বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

পরিস্হিতির একান্ত সাক্ষাতকারে টি আাই এডমিন শওকত ” ট্রাফিক বন্দর বিভাগ যানজট নিরসন ও চালক-মালিককে সর্বোচ্চ সেবা দিতে চায়”

  প্রকাশ : ২০১৮-১২-২০ ০৫:৫৭:২৬  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) নগরীর সড়কে যানবাহন চলাচল ও ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করতে বন্ধ পরিকর। সড়কে যাতে বৈধ গাড়িগুলো যথাযথভাবে চলাচল করতে পারে, যানজট নিরসন করে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা এনে জনভোগান্তি লাঘব করা যায়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ। চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক বিভাগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। এর একটি ট্রাফিক উত্তর বিভাগ, অন্যটি ট্রাফিক বন্দর বিভাগ। চট্টগ্রাম নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, বিমান বন্দর, ডক ইয়ার্ড, ইপিজেড, বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদসহ সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের আওতায় রয়েছে।
সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগ তার আওতাধীন সড়কে যানজট নিরসন করে জনদুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি চালক-মালিকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, তারা মামলাজনিত কারণে টাফিক কার্যালয়ে এলে যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা মামলা সংক্রান্ত কার্যক্রম নিষ্পত্তি করে আবার কাজে ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য আন্তরিকভঅবে কাজ করবে। সম্প্রতি সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগে দায়িত্ব নিয়ে আসা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর-প্রশাসন (টিআই-প্রশাসন) এসএম শওকত হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম হলো দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত। দেশের অর্থনীতির পাইপলাইন চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম ট্রাফিক বন্দর বিভাগের আওতায় এই বন্দরের সড়কগুলো দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সতর্ক ও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যানজট নিরসন করে যাতে সড়কগুলোতে চলাচলকারী পরিবহনগুলো নিয়ম মেনে চলাচল করে সে ব্যাপারে সচেষ্ট। ১৯৯৯ সালে পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেওয়া এসএম শওকত হোসেন ট্রাফিক বন্দর বিভাগের টিআই প্রশাসন হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় টিআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি চাকরি জীবনে ফেনী, নরসিংদী, খুলনা ও রাঙামাটিতেও চাকরি করেন। নতুন কর্মস্থল ট্রাফিক বন্দর বিভাগের টিআই-প্রশাসন হিসেবে গত ৭ নভেম্বর যোগদান করেন। ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, আমি পেশাগতভাবে সবসময় চেষ্টা করি রাস্তায় যানবাহন চলাচল যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হয় সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, বৈধভাবে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোর মালিক-চালকরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে আমি সবসময় চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। তিনি বলেন, রাস্তায় যানবাহন চলাচলে কোনো অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। এক প্রশ্নের জবাবে টিআই-প্রশাসন এসএম শওকত হোসেন বলেন, তিনি দুই দফায় জাতিসংঘে শান্তিরা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। জাতিসংঘ পদকপ্রাপ্ত এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমবার ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে আরেকবার ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে ও মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি সবসময় চেষ্টা করবে কাগজপত্র জটিলতার কারণে যেসব মামলা হবে তা নিষ্পত্তির জন্য গাড়ির মালিক-চালক ট্রাফিক কার্যালয়ে আসলে যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমি চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি গাড়ির মালিক-চালক অফিসে আসলে যাতে সম্মানের সাথে দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে সে ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)’র ট্রাফিক বিভাগ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা পায়। প্রায় ৪০ বছর যাবত সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ চট্টগ্রাম নগরীর যানবাহন সুষ্ঠুভাবে চলাচল ও চালকদের আইনের প্রতি আস্থাশীল করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে নগরীতে সড়কে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা এসেছে বলে ট্রাফিক বিভাগ দাবি করছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে ৭০ লাখ মানুষের জন্য ৩০ হাজার যান্ত্রিক আর ২০ হাজার অযান্ত্রিক নিয়ে মোট ৫০ হাজার পরিবহন নিয়ে ১৯৭৮ সালে যাত্রা করা সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এখন প্রায় ৫ ল যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে। এরমধ্যে ৩ ল যান্ত্রিক ও ২ ল অযান্ত্রিক যানবাহন রয়েছে। আর সিটি কর্পোরেশনের হিসেব মতে নগরীতে বর্তমানে ৭০ হাজার রিকশা চলাচল করছে। এই বিশাল পরিবহন ব্যবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, ১৯৭৮ সালে ১২০ বর্গকিলোমিটারের নগরীর এখন বেড়ে ১৬৮ কিলোমিটারের মহানগরী হয়েছে। শুরুতে ৩৯৫ জন জনবল থাকলেও তা বেড়ে এখন ৯৫৬ জন। নানা সমস্যা থাকলেও চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক বিভাগ সড়কে যানবাহন চলাচলে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ করছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে একদিন শনিবার নগরীতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার, ট্রাফিক আইন-সিগন্যাল মানা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কর্মসূচি পালন করা হয়। বর্তমান সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান দায়িত্ব নিয়ে আসার পর এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন বলে ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এতে করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলেও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করছেন।
চট্টগ্রাম নগর ট্রাফিক উত্তর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে জরিমানা ও মামলা দুই পদ্ধতি করা হয়। আগে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হলেও বর্তমানে ম্যানুয়েলের পাশাপাশি ডিজিটাল (পস) পদ্ধতিতেও মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। ডিজিটাল (পস) পদ্ধতিতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে নগরীতে চালু হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা করায় আগের তুলনায় যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বেশি বলে দাবি করেছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। এদিকে ট্রাফিক বন্দর বিভাগে টিআই-প্রশাসন হিসেবে শওকত হোসেন দায়িত্ব নিয়ে আসার পর ট্রাফিক বিভাগে কাজে গতিশীলতা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানিয়েছেন। একইভাবে পরিবহনের কয়েকজন মালিক ও চালকও জানিয়েছেন, বর্তমানে ট্রাফিক বিভাগের কাজে গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেক বেশি।



ফেইসবুকে আমরা