বাংলাদেশ, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে : এ কে এম আবু ইউসুফ

  প্রকাশ : ২০২০-০৬-০৪ ১৫:৪৮:২৫  

জীববৈচিত্র্য রায় পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে

 : এ কে এম আবু ইউসুফ

পরিস্হিতি২৪ডটকম : আগামীকাল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারা পৃথিবীজুড়ে ৫ জুন এই বিশ্ব পরিবেশ দিবস বা World Environment Day পালিত হয়। মানুষ আর পরিবেশের দূরত্ব ঘুচিয়ে এক সবুজ নির্মল পৃথিবীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিবসটিকে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের পিছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করে, তা হল পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্ব পরিবেশ দিবস সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ দ্বারা পালিত হয়। এই দিবসটি উদযাপনের প্রধান কারণ হ’ল পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো। মানুষও পরিবেশ এবং পৃথিবীর অঙ্গ। প্রকৃতি ছাড়া মানুষের জীবন অসম্ভব। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কের কথাটা জানা খুবই জরুরি। প্রতি বছর, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের একটি থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের ২০২০ বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হ’ল ‘প্রকৃতির জন্য সময়’ (Time for Nature) এর লক্ষ্য কীভাবে পৃথিবীর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিকাশ করা যায়, সেই রূপ কাঠামো গঠন। বিশ্বব্যাপী দেশগুলিতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে এই বছরের আয়োজক হল জার্মানি, সঙ্গে জুটি বেঁধেছে কলম্বিয়া। এই বছর, COVID-19 মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমেই বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করবে বলে ঠিক করেছে। লকডাউন মানুষের জীবন বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ঠিকই, তবে লকডাউন পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক মাস ধরে বিপুল বিস্ময়ে এক অভূতপূর্ব ঘটনা অবলোকন করছে বিশ্ব। একটি ভাইরাসের আক্রমণে থমকে আছে সবকিছু। আধুনিকতম সময়ে এ বিশ্ব আগে কখনো এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি। বিস্ময় ধীরে ধীরে সয়ে আসছে। গত ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে চীন যেভাবে আক্রান্ত হয়েছিল ও তার ব্যবস্থাপনা করেছে, আমাদের কাছে তখন তা খুব প্রভাব ফেলেনি। যদিও হুবেই প্রদেশের উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে আসায় আমাদের দেশ উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশ হিসেবে খ্যাত ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স বা যুক্তরাষ্ট্রেও পরবর্তীতে বড় আঘাত হানল করোনা। বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশও। বর্তমানে বিশ্বের ২১৫ দেশ ও অঞ্চল এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আর সারাবিশ্বে দিন দিন বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও এর প্রভাবে মৃতের সংখ্যা। করোনা আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি এসব দেশের জন্য এ শতাব্দীতে নতুন। ক্রমশ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ল কোভিড-১৯। ভাইরাসটিকে মহামারী ঘোষণা করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনিতেই বিগত কয়েক বছর যাবত আমরা দেখছি, শুনছি এবং পড়ছি, বিশ্বে পরিবেশ দূষণের সমস্যা ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করছিল। মানুষ তাদের সুবিধার জন্য সংস্থান তৈরি করেছে, আর তার জন্য ধ্বংস করেছে পরিবেশকে। এই কেউ-প্রভাবের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলির সঙ্গে মোকাবিলার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল কারণ হ’ল পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। ১৯৬৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন জাতিসংঘের কাছে মানব পরিবেশ সম্পর্কিত একটি সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব দেন অধিবেশনে উপস্থিত সুইডিশ প্রতিনিধিরা। প্রস্তাবনায় বলা হয়, “সমন্বয় সাধনের সুবিধার্থে এবং মানব পরিবেশ সম্পর্কিত অত্যন্ত জটিল সমস্যাগুলোর বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য এমন সম্মেলন আয়োজন জরুরী।” সে প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় মানব পরিবেশ সম্পর্কিত জাতিসংঘের প্রথম সম্মেলন, যেটি ‘স্টকহোম সম্মেলন’ নামেও বেশ পরিচিত। