পরিস্হিতি২৪ডটকম : বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র (ইটিপি) চালু না থাকা কোনো শিল্প-কারখানা পাওয়া গেলে তা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার সচিবালয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদনদীর নাব্য এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, সুপারিশ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গঠিত টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী টাস্কফোর্সেরও সভাপতি।
খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে ইটিপি ছাড়া কোনো শিল্প-কারখানা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ফ্রিকোয়েন্টলি এগুলো ভিজিট করছে। যেখানে যেটা খবর পাব, শাটডাউন (বন্ধ) করে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা কাজ করছি। সবাই আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের মধ্যে কিছু দুষ্টচক্র তো আছেই; কারণ দুষ্টচক্র, দুষ্ট সমাজব্যবস্থা, দুষ্ট রাজনীতি, বিকৃত ইতিহাস এগুলো তো ১৯৭৫ এর পর আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি। এগুলো তো আছেই। এগুলো থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। তাদের যেহেতু একট গোষ্ঠী লালন করছে আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এসব জায়গা নির্মূল করতে পারব না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বাংলাদেশকে যে সম্ভাবনার জায়গায়, আমাদের যেটা লক্ষ্য, সেই উন্নত বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’
নদীর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর তো আবার দখল হয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘বেদখল হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক না। দুষ্টচক্র যেখানেই হাত দেবে সেখানেই আমরা ফোর্স অ্যাপ্লাই করব। আমরা কোনো ছাড় দেব না।’
নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা গেছে দাবি করে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এটা আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি। আমাদের কোনো ধরনের দুর্বলতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু করে দিয়েছি, এটা শেষ করা কঠিন। আমরা কঠিনকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাব। যতই কঠিন হোক আমরা এই পথ অতিক্রম করব।’
আড়াইশর মতো নদীর সীমানা পিলার দৃশ্যমান হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীর বলেন, ‘নদীরক্ষা প্রকল্পে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। এই বরাদ্দ আরও বাড়ছে, কারণ আমাদের কাজের পরিধি বেড়ে যাচ্ছে। এটা আবার রিভাইস করতে হবে। তবে প্রকল্পের সময় বাড়বে না (২০২২ সাল পর্যন্তই থাকবে)।’
নৌপরিবহন সচিব মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘দূষণ রোধে আমরা একটি আম্রেলা প্রকল্প করতে যাচ্ছি। যার যে মন্ত্রণালয় তারা সেই কাজটা করবে। আর আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে নদীর মধ্যে ২০ মিটার বা ফুট পলিথিন বর্জ্য অপসারণ করার জন্য গ্রেভ ড্রেজার কিনব, আমরা জাপান ও নেদারল্যান্ডসে যাচাই করছি, দেখছি। গ্রেভ ড্রেজার কিনে এই ময়লাগুলো তুলব। এরপর ৫০/৬০ কিলোমিটার নিয়ে এটাকে প্রসেসিং করব, এটা একট চিন্তা আছে। গ্রেভ ড্রেজার ব্যবহার করে ময়লা তোলা এবং ময়লা ম্যানেজের কাজটা আমরা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করলাম আবার যদি শিল্পবর্জ্য এসে আমার পানি নষ্ট করে দেয়! এ জন্য একটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো মিলে সামগ্রিক প্রকল্প করার চিন্তা করছি। এর মাধ্যমে দূষণের কাজটা শেষ করব।’
সভায় জানানো হয়, ঢাকা শহরের চারদিকের নদীসমূহ দখল ও দূষণমুক্তকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃক অবৈধ স্থাপনা অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় ১৮ হাজার ২৫টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, ৭৩৮ একর তীরভূমি উদ্ধার, ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৪ কোটি টাকার পণ্য নিলাম করেছে।
সভায় আরও জানানো হয়, ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় তিন হাজার ৮০৩টি সীমানা পিলারের মধ্যে ২০৭টি পিলার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় দুই হাজার ছয়টি সীমানা পিলারের নির্মাণকাজ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হবে। নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের অধীনে আড়াই হাজার সীমানা পিলার এবং ঢাকা ও টঙ্গি নদীবন্দরের অধীনে ছয়টি ভারী জেটি নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।