পরিস্হিতি২৪ডটকম : ভোক্তা হিসাবে প্রতিনিয়তই জনগন ভোগান্তি ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অনেকেই এটাকে নিয়তির নিয়ম হিসাবে মেনে নিচ্ছে। আর ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নিরবেই অনেকে প্রতিকারের জন্য আইনী সহায়তা নিতে আগ্রহী না হয়ে নিস্কৃয় থেকে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী ও সরকারী সেবা সংস্থাগুলি স্বচ্ছতা ও জবাবতিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। অন্যদিকে আইনী দীর্ঘসুত্রিতা ও জঠিলতার কারনে জনগন ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানির শিকার হলেও সরকারি অফিস বা আদালতের দ্বারস্থ হতে তেমন আগ্রহী নয়। অনেক নৈরাশ্যবাদীরাও প্রায়শঃ বলে থাকেন অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যায় না। কিন্তু অনেকেই জানেন না ভোক্তা হিসাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও ভোগান্তির শিকার হলে একজন ভুক্তভোগী ক্ষতিপুরন ও প্রতারিত হলে সরাসরি অতি সহজে বিনা কোর্ট ফিঃ ও অ্যাডভোকেট নিযুক্তি ছাড়াই মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট, চিটির মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ আইনে অভিযোগ দাখিল করে ক্ষতিপুরন দাবি করতে পারেন। আর অভিযোগ প্রমানিত হলে জরিমানারও পঁচিশ শতাংশ অভিযোগকারী পাবেন। প্রতি সপ্তাহে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রিয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে গণশুণাণী ও মাঠ পর্যায়ে বাজার অভিযানের মাধ্যমে অভিযোগগুলি দ্রুত নিস্পত্তি করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারন জনগন ও ভোক্তারা এ বিষয়ে পরিস্কার ধারনা না থাকায় ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ থেকে তেমন সুবিধা পাচ্ছে না। তাই ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষনে এই যুগান্তকারী আইন ও সুযোগ সম্পর্কে সর্বসাধারনকে জানানোর জন্য ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্ঠি করতে হবে। আর খাদ্যে ভেজালের মতো বিষয়গুলো নিরব ঘাতক। কারন অস্ত্র দিয়ে একজনকে মারলে সংগে সংগে মরবে কিন্তু খাদ্য ও ওষুধে ভেজালের কারনে মানুষ ধুকে ধুকে মরবে। যা মানুষ খুনের চেয়েও ভয়াবহ। সেকারনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনের সংশোধনী এনে খাদ্য ও ওষুধে কঠিন দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা, আর্থিক লেনদেন এই আইনে প্রতিকার যুক্ত করা দরকার। ১৮ জুলাই ২০১৯ইং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের একে খান মিলনায়তনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর অধীনে অভিযোগ দাখিল ও নিস্পত্তি নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আবরার সালামের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃ সাজেদা আকতার, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ হাসানুজ্জমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ আহসান খালিদ ও ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী। আলোচনায় অংশনেন ক্যাব যুব গ্রুেপর সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ, যুব গ্রুপের সাধারন সম্পাদক নিপা দাস, ক্যাব ফিল্ড অফিসার শম্পা কে নাহার ও জেড এইচ শিহাব প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশনেন মুনতাসিুরুল আলম, তুলাচিং মার্মা, ফাহিদা আকতার মজুমদার, অনিক দাস, হামিম আল সাদাত, দ্রুপদি, মুমতাহিম ইসলাম তানজীল, ফাতিমা আল শাহারা আসহান রাইসা, তানভীর কায়সার অনিন্দ, আনিকা আনতারা রিয়া প্রমুখ।
সেমিনারে বলা হয় খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেয়া, প্যাকেটের গায়ে লেখা মুল্যের চেয়ে বেশী নেয়া, পঁচা বাসি খাবার বিক্রি, দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মেয়াদোত্তীর্ন খাদ্য, ওষুধ, পণ্য বিক্রি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বেশী সেবামূল্য নেয়া, গণপরিবহনে বেশী ভাড়া নেয়াসহ ভোক্তার স্বার্থের সাথে জড়িত যে কোন বিষয়ে এমনকি হ্জ্ব যাত্রায় হাজীদের কাছ থেকে বেশী ভাড়া নেবার বিষয়ে অভিযোগের প্রতিকার করা হচ্ছে। আর ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হলে এই আইন ছাড়াও নিরাপদ খাদ্য আইন, মোবাইল কোর্ট আইনসহ অনেকগুলি আইনে প্রতিকার পাবার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সরকারী হটলাইন ৩৩৩তে ফোন কলেও প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু জনগনের মাঝে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
সেমিনারে আরও জানানো হয় ভোক্তা অধিকার লংগনের যে কোন ঘটনায় তার প্রমানসহ লিখিত ভাবে সরাসরি বা ডাকযোগে বা সেল ফোনে এসএমএস করে, ফ্যাক্সযোগে, ই-মেইলযোগে, সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমে, অন্য কোন উপায়ে অভিযোগকারীর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স, ও ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা ক্যাব বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। প্রয়োজনে নিন্মোক্ত ইমেইলেও অভিযোগ দাখিল করা যাবে। [email protected], [email protected], [email protected], [email protected]। সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা ও ছাত্র/ছাত্রীসহ ৩৭৫জন অংশগ্রহন করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি