বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

প্রকৃতি মুগ্ধকর পরিবেশে পাখিদের জন্য এক অনন্য ভালবাসা !

  প্রকাশ : ২০১৯-০৯-১৭ ১৭:০৮:১৫  

পরিস্হিতি২৪ডটকম/(মিরহোসেন সরকার): বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, নানা ধরনের বাসস্থান প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণে মুগ্ধকর পরিবেশে পাখিদের জন্য এক অনন্য ভালবাসা স্থাপন করেছে গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের আহম্মদ উল্লাহ নামে এক যুবক। এবং তার সাথে সংযুক্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন “প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা” (ন্যাচার এন্ড এনভায়রনমেন্ট প্রিজারভেশন অর্গানাইজেশন)। পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতিতে পাখিদের সংরক্ষণ পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার্থে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বজায় রাখতে পারে এ উদ্বুদ্ধ চেতনাকে সামনে এগিয়ে নিয়েই সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত এ সংগঠনটি।

সরেজমিনে পরিদর্শন গিয়ে দেখা যায়, ৩৫ সদস্যর একটি দল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত, তালুককানুপুর ও কোচাশহর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় পাখি ও প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণে কাজে নিবেদিত হয়েছে এ সংগঠনটি ।এবং উল্লেখ্য, সংগঠনটি বিভিন্ন এলাকায় পাখিদের বাসস্থানের জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়।

২০০১ সাল থেকে পাখির বাসস্থান এবং পরিবেশ সংরক্ষণ কাজে সংযুক্ত হয় এ সংগঠনটি।
সংগঠনটির এক সদস্যর সাথে ছোট্ট একটা মত বিনিময়ে জানা যায়, আহম্মদ উল্লাহ-র নেতৃত্বে তাঁরা স্বেচ্ছাশ্রমে প্রশংসনীয় অন্যতম বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো কাজে যুক্ত হয়েছিলেন সেগুলো নিম্নে উল্লেখ হলো : যেমন, দুইটি বিরল প্রজাতির আহত হুতুম ছানাকে সুস্থ করে তোলা, তালুককানুপুর ইউনিয়নে রাঘবপুর গ্রামে ভাঙ্গা রাস্তায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা, ঝড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যাওয়া বিরল প্রজাতির চিল ছানাকে ছোট থেকে বড় করে মুক্ত করা, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কুইজ প্রতিযোগীতা, ধানের জমিতে পাখি দ্বারা পোকা-মাকড় দমনের জন্য কঞ্চি পোতা, রাঘবপুর গ্রামে একজন অতিদরিদ্র ব্যক্তির ঘর নির্মাণ করে দেয়া, ভ্রাম্যমাণ রাস্তা সংস্কার কর্মসূচী আর অনেকে। এছাড়া নাটোর জেলার রাজবাড়ীতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অভিযান, বিভিন্ন পাখিদের জন্য মাটির হাঁড়ি ও কলসের নিরাপদ বাসা নির্মাণ এবং অসুস্থ পাখি বাসা থেকে পড়ে যাওয়া পাখিদের ছানা রক্ষা করে সুস্থ করে তুলে সঠিক সময়ে বাসায় স্থাপন করার সাথে তারা যুক্ত আছেন।

সম্প্রতি জানা যায়- আহম্মদ উল্লাহ মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে । পড়াশুনার পাশাপাশি বাহিরের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব পাখিদের জন্য এক অনন্য ভালবাসার মাধ্যমেই শুরু করে তার এই পাখি সংরক্ষণ কর্মসূচী। কেননা, সাম্প্রতিক সময়ে অবাধ বৃক্ষ নিধনের কারণে পাখিরা তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হারিরে ফেলে, এবং খাদ্য সংকটের কবলেও পড়ে। ফলে পাখিদের স্বাভাবিক প্রজননে বিঘ্নিত ঘটে। এছাড়া গ্রামগঞ্জের মানুষ পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল না হওয়ায় অনেক পাখি মারাও যাচ্ছে। এছাড়া ফসল উৎপাদনে বিষাক্ত কীটনাশকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাখিদের মৃত্যুর হারও বেড়েছে। এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে “প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থাটি”। শুরুতেই তালুককানুপুর ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী সমসপাড়া, ফকিরপাড়া, কবিরাজপাড়া, কাপাসিয়া, ছোট নাগবাড়ি গ্রামে তারা তাদের কার্যক্রমের সুত্রপাত ঘটায়। এভাবেই তারা ২০১০ সাল পর্যন্ত নিজ খরচে এসব গ্রামে দু’হাজার কলস স্থাপন করে।। বিশেষ করে অবাধ বৃক্ষ নিধনের কারণে পাখিরা এখন বাসা বানিয়ে প্রজনন করার মত নিরাপদ গাছ পাচ্ছে না। তযথা! পাখি শিকার বন্ধ না হওয়ায় নানা প্রজাতির দেশীয় পাখি ইতোমধ্যেই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গাছে মাটির হাঁড়ি, কলস স্থাপন ও গাছের শাখায় কৃত্রিম গর্ত করে দিয়ে ছোট ছোট মাটির পাতিল বসিয়ে প্রায় ৫ হাজার পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলে এই সংগঠনটি। পাখিদের শিকার না করা , তাদের বাসস্থান নির্মাণ করে দেয়া ছাড়াও পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কাজ করে চলেছে। তাঁদের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো- শিক্ষা
ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম, সামাজিক বনায়ন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন, খাল-বিল ডোবায় প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য চাষ, স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য জনসেবামূলক কাজ, ছোট পরিবার গঠনে গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা। এদের মধ্যে অন্যতম হলো- স্বেচ্ছায় বৃক্ষরোপন, পানি ও নদী দূষণ রোধ ও স্যানিটারী পায়খানা ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তোলার কাজে স্বত:স্ফুর্তভাবে এগিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ স্ব-চোখে তাদের; পাখি ও পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম দেখার জন্য গোবিন্দগঞ্জে আসেন। তাঁদের উৎসাহে ইতোমধ্যেই গোবিন্দগঞ্জ থেকে ‘নিপো’ কার্যক্রম গাইবান্ধা জেলার বাইরে যেমন, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট এবং গাজীপুর, রংপুর জেলায় সম্প্রসারিত করেছে।
বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড সহ একাধিক পদক ও সনদপত্র পেয়েছে।

তাদের এই কর্মসূচির জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আশে-পাশে এলাকায় সংগঠনটির নাম ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পরেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থাটির প্রধান আহম্মদ উল্লাহ বলেন, আমাদের কাজের লক্ষ্য একটাই বনাঞ্চল ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় পাখি প্রাণীদের সংরক্ষণে সকলে এগিয়ে আসা ও জনসচেনতা সৃষ্টি।



ফেইসবুকে আমরা