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যা ও সমাধান কিংবা ভবিষ্যত ভাবনাগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের প্রথম এই বৃহত্তম সম্মেলনকে দেখা হয় পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিকাশের একটি মাইলফলক হিসেবে। স্টকহোম সম্মেলন পরিবেশ সংরণের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি করেছিল। এ সম্মেলন থেকে পাওয়া ধারণা এবং পরিকল্পনাগুলো বিগত বছরগুলোর প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং পরিবেশ বিষয়ক চুক্তিতে প্রতিফলন রেখেছে। এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো পরিবেশ দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক সুপারিশ আসে, সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে। একইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় চার শতাধিক সংস্থা অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী সকল দেশের প্রতিনিধিরাই ঐকমত্যে পৌঁছান যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এখনই মানব পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা করা উচিত। পরিবেশ সংরণ এবং উন্নত করার প্রচেষ্টায় সরকার এবং জনগণকে এক হয়ে কাজ করার প্রতি জোর দেওয়া হয় ১৩ জুন সম্মেলনের ১৪তম প্ল্যানারি মিটিংয়ে। এ লক্ষ্যে ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে মনোনীত করার সুপারিশ করা হয় সাধারণ সম্মেলনে। একইসঙ্গে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় আলাদা একটি সংস্থা গঠনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে, যেটি পরে ‘ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’ (UNEP) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবেশ বিষয়ক বিশেষায়িত এই সংস্থাটিই বর্তমানে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আয়োজনগুলোর মূল সমন্বয়ক। সংস্থাটির সদর দপ্তর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে। একই বছর ১৫ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭তম সম্মেলনে পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রথম উদযাপনের সময় থেকেই প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের জন্য নির্দিষ্ট একটি থিম বা বিষয় নির্ধারণ করে দেয় জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, সমসাময়িক পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই থিম নির্বাচনের ভাবনাটি এসেছে। একইসাথে প্রতি বছর যেকোনো একটি শহর বা দেশকে দিবসটির মূল আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শহর বা দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে থিমের ব্যাপারটি জড়িত। সাধারণত সংশ্লিষ্ট থিমে যে শহর বা দেশ সাফল্য পেয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারটিতে আয়োজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সে শহর বা দেশকেই নির্বাচন করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত শহর বা দেশটি নানান আয়োজনে নির্ধারিত থিমের উপর সচেতনতা, এই থিমে তাদের সাফল্য এবং পরিবেশগত গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরে। ১৯৭৪ সালে প্রথম পরিবেশ দিবসের থিম ছিল ‘Only One Earth’. আয়োজক শহর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্পোকান। জাতিসংঘের সদস্যদেশ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও প্রতি বছর পালিত হয় পরিবেশ দিবস। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দিবসটির মূল আয়োজন করে থাকে। দিনটিতে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের আয়োজন থাকে প্রতি বছর। এছাড়া দিনটিতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ প্রদানের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া, আলোচনা সভার মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সারা দেশে দিবসটির উদযাপন সীমাবদ্ধ। এ বছর পরিবেশ দিবসের ৪৭তম আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে কলম্বিয়া। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদে জলবায়ু বিষয়ক কোপ (Conference of Parties) সম্মেলন চলার মধ্যেই জাতিসংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। কলম্বিয়াকে এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে জার্মানি। এ বছর দিবসটির থিম নির্ধারণ করা হয়েছে জীববৈচিত্র্য। সাধারণত কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছরের শুরু থেকেই মহামারীর প্রকোপ বাড়তে থাকায় মানুষের চলাচল, যানবাহন আর শিল্পায়ন স্থবির হতে শুরু করে। এই ফাঁকে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ‘গ্যাস চেম্বার’ হিসেবে পরিচিত ভারতের দিল্লিতে বায়ুর গুণগত মানে অল্প থেকে বিস্তর উন্নতি ঘটেছে বলে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। বাংলাদেশে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন পরিস্থিতি কয়েক দফায় বাড়িয়ে গত ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছিল। সারা দেশ অবরুদ্ধ হওয়ার পর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বাতাসে বিষের মাত্রা কমতে দেখা গেলেও বায়ুমান তখনও ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়েই ছিল। ঢাকার বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) উপস্থিতি কমে আসার চিত্রে লকডাউনের আগে মার্চে ঢাকার বাতাসে পিএম ১০ প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ১৬২ মাইক্রোগ্রাম ছিল। এপ্রিলে তা নেমে আসে ১১৭ মাইক্রোগ্রাম। আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা পিএম ২.