বাংলাদেশ, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

দাম বাড়ার গুজবে সারাদেশে লবণের বাজারে অস্থিরতা, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

  প্রকাশ : ২০১৯-১১-১৯ ১৯:৫৩:২৬  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : লবণের দাম দুইশ টাকা হবে, এমন গুজবে সারাদেশের খুচরা বাজারগুলোতে লবণের দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। এক দিনের ব্যবধানে লবণের​ দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-৪০ টাকা। এক এক খুচরা ব্যবসায়ী এক এক রকম দাম হাঁকছেন ক্রেতা সাধারণের কাছে। এ নিয়ে ক্রেতা সাধারনের মধ্যে চলছে অস্থিরতা ও ক্ষোভ। খবর পেয়ে খুচরা বাজারগুলোতে দ্রুত হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।

সোমবার ফেসবুকের একটি পোস্টে গুজব ছাড়ানো হয়, লবণের দাম দুইশ টাকা হবে। এরপর থেকেই দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে লবণের দাম বাড়িয়ে দেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের সবকয়টি জেলায় হুট করে অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দেন খুচরা বিক্রেতারা। এতে করে ক্রেতাদের মধ্যে লবণ কেনার হিড়িক লেগে যায়। অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাজধানীর কচুক্ষেত বাসিন্দা মোতালেব হোসেন(৫৭) বলেন, তিনি ৪০ টাকা দিয়ে আধা কেজি এসিআই লবণ কিনেছেন। অথচ প্যাকেটের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা ছিল ৩৫ টাকা। তিনি জানান, বাজারের বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামতন লবণের দাম চাচ্ছেন। এক দোকানে তার কাছে আধা কেজি লবণের দাম চাওয়া হয় ৫০ টাকা, আরেকটি দোকানে চাওয়া হয় ৫৫ টাকা।

একই এলাকার সানি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা রবিউল জনান, গুজবের পর সকালে এলাকার প্রায় সব দোকানে ৮০-১১০ টাকা কেজিতে লবণ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ডিলাররা তাদের কাছে পূর্বের দামেই লবণ বিক্রি করছেন। একইসঙ্গে তিনি প্যাকেটের দামেই লবণের বিক্রি করছেন বলে জানান রবিউল। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আসার পর অনেক বিক্রেতা লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছেন, অনেকে লবণ সরিয়ে ফেলছেন দোকান থেকে, কোন কোন বিক্রেতা আবার দোকান বন্ধ করে ফেলছেন। ওই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পাশেই আরেকটি বড় মুদির দোকানে গিয়ে লবণের দাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তিনি লবণ বিক্রি করেন না। কেন বিক্রি করেন না জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা কোন উত্তর না দিয়ে দোকান বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।

এছাড়া, রাজধানীর কারওয়ান বাজারেও প্রতি কেজি লবণের দাম ৮০-১০০ টাকা চাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। পুলিশ আসার খবর পেয়ে দোকান থেকে লবণ গায়েব করে ফেলেন বেশ কিছু দোকানের ব্যবসায়ী।

রাজধানী ছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায়ও গুজবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইতিমধ্যে।
এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি এক লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বিসিকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লবণ চাষীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সরকারের সার্বিক সহায়তার ফলে লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। ১৫/১১/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন।

এদিকে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজবে বিভ্রান্ত না হবার জন্য অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন। সংস্থাটি মঙ্গলবার এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে লবণের কোন ঘাটতি নেই। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। সম্প্রতি লবণ নিয়ে একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তা থেকে মুনাফা লুটের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গুজবে কান না দেয়ার জন্য দেশবাসীকে সচেতন করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

এছাড়া মঙ্গলবার কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত সভায় লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেছেন, বর্তমানে কক্সবাজারে তিন লাখ মেট্রিক টনের ওপরে লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে। সারাদেশের মোকামে রয়েছে আরো প্রায় তিন লাখ মে.টন লবণ। এরপরও অসাধু কিছু মিল মালিক মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বাজারে সয়লাব করছে। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটা শ্রেণী। আমাদের কঠোরতায় ওই রকম লবণ আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা লবণ ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব। ঘরের সমস্যা ঘরেই সমাধান করা দরকার।

খুচরা বিক্রেতারা লবণের দাম হুট করে বাড়িয়ে দেয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের ভোক্তা সাধারণ। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরত্ব যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তারা।



ফেইসবুকে আমরা