বাংলাদেশ, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মানবতার পবিত্র আলোকবর্তিকা শাহেনশাহ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী ট্রাষ্ট : লায়ন ডাঃ বরুণ কুমার আচার্য বলাই

  প্রকাশ : ২০১৯-০৯-০৯ ১৬:০৩:৩১  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : মানুষ হলো সৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর ও সেরা জীব। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। মানুষকে ‘মানুষ’ বলা হয় কারণ তার মধ্যে মানবিকতা আছে, বোধ-বিবেক আছে, হিতাহিত জ্ঞান আছে, ভালো-মন্দ যাচাই করার সমতা আছে, যা ভিন্ন কোনো প্রাণী বা জীবের মধ্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। মানুষের বিবেক-বোধকে আরো উৎকর্ষিত করার নিমিত্তে আল্লাহ তা’য়ালা যুগে যুগে তাঁর বার্তাবাহক প্রেরণ করেছেন। যারা মানুষকে মানবতা শিখিয়েছেন, সত্যগ্রাহী অহি মানবতার নির্দেশনার নিমিত্তে বার্তাবাহকদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। ক্ষণস্থায়ী জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা ও পরকালে মুক্তির জন্যই বান্দার তরে সৃষ্টিকর্তা সকল ব্যবস্থাপনা ও গাইডলাইন। যে জাতি যখনই গাইডলাইনের সীমারেখা অতিক্রম করেছে তখনই সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্য প্রলয়ঙ্করী ধ্বংস ঢেলে দিয়েছেন। যার ইতিহাস আমাদের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ধ্বংসাবশিষ্ট জাতির বিভিন্ন স্থাপনা এখনো মানবজাতিকে সীমালঙ্ঘন থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করছে প্রতিনিয়ত।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর রক্ত ও বেলায়তের উত্তরাধিকারী, তদীয় প্রপৌত্র হযরত জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) এর চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিলো রাসূল (সা) এর আদর্শকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা। তিনি নির্বিলাস সাদাসিদে জীবন যাপন করেছেন। তাঁর মতো বিনয়ী ও উদার প্রকৃতির মানুষ কমই দেখা যায়। পার্থিব জীবনের চেয়ে পরকালীন জীবনকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে পরকাল ছেড়ে পৃথিবীতে মশগুল রয়েছে। তার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি আর বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে আল্লাহর মা ও সস্তুষ্টি। পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ বিলাশ ছাড়া কিছুই নয়।’ (সূরা হাদীদ : ২০)। শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) এর জীবনে পার্থিব মোহ লোভ লালসা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি বলতেন, ‘নিজের ভিতর দৃষ্টি দাও, বহির্জগতের চেয়েও অপরূপ সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখতে পাবে।’ তিনি সুফিবাদের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন। মহান রবের সানিধ্য পেতে তিনি কঠোর সাধনা করেছেন এবং সফলও হয়েছিলেন। শাহানশাহ মাইজভান্ডারী তাঁর পূর্বসূরি ওলী-বুজুর্গদের ন্যায় ফলিত অর্থে একাধারে সংস্কারক এবং অব্যাহত প্রগতিশীলভাবে বিবর্তনশীল সংস্কার ঐতিহ্যের উৎসও বটে। আধ্যাত্ম জীবনের বাঁকে বাঁকে তিনি তাঁর কাছে আগত ব্যক্তি-মানুষ, প্রশাসক, রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ছাত্র, শিক্ষক, সমাজসেবক, গৃহী, গৃহিণী, শ্রমিক, মালিক তথা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রত্যেক মানুষকে তাৎনিক আত্ম সংস্কারমূলক প্রক্রিয়ায় উদ্বুদ্ধ করেছেন, যার প্রভাব ব্যক্তির নিজস্ব জীবন ও সমাজ জীবনে বিস্তৃত হয়। এ ধরনের অগণিত দৃষ্টান্ত তাঁর জীবনী গ্রন্থসহ বিভিন্ন রচনায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। তিনি একাধারে আল্লাহতে সমর্পিত এবং অন্যের কল্যাণে নিবেদিত। বর্তমান সময়কালে জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর যোগ্য উত্তরসুরি হিসেবে তাহার একমাত্র পুত্র হজরত সৈয়দ মুহাম্মাদ হাসান মাইজভাণ্ডারীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। শাহানশাহ বাবাজানের যোগ্যতম উত্তরসুরি হিসেবে তিনি কামেলিয়াতের অতি উচ্চ স্তর এ গমন করেন। হাসান মওলা কে তদীয় পিতা মস্তবড় অলি হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বর্তমানে তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে মানবতার কল্যাণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি দাঁড় করিয়েছেন শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট মানবতার কল্যাণে আলোক বর্তিকা ছড়াচ্ছে। এই ট্রাস্ট বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সর্বজীবেরপ্রতি অকৃত্রিম ভালাবাসা বাস্তবায়নের লক্ষে সমাজের দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও নিঃস্বদের সাহায্যে এবং সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে জনকল্যাণ মূলক কাজ করার জন্য নিবেদিত একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও মানবতাবাদী ধর্মীয় সংগঠন। এই ট্রাস্ট সমাজে চরিত্রবান, দুর্নীতিমুক্ত, শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বমানের সুবিধা সম্বলিত উন্নত দেশ গঠনের জন্য নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমার ব্যাক্তি জীবনে হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান প্রকাশ মওলা হুজুরকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি তাঁকে মানবতার পরম কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়তে। যেখানেই ভক্ত আশেকগণ কোন বিপদ আপদের সম্মুখিন হয়েছে তিনি তখনই সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছেন। শুধু ভক্ত আশেকগণ নয় দুঃস্থ, অসহায় জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম দয়া দৃশ্যনীয়। শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাস্ট এর উল্লেখিত কার্যক্রম গুলো বেশ প্রসংশার দাবী রাখে। শিক্ষা কার্যক্রম : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন ২৩টি স্কুল ও মাদরাসায় ২৯৪২জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছেন। বৃত্তি তহবিল: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনাধীন উচ্চ বিদ্যালয় সমূহ ও চসিক ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড এর প্রান্তিক এলাকা সম্পৃক্ত করে শিামূলক কর্মকান্ডে এ পর্যন্ত ৭৩৫ জন দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে ২১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ : ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকদের জ্ঞান ও শিক্ষা দানের আধুনিক কলা-কৌশল শিক্ষা প্রদানের লক্ষে এ পর্যন্ত ২৫০ জন শিক্ষককে সৃজনশীল পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা: মাইজভান্ডার দরবার শরীফ হোসাইনী দাতব্য চিকিৎসালয় অসহায় ও দু:স্থ ব্যক্তিবর্গের বহি:বিভাগীয় চিকিৎসা সেবায় বিনামূল্যে চু অপারেশনসহ ৩২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। পাইলট প্রকল্প-১ এর অধীনে সৈয়দ নুরুল বখতেয়ার শাহ দাতব্য চিকিৎসালয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের মাধ্যমে নারী, শিশু ও প্রসূতি মায়ের বিনামূল্যে ঔষধসহ নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প: দারিদ্র্য বিমোচনের লে শাহানশাহ হযরত ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) ট্রাষ্টের যাকাত তহবিল গঠন করা হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে ১৫৬৪ জনকে ৩,৮৭,৪৪,৯৩০/- টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্প-২ এর অধীনে সেলাই প্রশিণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ নারী উন্নয়ন কর্মসূচীর অধীনে ১০টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গবেষণা ও প্রকাশনা: বাংলায় প্রকাশিত তাসাউফ বিষয়ে বহুমূখী গবেষণা ও বিশ্লেষণমূলক জার্নাল ‘মাসিক আলোকধারা’ নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ট্রাস্টের প্রকাশন ‘আলোকধারা বুকস’ কর্তৃক ২০টি বই প্রকাশ হয়েছে। কবি নজরুল এর ভাষায়, ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভূলিতে।’ এই চরণন্যায় মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের পথ চলা হোক মানবতার উজ্জ্বল নক্ষত্র। এর আলোক বর্তিকা ছড়িয়ে পড়ুক দেশ থেকে দেশান্তরে।

লেখক: কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক ও মরমী গবেষক।



ফেইসবুকে আমরা