঁর মহৎ গুণের প্রতি, নিজের জীবন-মৃত্যুর কথা চিন্তা না করে যে মানুষটি ছুটছেন, মহৎ এই মানুষটি সুস্থ থেকে দীর্ঘজীবন লাভ করুন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করুন অবারিত। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন সুস্থ সুন্দর ও ভালো থাকেন।
লেখক: কলামিস্ট, নাট্যজন, সাংস্কৃতিক কর্মী।