৫ মার্চে পাওয়া গেছে প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম, এপ্রিলে সেটা কমে আসে ৪৫ মাইক্রোগ্রামে। বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫ এর উপস্থিতির ভিত্তিতে বায়ুমানের সূচক (একিউআই) নির্ধারিত হয়। একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১-১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। একিউআই ১০১-১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১-২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। নির্মাণ কাজ ও যানবাহন বন্ধ থাকা এপ্রিলে বায়ুমানের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ইটভাটায় কাজ চলেছে। আমাদের বায়ুমান আরও ভালো হতো যদি এগুলো বন্ধ থাকত। তা একটা ভালো দিক। কিন্তু মানুষ ঘরে ঢুকার সাথে সাথে জীববৈচিত্র্য যে ফিরে আসতে শুরু করবে, এমন সহজ কথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে। বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যখন প্রায় দশ লক্ষাধিক উদ্ভিদ ও প্রাণি বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। জীববৈচিত্র্যকে থিম ঘোষণা করে পরিবেশ বাঁচানোর সংকল্পে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য এটিই সঠিক সময় বলে মনে করছে জাতিসংঘ। আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, যে বাতাসে শ্বাস নিই, তৃষ্ণায় পানি পান করি এবং জলবায়ু, যেটি আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে, এসবই প্রকৃতির নিঃস্বার্থ অবদান। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি বছর সামুদ্রিক গাছপালা আমাদের বায়ুমণ্ডলের অর্ধেকের বেশি অক্সিজেনের যোগান দেয় এবং একটি পরিপক্ব গাছ প্রায় ২২ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বিনিময়ে অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে মানুষের কান্তিহীন উপকার করছে, বাঁচিয়ে দিচ্ছে মানুষের প্রাণ। আমাদের প্রকৃতি আমাদের যে সমস্ত সুবিধা দেয়, বিনিময়ে আমরা তার সিকিভাগ উপকারও স্বীকার করি না, ভালো থাকতে দিই না তার বেড়ে উঠায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে। জাতিসংঘ বলছে, প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন মেটাতে পরিবেশ দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে ভাবনা থেকেই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর পরিবেশ দিবসের জন্য নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে ঠিক করা হয়। দেড়শো’রও বেশি দেশে নানান আয়োজন থাকে এই দিনটিতে। এবার এই দিবসটি পালনে জাতিসংঘ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। তৎমধ্যে জাতিসংঘ বলেছে, সাতটি ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তা হলে পরিবেশ দিবসের সঠিক উদ্যাপন হতে পারে। যেমন: (ক) আমরা ব্যক্তিগতভাবে কী কিনছি, কীভাবে ব্যবহার করছি সেটা আরও একবার ভাবা; (খ) ব্যক্তিগত খাতে পরিবেশগতভাবে টেকসই ব্যবসায়ী মডেল কাজে লাগানোর জোর দেওয়া; (গ) কৃষিক্ষেত্রে প্রকৃতির ক্ষতি না করে উৎপাদন সমৃদ্ধ করা; (ঘ) গণখাতে সরবরাহ চেইন ও অর্থায়নে পরিবেশগত দিকটি বিবেচনায় রাখা; (ঙ) সরকারিভাবে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল নিরাপদ করে তোলায় সচেষ্ট হওয়া; (চ) তরুণদের এক সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের মূল ভূমিকায় রাখা; (ছ) সংগ্রাহক হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রকৃতিকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা। জাতিসংঘ প্রেরিত এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলেই জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ পরিবেশ রক্ষা পাবে (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ও সাময়িকী)। শুধুমাত্র বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এই দিনটিতে পরিবেশ রক্ষার সচেতনতায় ভূমিকা রেখে বাকি দিনগুলো পরিবেশকে ভুলে থেকে দূষণ নামের ভয়াবহতার মাধ্যমে পৃথিবীকে অসুস্থ করে তুলে পরবর্তী প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন, আমরা মানুষরাই নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্যই পরিবেশকে বিপন্ন করছি, দূষণ করছি সুন্দর এই পরিবেশকে। যার কারণে প্রকৃতি ভিন্নভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে আমাদের থেকে। সুতরাং আসুন এই দিনের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিই বছরজুড়ে। তবেই সার্থকতা পাবে পরিবেশ দিবসের, রক্ষা পাবে আমাদের এই সুন্দর পরিবেশ, রচিত হবে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী।

লেখক: কলামিস্ট, পরিবেশবিদ ও প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি (বাপউস)



ফেইসবুকে আমরা