পরিস্হিতি২৪ডটকম : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) ১০ তলা বিশিষ্ট সার্কিট হাউজ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধে চার সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ ১৫ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
নোটিশে সৈকত তীরের বহুতল ভবনের অনুকূলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া ছাড়পত্র বাতিল ও সমুদ্র সৈকতে নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবি জানানো হয়। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে বেলার পক্ষে নোটিশটি পাঠিয়েছেন বেলা ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবির।
নোটিশে অনতিবিলম্বে আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন সাপেক্ষে সমুদ্র সৈকত ও সৈকতের আশেপাশে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সব স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংরক্ষণের জোর দাবি জানানো হয়েছে। গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় নোটিশপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে বেলা।
নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সচিব, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশী, কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের চট্রগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ও কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)।
নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও তার অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। পরিবেশগত দিক থেকেও এ জেলার রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব। পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য, নির্মল জলরাশি এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে এ এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। যেখানে সব ধরনের স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ নিষিদ্ধ।
ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ঝিলংজা মৌজার লাবণী পয়েন্ট সংলগ্ন বিএস ৩০২১ ও ২০০০১ নং দাগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১০ তলা নতুন সার্কিট হাউজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্রও দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ৬ মে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে প্রকাশিত ‘ডেভেলপমেন্টপ্ল্যান ফর কক্সবাজার টাউন এ- সি আপ টু টেকনাফ’ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী জোয়ারভাটার মধ্যবর্তী লাইন হতে পৌরসভার মধ্যে প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে কোনরূপ স্থাপনা নির্মাণ করা যাবেনা।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, বিএস ৩০২১ ও ২০০০১নং দাগ ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ২০১১ সালের ১১ জুন জনস্বার্থমূলক এক মামলার রায়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। সমুদ্র সৈকতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ইতোমধ্যে নির্মিত সব স্থাপনা ভেঙে ফেলারও সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে আদালতের। আইনি নিষেধাজ্ঞা ও আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ঝিলংজা মৌজার ঘোষিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার লাবণী পয়েন্ট সংলগ্ন বিএস ৩০২১ ও ২০০০১ নং দাগে ১০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচায়ক। একই সঙ্গে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ দেশের আইনি বিধান ও মহামান্য আদালতের নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘনও বটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবির বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র ও সমুদ্র সৈকতের সংবেদনশীল পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে ক্ষতিকর ও আইন বহির্ভূত কার্যকলাপ হতে রক্ষা করতে না পারা আইন প্রয়োগকারী ও আদালতের রায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে নোটিশপ্রাপ্তরা ব্যর্থতার পরিচায়ক।
তবে, নোটিশটি এখনও হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদসহ জেলার অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।