বাংলাদেশ, , মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

দেশের প্রথম টানেল নির্মিত হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশে

  প্রকাশ : ২০১৯-০১-০৩ ১৩:২৩:৩৬  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম টানেল। চট্টগ্রাম শহরসহ সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তথা কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর করার ক্ষেত্রে কর্ণফুলী টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মিয়ানমার হয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তিসহ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশের ফাস্ট ট্র্যাক মেগা প্রকল্পের অন্যতম কর্ণফুলী টানেল ২০২২ সালের মধ্যে নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর মোহনার পাশ ঘেঁষে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউব সম্বলিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মিত হচ্ছে। এ ছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ সম্পন্ন টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।

চায়নার ‘ওয়ান সিটি এবং টু টাউন’ মডেলের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সামনে রেখে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ, সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাটসহ কতিপয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৪৭৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। টানেল নির্মাণের মূল ব্যয় চীন সরকার বহন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৮৩ একর। ইতোমধ্যে প্রায় ২৩২ একর ভূমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়।

চীনের চায়না কমিউনিকেশন এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। জানা যায়, চীন সরকারের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প ঋণ চুক্তি গত বছরের ৬ নভেম্বর সম্পন্ন হয়েছে এবং গত বছরের ৫ ডিসেম্বরে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেও সরবরাহ করা হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পন্নের সময় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। সে অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদীর তলদেশে খননের জন্য টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) শিগগির পৌঁছাবে বলে জানা যায়। সে ক্ষেত্রে আগামী ১ মাসের মধ্যে নদীর তলদেশ দিয়ে বোরিং কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রকল্প কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়। তা ছাড়া বোরিং এর পূর্ব প্রস্তুতির কাজ বর্তমানে চলছে বলে জানা যায়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় শতকরা ২৯ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়। টানেল প্রকল্পের শহর সংলগ্ন পতেঙ্গা এলাকায় খোলা অংশের দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার। খোলা ও কাভার অংশের দৈর্ঘ্য ১৯৫ মিটার। এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ৫৫০ মিটার।

অন্যদিকে নদীর অপর পাড়ে আনোয়ারা এলাকায় টানেলের খোলা অংশের দৈর্ঘ্য ১৯০ মিটার। খোলা ও কাভার অংশের দৈর্ঘ্য ২৩০ মিটার। উক্ত এলাকায় একটি ফ্লাইওভার থাকবে। যার দৈর্ঘ্য ৭২৭ মিটার। এ অংশে এপ্রোচ রোড থাকছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল হিসেবে তার নানামুখী অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। এটি শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাসমূহের মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর এ ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে টানেল মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের মহেষখালী মাতারবাড়ি এলাকায় দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর, কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত্ কেন্দ্র, এলএনজি স্টেশনসহ জ্বালানিভিত্তিক বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যে শিল্প-কারখানা নির্মাণের কাজ চলছে টানেল তাদের সঙ্গে পুরো বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তা ছাড়া আনোয়ারা এলাকায় নির্মাণাধীন চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ইতোমধ্যে গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেডসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থায় টানেল ভূমিকা রাখবে। কক্সবাজারসহ অত্র এলাকায় পণ্যসহ লোকজনের যাতায়াত সহজতর এবং দ্রুত হবে। টানেলের সঙ্গে বর্তমানে নির্মাণাধীন সমুদ্র উপকূলীয় রিং-রোড সংযোগ হওয়ায় চট্টগ্রাম শহরের ওপর ঢাকা অভিমুখী যানবাহনের কোনো চাপ পড়বে না। এতে করে যানজটও কমে আসবে।

টানেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়াও দেশের নবীন প্রকৌশলীরা টানেল নির্মাণের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। সে অভিজ্ঞতা আগামীতে ঢাকায় সেতু বিভাগ কর্তৃক যে আন্ডারগ্রাউন্ড সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে তাতে কাজে লাগাতে পারবে।



ফেইসবুকে আমরা