বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

পক্ষপাতমুক্ত সমাজ গড়ার সহায়ক শক্তি গ্রন্থগার : ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন

  প্রকাশ : ২০১৯-১২-২১ ১৯:২৭:৫৬  

পক্ষপাতমুক্ত সমাজ গড়ার সহায়ক শক্তি গ্রন্থগার : ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন

পরিস্হিতি২৪ডটকম : প্রাণিকূলের মধ্যে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী। এ শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে যেসব কারণ গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে মানুষের ভাষা আছে এবং ভাষার লেখ্যরূপ রয়েছে; মানুষের স্মৃতি আছে অর্থ্যাৎ মানুষ পূর্বাপর ঘটনা মনে রাখতে পারে; মানুষের উদ্ভাবনী মতা একচ্ছত্র ও প্রখর; মানুষ সভ্যতা গড়েছে ও প্রযুক্তি করায়ত্ত করেছে এবং সর্বোপরি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক দিক উদ্ভাবন ও তার যুৎসই প্রয়োগ ঘটিয়ে সে সবের সুফল ভোগ করেছে। মানুষের মধ্যকার উদ্ভাবনী মতা ও মেধার অধিকাংশই সুপ্ত অবস্থায় থাকে। উপযুক্ত শিক্ষা মানুষের এ সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে মানব সম্পদে রূপান্তর করে। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৭(ক) অনুচ্ছেদে শিক্ষা গ্রহণকে জনগণের মৌলিক অধিকার বলা হয়েছে। বই পড়ে মানুষ উত্তম জ্ঞান আর গুণের অধিকারী হয়। বই নৈতিক জ্ঞান ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বই জ্ঞানচর্চার প্রধান বাহন। বই জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা চেতনাকে ধারাবাহিকভাবে পৌঁছে দেয় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। গ্রন্থাগার শুধু সমাজসংস্কারের কাজই করে না, তা সমাজের সামগ্রিক বিকাশের স্থায়ী উপকরণ হিসেবেও ভূমিকা পালন করে। অনন্ত বিশ্বের জ্ঞানরাজি এবং তার ভাবরাশিও অফুরন্ত। বিচিত্র ভাব ও চিন্তার বিষয়ে রচিত হয়েছে কত গ্রন্থসম্ভার। কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সেই সব গ্রন্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। গ্রন্থাগার বহু মানুষের যৌথ প্রতিষ্ঠান। সেখানে বহু প্রয়াসের সংগৃহীত বহু গ্রন্থ পাঠের সুযোগ ঘটে। এছাড়া, গ্রন্থাগার থেকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নিজ নিজ অভিরুচি অনুসারে যে কোনো বিষয়ে গ্রন্থ সংগ্রহ করে পাঠ করতে পারে। গ্রন্থাগার ভাবের মিলন-সেতু। গ্রন্থাগার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের যোগ-মিলনের অর-নির্মিত সেতু। নদীর স্রোতের মত জ্ঞান-প্রবাহ দেশ-দেশান্তর ও যুগ-যুগান্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলে। এক হৃদয়ের ভাবরাশি নিঃশব্দে প্রবাহিত হয়ে যায় হৃদয়ান্তরে। গ্রন্থাগার তাই জ্ঞানান্বেষী কোটি কোটি মানুষের নীরব আলাপনের পবিত্র বিদ্যাপীঠ। এখানে চিন্তাবিদ পায় তাঁর নানামুখী চিন্তার খোরাক এবং নানা দুরূহ জিজ্ঞাসার উত্তর, ভাবুক পায় ভাব রসের সন্ধান। হৃদয় ও মনের ক্ষুণ্নিবৃত্তির এক বিপুল আয়োজন কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই গ্রন্থাগার ভাব-তৃষিত ও জ্ঞানপিপাসু সহস্র চিত্তের তৃপ্তি-সরোবর। গ্রন্থাগার সবার জন্য উন্মুক্ত। গ্রন্থাগারের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে গ্রন্থাগারের সুষ্ঠু পরিচালনার ওপর। গণতন্ত্রের সাফল্যে গ্রন্থাগারের ভূমিকা টেলিভিশন, রেডিও, প্রচার মাধ্যম কোনোটার চেয়ে কম নয়। আধুনিক বিশ্বে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাই বড় বড় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়ে আসছে। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, মস্কোর লেনিন গ্রন্থাগার, ওয়াশিংটনের সাধারণ পাঠাগার প্রভৃতি বিশ্বের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাগারগুলোর অন্যতম। প্রকৃতপে গ্রন্থাগার একটি তথ্যকেন্দ্র। শিক্ষা ক্ষেত্রই শুধু নয় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কল-কারখানা, রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় সর্বত্র তথ্যের প্রয়োজন। গ্রন্থাগার সর্বক্ষেত্রে তথ্য ধারণ ও সময়মত সেসব পরিবেশন করে সবাইকে সাহায্য করার জন্য উপস্থিত থাকে। গ্রন্থাগার একটি উত্তম তথ্য সংরণাগার, বিগতকালের লিপিবদ্ধ ও বিভিন্ন উপায়ে রেকর্ডকৃত ডকুমেন্টসমূহ অতি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করে রাখে আগামী দিনের ব্যবহারের জন্য। শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ কর্মীগণ একটু আগ্রহী হলে, সংগৃহীত এসব উপকরণ কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে সমাজ উন্নয়নের নতুন সাংস্কৃতিক স্তর বিনির্মাণে গ্রন্থাগারকে একটি সামাজিক সেবা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে সমর্থ হবেন। গ্রন্থাগারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-(১) সরকারি ও (২) বেসরকারি। সরকার কর্তৃক পরিচালিত গ্রন্থাগারগুলোকে সরকারি অন্যদিকে সরকারের প্রচ্ছন্ন ছায়ায় ও জনগণ এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত গ্রন্থাগারগুলেই বেসরকারী গণগ্রন্থাগার। উল্লেখ্য, বিভিন্নবয়স, বিভিন্ন রুচির পাঠক, প্রয়োজনীয়তা, সংগ্রহ ইত্যাদি বিবেচনায় গ্রন্থাগারকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়; যেমন-(১) জাতীয় গ্রন্থাগার; (২) গণগ্রন্থাগার; (৩) প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগার; (৪) বিশেষ গ্রন্থাগার। জাতীয় গ্রন্থাগার জাতীয়ভিত্তিক হলেও তার সংগ্রহের পরিধি ও গুরুত্ব আন্তর্জাতিক। দেশ ও জাতি সম্পর্কে দেশী ও বিদেশী সকল প্রকাশনা সংগ্রহ ও সংরণ করে জাতীয় ঐতিহ্যকে সুষ্ঠুভাবে সংরণই তার প্রধান উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার নিম্নরূপ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে-(১) বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ১৯৭৪ (২০০০ সালে সংশোধিত)- তার আলোকে দেশে প্রকাশিত সকল প্রকার প্রকাশন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা ও সেগুলোকে পাঠকের সেবাদানের জন্য উপযোগী করা এবং সেগুলোর সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা; (২) দেশের গ্রন্থাগারসমূহের জাতীয় অভিভাবক হিসেবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া; (৩) দেশে-বিদেশে সকল গ্রন্থাগারের সঙ্গে যোগাযোগ ও গ্রন্থাগার সামগ্রী ও তথ্য বিনিময়; (৪) আই এস বি এন প্রদান; (৫) আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা; (৬) জাতীয় গ্রন্থপঞ্জী প্রস্তুত ও বিতরণ; (৭) রেফারেন্স সেবা প্রদান প্রভৃতি। দেশে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন নিম্ন ৬৮টি সরকারী গ্রন্থাগার পরিচালিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ঢাকা ১টি পুস্তক সংখ্যা ১,৩৯,৪৫২ বিভাগীয় সরকারী গণগ্রন্থাগার (চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী) ৩টি পুস্তক সংখ্যা ১,৯৫,৩৫৪ জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগার (৬০টি জেলা সদরে) ৬০টি পুস্তক সংখ্যা ৮,০১৩৮২ শাখা গণগ্রন্থাগার (ঢাকায় ২টি, রাজশাহীতে ১ ও ময়মনসিংহে ১টি) মোট ৪টি, পুস্তক সংখ্যা ২৯,৮৮৬। এছাড়াও দেশে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শিশু-কিশোর শাখা এবং গাজীপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুর, রংপুর, পঞ্চগড় ও কুষ্টিয়া এই ৮টি জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার থেকে বই ধার, সেবা, পাঠক সেবা ও রেফারেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের সরাসরি গণগ্রন্থাগারের পাশাপাশি হাজারের উপরে বেসরকারী গণগ্রন্থাগার আছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১,০৪৩টি বেসরকারী গণগ্রন্থাগারকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। এগুলো অন্যান্য গণগ্রন্থাগারের মত শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারের সহযোগিতা করছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক গ্রন্থাগারকে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগার বলে। সারাদেশে ৯৮৬টি কলেজ গ্রন্থাগার (৩৮৪টি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ এবং ৬০৫টি ডিগ্রী কলেজ যার ২২৩টি সরকারী কলেজ গ্রন্থাগার), ২২টি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গ্রন্থাগার, ২২টি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ গ্রন্থাগার, ১,১৫০টি স্কুল গ্রন্থাগার, ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ গ্রন্থাগার, ১৭টি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪৫টির উপরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার রয়েছে। স্কুল, কলেজ গ্রন্থাগার স্কুল কলেজ শিার পরিপূরক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারগুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিন্ডের সঙ্গে তুলনা করা চলে। সুশিক্ষার জন্য শিক্ষকের সব সময় নতুন জ্ঞান আহরণ করতে হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশে প্রাতিষ্ঠানিক গ্রন্থাগারগুলো সর্বাধিক অবহেলার শিকার। স্কুল গ্রন্থাগারে লাইব্রেরিয়ানের পদ ১৯৮৪ তেই বিলুপ্ত করা হয়েছে। যার প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার না করলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হযনি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একাধিক কলেজেই লাইব্রেরিয়ানের পদ শূন্য রয়েছে। এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে না দেখলে শিক্ষার প্রসারে গ্রন্থাগারগুলো কতখানি ভূমিকা রাখতে পারবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। বিশেষ উদ্দেশ্যে, বিশেষ সংগ্রহ, বিশেষ পাঠকের জন্য যে গ্রন্থাগার তাই স্পেশাল। সভ্যতার ক্রমবিকাশের মত গ্রন্থাগারেরও রয়েছে এক ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস। ধারণা করা হয় প্রাচীন রোমেই সর্বসাধারণের জন্যে প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল। এর আগেও গ্রন্থাগারের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্যবিলনের ভূগর্ভ খনন করে আবিষ্কৃত-হয়েছে সাড়ে চার হাজার বছরের পূর্বেকার একে গ্রন্থাগার। সন্ধান মিলেছে খ্রিস্টপূর্ব ছ’শ বছর আগের আসিরিয়ার রাজা আসুরবানিপালের নিজস্ব গ্রন্থাগারের সঞ্চিত পোড়ামাটির গ্রন্থ। খ্রিস্টপূর্ব চার’শ বছর আগে আলেকজান্দ্রিয়ায় ছিল গ্রিক শাসনকর্তা প্রথম টলেমি প্রতিষ্ঠিত প্রাচীনকালের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। লাইব্রেরির প্রথম ধারণা দেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তিনি যাকে দায়িত্ব দিলেন সেই মার্কাস ভালো একজন সুলেখক ছিলেন। তিনি লাইব্রেরির ওপর রচনা করেন একটি গ্রবেষণা-গ্রন্থ। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই তৈরি হয় লাইব্রেরি কিন্তু বন্ধু ব্র“টাসের হাতে নিহত হওয়ায় সিজার সেই লাইব্রেরি দেখে যেতে পারেন নি। অথচ মধ্যযুগের সব বিজেতা জাতিই বিজিতের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার এক উন্মাদ মানসিকতায় ভুগতেন। মুসলমান আক্রমণের শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিল অমূল্য গ্রন্থাগারের ধ্বংসসাধন। তাদের হিংস্রতার আগুনে ভস্মীভূত হয় হাজার হাজার বছরের সংগৃহীত দুর্লভ সম্পদ, মানুষের সাধনার অক্ষয় কীর্তি অজস্র গ্রন্থ-সম্ভার। আলেকজান্দ্রিয়ার সুবিশাল গ্রন্থাগার চেঙ্গিস খাঁর আক্রমণে বিধ্বস্ত হল। ধ্বংস হল বাগদাদ সেকেন্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। আজও চলছে ধ্বংসের উন্মত্ততা। এই তো সেদিন মাত্র বর্বর-আমেরিকাবাসী অন্যায়ভাবে ইরাক আক্রমণ করে ধ্বংস করলো তাঁদের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবান গ্রন্থাগার। মানুষ হারালো এক মহৎ উত্তরাধিকার। যুগে যুগে এসব গ্রন্থাগার ধ্বংসের মূলে কখনো ছিলো পরাজিত পক্ষের উপর ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো, কখনো বা ছিলো ভিন্ন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব, কীর্তি ও আবিস্কারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। অতীতের যুদ্ধ-বিগ্রহগুলোতে এসব ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অনেক পুরনো সভ্যতা ও ইতিহাস সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। পরবর্তীতে অবশ্য যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নীতিমালায় গ্রন্থাগারসহ সভ্যতার পরিচায়ক স্থাপনাসমূহ ধ্বংসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কারণ গ্রন্থাগারগুলো পুরনো সভ্যতাসমূহের পরিচয় কৃষ্টি সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে যুগ থেকে যুগ, শতাব্দি থেকে শতাব্দি ধরে। তখন থেকেই মনুষ্য সমাজে গ্রন্থাগার তার প্রাপ্য মর্যাদা পেতে শুরু করে। উচ্চশিক্ষার হার সমৃদ্ধ দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখবো সেখানকার সমাজে গ্রন্থাগারের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব সূচকে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রন্থাগার এখন কেবলই গ্রন্থাগার নেই। এখন একে বলা হয় ইনফরমেশন সেন্টার বা তথ্যকেন্দ্র। বর্তমান তথ্য বিষ্ফোরণের যুগে এ এক অপরিহার্য উপাদান। বর্তমানে এখানে শুধু বইই থাকে না। এখানে থাকে কম্পিউটারাইজড তথ্য সামগ্রী, অডিও-ভিডিও সামগ্রী, ই-বুক, ই-জার্নাল, আরো অসংখ্য আধুনিক তথ্য সামগ্রী। এখন আর গ্রন্থাগার চার দেয়ালের মধ্যেও আবদ্ধ নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন গ্রন্থাগার পৌঁছে গেছে মানুষের ঘরে ঘরে। ওপেক সেবার মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই তথ্য অনুসন্ধান ও বই রিজার্ভ করতে পারছে ব্যবহারকারীরা। মূলত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে গ্রন্থাগারের প্রয়োজন যে অপরিহার্য তা পৃথিবীর সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতিসমূহের ইতিহাস পাঠে জানা যায়। আমার বিশ্বাস, এ বাংলার প্রতিটি গ্রামে একদিন একটি করে গ্রন্থাগার গড়ে উঠবে এবং এই গ্রন্থাগার থেকে সংগৃহীত জ্ঞানের দ্যুতি দিয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন এ দেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করতে পারবে। এবং গ্রন্থগার পপাতমুক্ত আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা গঠনে নিরপে ও পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি।



ফেইসবুকে আমরা