বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চবি’র বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী : সিডিএ’র পাহাড় কেটে সমতল করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

  প্রকাশ : ২০২০-০১-১১ ২০:০৩:৪৫  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন,চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যই হলো পাহাড়। পাহাড়কে সংরক্ষণ করেও উন্নয়ন করা সম্ভব। সেখানে সিডিএ’র মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আজ থেকে দেড়-দু’বছর আগে রাস্তা বানাতে গিয়ে যেভাবে ৩০০ ফুট পাহাড় কেটে সমতল করে ফেলেছে, সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ পুনর্মিলনীতে সভাপতিত্ব করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একটা সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়গুলো ছিলো ন্যাড়া। আমরা তখন পাহাড়গুলোতে গাছ লাগাতাম। আমিও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জব স্টুডেন্ট হিসেবে গাছ লাগানোর কাজ করেছি।

‘আজ থেকে ১১ বছর আগে বাংলাদেশের বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ছিলো ১৯ শতাংশের নিচে। এখন সেটা ২৪ শতাংশেরও বেশি। অথচ গত ১১ বছরে মানুষ ও বসতি বেড়েছে, দুই লেনের রাস্তা চার লেন হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রি বেড়েছে। সে জায়গায় বৃক্ষের পরিমাণ বাড়ার কারণ, মানুষের মধ্যে গাছ লাগানোর একটি চেতনা জাগ্রত হয়েছে।’
তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউট বনায়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা প্রশংসনীয়। আমি চাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নবজাতকের জন্ম হবে তাদের নামে যেন একটি করে গাছ লাগানো হয়। পাশাপাশি এ গাছ লাগানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা করে দেওয়া হয়। তাহলে এ কাজটি করার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই হবে প্রথম কতৃপক্ষ। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা স্বল্পতার কারণে এটা চাইলেও পারবে না। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা সম্ভব। আজ আপনাদের কাছে এ প্রস্তাব রেখে গেলাম।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের ছাত্র ছিলাম। যদিও এটা শুনতে যতটা রসায়ন- পড়াশোনা ঠিক ততটা রসাত্মক না। তাই পরবর্তীতে আমি পরিবেশ বিজ্ঞানের ওপর পিএইচডি করি। রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে আমার শিক্ষকতা করা হয়নি। তবুও এখনো আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করি।

মন্ত্রী বলেন, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে শিল্প বিপ্লবের আগে পৃথিবীতে যে তাপমাত্রা ছিলো শিল্প বিপ্লবের পর বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল, সাইবেরিয়াতে গ্রীষ্মকালে যে খরতাপ, আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে দাবানল ও খরতাপ, পাকিস্তানে বন্যা, এভাবে পৃথিবীজুড়ে অস্বাভাবিক যত ঘটনা ঘটছে সেটা মাত্র এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার ফলে হচ্ছে।

‘প্যারিস চুক্তিতে বিভিন্ন দেশের যে প্রতিশ্রুতি, তা যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে তাপমাত্রা সাড়ে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতে পারে। এক ডিগ্রীতেই যখন পৃথিবী এ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি, আগামীতে পৃথিবীর জন্য যে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে সেটা আমাদের কাছে সহজেই অনুমেয়। সেই তালিকায় বাংলাদেশ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।’

তিনি বলেন, আমার পৈত্রিক বাড়িতে কখনো পানি উঠতে দেখিনি। কিন্তু আমি দেখলাম আমার বাড়ির ড্রেনে জোয়ারের পানি এসে আটকে আছে। জোয়ার-ভাটার পানি যেভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় আসছে এটার কারণ, সি লেভেল রাইজ (সাগরের পানির উচ্চতা)। এছাড়াও সিলট্রেশনের কারণে নদীর ক্যাপাসিটি কমে গেছে।

‘পৃথিবীতে ৮.৭ মিলিয়ন স্পেসিস আছে। কিন্তু মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিন দেড়শ স্পেসিস বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মানবজাতির জন্য এক সময় এটি বড় হুমকি হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটে যারা পড়ছে তারা আমাদের দেশের এ বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে। কাজেই তাদেরকে দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। না হয় ডাইনোসরের মত পরবর্তীতে যেভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আমরাও চতুর্থ ধাপে বিলুপ্ত হয়ে যাবো। এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১শ’র বেশি মানুষের বসবাস এ দেশে। বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ পৃথিবীতে সর্বনিম্ন। তারপরও বাংলাদেশ পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যে দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, ঝড় বন্যা জলোচ্ছ্বাস যে দেশে নিত্যসঙ্গী, সে দেশ কিভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ! বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে আজকে এটাই সবচেয়ে বড় বিস্ময়।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী ৫০ বছর পরের কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার অনুরোধ করছি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

‘যেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮০০ কোটি টাকার নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে, সে হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও বড় প্রজেক্ট হতে পারে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীতে খুব কম আছে। তাই কোনো ভবন বানাতে গিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দর করে গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশবিদ্যা ইন্সটিটিউটের নেওয়া বনায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তথ্যমন্ত্রী।
সুত্র : বাংলানিউজ২৪ডটকম ।



ফেইসবুকে আমরা