বাংলাদেশ, , সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

শবে মিরাজ কি ঘটেছিল সেই রাতে ? : এম,এ,সবুর

  প্রকাশ : ২০১৯-০৪-০৪ ১৩:৫৫:৪২  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : মিরাজ’ অর্থ ঊর্ধ্বে আরোহণের বাহন বা সিঁড়ি। পরিভাষায়—মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত রাতের ভ্রমণকে ইসরা বলে এবং মসজিদে আকসা থেকে সিদরাতুল মুনতাহা ও তদূর্ধ্ব পর্যন্ত ভ্রমণকে মিরাজ বলে।

কখনো তাঁর পূর্ণ সফরকেও মিরাজ বলে। (আততালিকুস সাবিহ : ৭/১২৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮২)
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। সাধারণভাবে প্রসিদ্ধ হলো, রজব মাসের ২৭তম রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে। (সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৩)

মিরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা : এক রাতে রাসুল (সা.) হজরত উম্মেহানি (রা.)-এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন। তাঁর অর্ধনিদ্রা অবস্থায় জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন এবং তাঁকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান। জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) রাসুল (সা.)-কে জমজমের পাশে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং ‘কলব’ (অন্তরাত্মা) বের করে তার পানি দ্বারা ধুয়ে ইলম ও হিকমতে পরিপূর্ণ স্বর্ণের পাত্রে রেখে আবার বক্ষে স্থাপন করেন এবং দুই কাঁধের মাঝে নবুয়তের সিলমোহর স্থাপন করেন। এরপর তারা বুরাক নামক বাহনে করে হুজুর (সা.)-কে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান। (সহিহ বুখারি : ৩৮৮৭, মুসলিম : ২৬৭)

পথিমধ্যে মহানবী (সা.) মদিনা তায়্যিবা, মুসা (আ.)-এর কথা বলার স্থান সিনাই পর্বত এবং ঈসা (আ.)-এর জন্মস্থান বেথেলহেমে অবতরণ করেন এবং ওই স্থানগুলোতে তিনি দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করেন। (বাজ্জার : ৮/৪০৯, মুজামে কাবির : ৭১৪২, ফাতহুল বারি : ৭/১৯৯)

অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করে সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়েন।

তারপর মসজিদ থেকে বের হলে জিবরাইল (আ.) তাঁর সামনে এক পাত্র শরাব ও এক পাত্র দুধ নিয়ে আসেন। রাসুল (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলেন। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাবজাত ও প্রকৃত জিনিস) গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম : ২৫৯) অন্য বর্ণনায় বায়তুল মামুরেও রাসুল (সা.)-এর সামনে ওই দুটি পাত্রসহ একটি মধুর পাত্রও আনা হয়েছিল। সেখানেও তিনি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন। (বুখারি : ৩৮৮৭, মুসলিম : ২৬৪)
অতঃপর জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-কে প্রথম আসমানের কাছে গিয়ে দরজা খোলার আবেদন জানান। ফেরেশতারা অভিবাদন জানিয়ে রাসুল (সা.)-কে বরণ করে নেন। এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন। এ সময় যথাক্রমে প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সবাই হুজুর (সা.)-কে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুুরের কাছে ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। বায়তুল মামুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের পুনর্বার প্রবেশ করার পালা আসবে না। সপ্তম আসমান থেকে রফরফের (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পালকি) মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন, যেখানে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে স্বর্ণের ও বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে তাঁর স্বরূপে দেখেন, তাঁর ছয় শ পাখা ছিল। নিজ চোখে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেন। অতঃপর এক ময়দানে পৌঁছেন, যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিশেষে আরশে আজিমে গমন করেন। এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে উপঢৌকনস্বরূপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনে প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে মুসা (আ.)-এর পরামর্শক্রমে কয়েকবার আল্লাহর কাছে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের (যাতে ৫০ ওয়াক্তের সাওয়াব পাওয়া যাবে) বিধান নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। (বুখারি : ৩৪৯, ৩৩৪২, ৩৮৮৭, মুসলিম : ২৬৩, ২৬৪, ফাতহুল বারি : ৭/২৫০-২৫৯, মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫, সিরাতে মুস্তফা : ১/২৮৫-২৮৬)

ঊর্ধ্বজগতে যেসব নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তাঁরাও বিদায় সংবর্ধনা জানানোর জন্য তাঁর সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায়। জিবরাইল (আ.)-এর ইঙ্গিতে নবীজি (সা.)-কে ইমাম বানানো হয়। তিনি নবীদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এরপর বুরাকে সাওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান। (মা’আরেফুল কোরআন : ৭৬৪-৭৬৫)

মিরাজের শিক্ষা : মিরাজের রজনীতে হুজুর (সা.) ও তাঁর উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়—এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। দুই. সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, যেখানে ঈমান-আনুগত্য ও দোয়ার আলোচনা রয়েছে। তিন. শিরক থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ এবং এর বিনিময়ে ক্ষমার ওয়াদা। (মুসলিম : ২৭৯, তিরমিজি : ৩২৭৬)।
লেখক : বিশিষ্ট সংগঠক ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী
জেনারেল ম্যানেজার,ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস।



ফেইসবুকে আমরা