বাংলাদেশ, , মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে সাড়ে তিন বছরে ৬৬ শ্রমিক নিহত

  প্রকাশ : ২০১৯-০৯-১১ ১৯:৩৩:২৮  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৬৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেনে বলে তথ্য দিয়েছে জাহাজ-ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম। শ্রমিকের প্রাণহানি মোকাবিলা করে কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে ১০ দফা দাবি দিয়েছে সংগঠনটি। আগামী সাতদিনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক শফর আলী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বঙ্গোপসাগর উপকূলে ১৫০টির বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের নিবন্ধন আছে। কিন্তু কাজ চলছে ৫০-৬০টি ইয়ার্ডে। এসব কারখানায় সরাসরি কাজ করেন প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ না থাকায় প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

গত সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৬৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন। আর ২০১৯ সালের গত ৮ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন ও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ৩০ জন। ২০১৯ সালে নিহতদের মধ্যে জাহাজ কাটার সময় আগুনে দগ্ধ ও গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ জন। লোহার পাত চাপা পড়ে মারা গেছেন ৫ জন।

২০১৯ সালে শ্রমিকের মৃত্যু অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে বলে জানান শফর আলী। তিনি বলেন, একজন শ্রমিকের মৃত্যুর দায়ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিকেরা এড়াতে পারেন না। অথচ মালিকদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকরা মৃত্যুর শিকার হলেও এবং ক্রমাগতভাবে তা বাড়তে থাকলেও দায়ী মালিকের বিরুদ্ধে কোনোদিন কোনো হুলিয়া জারি হয়নি। এ সময় দুর্বল, নিপীড়িত, অসহায় জনগোষ্ঠীর প্রতি কি রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনেক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের লাইসেন্সও নেয়নি। ঝুঁকি নিরসনে নেই কোনো পদক্ষেপ। অধিকাংশ শ্রমিকের জাহাজ কাটা ছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শ্রমিকদের আত্মরক্ষার জন্য কোনো সরঞ্জামাদিও দেয়া হয় না। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকরা বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মস্থলে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা এবং জেলা প্রশাসকের গঠিত ক্রাইসিস কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংগঠনটির নেতাদের।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত জাহাজ ভাঙা শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও আহতদের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া, ইয়ার্ড মালিকদের উদ্যোগে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া, শ্রমিকদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ, কাটার আগে জাহাজকে সম্পূর্ণভাবে বর্জ্যমুক্ত করা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকা ও দৈনিক ৬১৫ টাকা নিশ্চিত করা এবং এ-যাবৎ সংঘটিত সকল দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে উদঘাটন ও দায়ী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।



ফেইসবুকে আমরা