বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ঐতিহাসিক প্রাচীন চন্দনাইশের ইতিহাস বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা : প্রাচীন সুহ্ম রাজ্যের আঞ্চলিক রাজধানী ছিলো কাঞ্চনগর-দোহাজারী

  প্রকাশ : ২০২০-০১-০৪ ১৮:২৮:০৩  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : হাজার হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন চন্দনাইশের ইতিহাস-ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মকে জানানো ও ইতিহাস সচেতনতায় চর্চায় বাড়িয়ে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে আজ ৪ জানুয়ারি ২০২০ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড়স্থ সুপ্রভাত স্টুডিও হলে চন্দনাইশ ইতিহাস পরিষদ ও চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি)’র উদ্যোগে ‘প্রসঙ্গ : প্রাচীন চন্দনাইশের ইতিহাস’ সুহ্ম রাজ্যের আঞ্চলিক রাজধানী ছিল কাঞ্চনগর বা দোহাজারী, মহোঞ্জদারো-হরপ্পার মতো চন্দনাইশ একটি সুপ্রাচীন ভূখণ্ড, বারো হাজার বছর আগে চন্দনাইশে নব্যপ্রস্তর সভ্যতা গড়ে উঠেছে, চামুদরিয়া একটি বিলীন সমুদ্রের নাম বিষয়ক সেমিনার ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা ও চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিনবোধী ভিক্ষু, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ব্যাংকার অধ্যাপক আবদুল আলীম, বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবু তালেব বেলাল, প্রবীন ব্যাংকার এইচ এম রফিকুল হক টিপু, লায়ন এসকে সিদ্দিকী। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও পরিবেশবিদ এ কে এম আবু ইউসুফের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুন নুর, ইতিহাস গবেষক এডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, সংগঠক স.ম জিয়াউর রহমান, সাংবাদিক কামাল পারভেজ, ডাঃ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ রতন কান্তি দাশ, ইতিহাস গবেষক মোঃ সাইফুদ্দিন, প্রবীন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ হেকিম শিহাব উদ্দিন চৌধুরী, বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল হুদা, সংগঠক সজল কান্তি দাশ, চকবাজার থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমর কান্তি দত্ত, লেখক স্বপন বড়ুয়া, কবি উদয়ন বড়ুয়া ঝন্টু, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, সাফাত বিন সানাউল্লাহ, মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ রিয়াদ, লাভলী বড়ুয়া, স্বপন চৌধুরী, প্রবীন শিক্ষক তপন কান্তি বড়ুয়া, ইমাদ উদ্দিন, এস.এম. ওসমান, আবদুল গফুর রব্বানী, হারাধন দাশ, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ডাঃ নজরুল ইসলাম প্রমূখ। সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, আজকের চন্দনাইশ একটি প্রাচীন জনপদ। সময়ের সাথে সাথে এই জনপদে শাসন, রাজনীতি-সমাজনীতি পরিবর্তন হয়ে আজকের বাংলাদেশের চন্দনাইশ। কখনো মগ, কখনো হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান দ্বারা শাসিত হয়েছিলো। আরাকান, বৃটিশ, মোগল, সুলতান, পাকিস্তানও শাসন করেছে এ অঞ্চলকে। এই ইতিহাস অনেক প্রাচীন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীন মন্দির, ইটের প্রকৃতি ইত্যাদি প্রমাণ করে যে, অতি প্রাচীনকাল হতে চন্দনাইশ এলাকায় বৌদ্ধ সভ্যতা ও কৃষ্টি গড়ে উঠেছিল।

লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়, ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ ঐতিহাসিক জ্যো আ দ্যা বেরোস অঙ্কিত বাংলার ম্যাপ এবং তুর্কি নাবিক সিদি আলী চিলভীর বর্ণনানুসারে দেখা যায়, “এক সময় বর্তমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ প্রান্তের শেষ এলাকা হতে শুরু করে রামু ও কক্সবাজার সদর সহ পুরো এলাকাটি অখণ্ড রাজ্য ছিল। এবং চন্দনাইশ ছিল প্রাচীন সুহ্ম রাজ্যের আঞ্চলিক রাজধানী। অতি প্রাচীনকালে বর্তমান দোহাজারী এলাকা রাজ্যের প্রধান ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র ছিল। মহাভারত যুগে এই অঞ্চল বলির পুত্র সুহ্মর বিখ্যাত রাজ্য ‘সুহ্ম দেশে’র অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য, সুহ্ম রাজ্যের আঞ্চলিক রাজধানী ছিল চন্দনাইশের কাঞ্চননগর বা দোহাজারী। রাজা সুহ্ম তাঁর রাজ্যালয়ের প্রধান কেন্দ্র এবং উপকেন্দ্রসমূহে ব্যবহৃত সমস্ত আসবাব বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার বন হতে সংগৃহীত সেগুন বৃক্ষ দ্বারা প্রস্তুত করাতেন। তৎকালে এত উন্নতমানের বৃক্ষ উপমহাদেশের আর কোনো বন হতে এত সহজ ও নিরাপদ উপায়ে সংগ্রহ করা সম্ভবপর ছিল না। এই কাঠের অস্থিত্ব এখনো এই পাহাড়ি অঞ্চলে রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও চন্দনাইশ সৃষ্টির ইতিহাস কিন্তু আলাদা প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভৌগলিক পরিব্যাপ্তি রয়েছে। পটিয়া-চন্দনাইশ এলাকার মাটি সঞ্চয়নের ইতিহাস আরাকান, বার্মা, পেগু, নেপাল, পার্বত্য বান্দরবান প্রভৃতির সাথে যুক্ত। কারণ চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূ-ভাগটি মূলত হিমালয় উদ্ভুত, বাংলাদেশের বাকি অংশের সৃষ্টি-গঠনের সঙ্গে এর কোনো প্রকৃতি এবং সৃষ্টি প্রক্রিয়াগত মিল নেই। বরেন্দ্র এলাকার বয়সের চেয়েও চন্দনাইশ-চট্টগ্রাম এলাকার বয়স অনেক বেশি বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা। সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও পটিয়া কক্সবাজার, চন্দনাইশ এলাকা এবং প্রাচীন বলে স্বীকৃত উচু পর্বতসমূহের কয়েকটির মাটি পরীা করে বর্ণিত অঞ্চলের মাটির ধরণ, প্রকৃতি এবং সমন্বিত বৈশিষ্ট্য একই রকম দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে সীতাকুন্ড এবং চন্দনাইশ অঞ্চলের মাটিতে বিদ্যমান রাসায়নিক উপাদানসূহের মাত্রাও প্রায় অভিন্ন। এ থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, চট্টগ্রাম একটি সুপ্রাচীন ভূখন্ড যা উৎপত্তিগত বিবেচনায় নিশ্চিতভাবে কমপে সীতাকুন্ড এলাকার সামসময়িক, যার বয়স পমপে ৪০/৫০ হাজার বছর। সৃষ্টি থেকে এই পর্যন্ত চন্দনাইশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য গৌরবময়। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ইতিহাস প্রাচীন সময় থেকে সমগ্র বিশ্বের সাথে যোগাযোগ ছিল। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে চন্দনাইশের কৃতী বীরসন্তানদের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুর দিকে চন্দনাইশের কৃতিপুরুষ হাবিলদার রজব আলীর সিপাহী বিদ্রোহ, বৃটিশ আন্দোলনে যাত্রামোহন সেনগুপ্ত, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, নেলী সেনগুপ্ত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা আবদুল হামিদ ফখরে বাংলা, বিপ্লবী মহেষচন্দ্র বড়ুয়া, কবিয়াল করিম বখসু, ভাষা আন্দোলনের স্থপতি অধ্য আবুল কাসেম, অধ্যাপক সোলায়মান আলম, সাহিত্যক আহমদ ছফা, জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম এর অবদান স্মরণীয়। সেমিনারের শুরুতে ইতিহাসবেত্তা সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীনের চন্দনাইশ ইতিহাস গ্রন্থের মোড়ক ও পাঠ উম্মোচন করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি



ফেইসবুকে আমরা