বাংলাদেশ, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইসলাম প্রচারে হযরত সৈয়দ নিজাম (রহঃ) এর অবদান : সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল নোমান

  প্রকাশ : ২০১৯-০৯-০৩ ১৩:৫৫:৫৫  

পরিস্হিতি২৪ডটকম : এক হাজার মতান্তরে এক হাজার ষাট হিজরীর দিকে যে সমস্ত ধর্ম প্রচারকগন ইয়েমেন হতে এ দেশে আগম করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত সৈয়দ নিজাম (রহঃ) তিনি ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর বংশধর। তিনি অত্র অঞ্চলে তথা চন্দনাইশ আবাদ করেন, এবং চন্দনাইশে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন।
খান এবং চৌধুরী উপাধীঃ-
তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে কাজীর পদ দিয়ে ছিলেন। তিনি কাজীর পদ প্রত্যাখান করে বলেছিলেন এগুলোর জন্য আমি এ দেশে আসিনি। আমার দায়িত্ব হল ধর্ম প্রচার করা মূলত তার নির্লোব দেখে ব্রিটিশ সরকার তাকে খান এবং চৌধুরী উপাধী দিয়েছিলেন।
*হযরত সৈয়দ নিজাম (রহঃ) এর ২য় সন্তান ছিলেন,
১। হযরত সৈয়দ কুতুব উদ্দীন (রহঃ) প্রকাশ আজিম আলী শাহ যার নামে পটিয়া আজিমপুর প্রকাশ পায়।
২। হযরত সৈয়দ আফজাল উদ্দীন (রহঃ) যার মাজার ডুমুরিয়া আনোয়ারা হযরত সৈয়দ কুতুব উদ্দীন এর ৫ সন্তান।
১। সৈয়দ হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ)
২। হযরত সৈয়দ রহমত উদ্দীন মুন্দার (রহঃ) জিরি পটিয়া।
৩। হযরত সৈয়দ দৌলত খা (রহঃ) হাইলধর আনোয়ার যেখানে গিয়ে বাবা ভান্ডারী উক্ত মাজারটি জাগিয়ে দিয়ে আবাদ করেছিলেন, অন্য ২য় সন্তানের নাম অজানা।
হযরত সৈয়দ কুতুব উদ্দীন এর ২য় সন্তান উক্ত জায়গায় বসতি স্থাপন করেছিলেন হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) দাদার সাথে থাকতেন এবং দাদা হতে খেলাফত প্রাপ্ত হয়ে দ্বীনের কার্য আনজাম দেওয়ার জন্য চন্দনাইশ কানাই মাদারীতে স্থায়ীভাবে বসতিস্থাপন করেন।
হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) এর পাঁচ পুত্র
১। হযরত সৈয়দ ইউনুস মুন্দার (রহঃ)
২। হযরত সৈয়দ বি আলম মুন্দার (রহঃ)
৩। হযরত সৈয়দ এয়ার মুহাম্মদ মুন্দার (রহঃ)
৪। হযরত সৈয়দ তারা বাজ মুন্দার (রহঃ)
৫। হযরত সৈয়দ কানাই শাহ মুন্দার (রহঃ) যার নামে কানাইমাদারী প্রতিষ্ঠা হয়।
হযরত সৈয়দ নিজাম (রহঃ) ছিলেন রাসুল (সাঃ) এর বংশধর তার নিকট হতে হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দারের ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে জামানার উচ্চ আসনে সমাসীন হন, হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দারের এর ৫ সন্তান তার কাছ থেকে ফয়েজ পেয়ে উচ্চ মর্তবার অধিকারী হয়েছিলেন।
তন্মধ্যে হযরত কানাইশাহ মুন্দার (রহঃ) পিতার নিকট হতে ইলমে লাদুন্নী হাসিল করে জামানার কুতুব হয়েছিলেন এবং চন্দনাইশে ইসলামের মহাবানী প্রচার করেছিলেন।
কানাইমাদারী প্রতিষ্ঠাঃ
কানাইমাদারী প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনটি কারন জানা যায়;
১। হযরত সৈয়দ কানাইশাহ (রহঃ) জীবনের শেষ সময় এসে মানুষের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ব্রিটিশরা যখন তা জানার জন্য উক্ত জায়গায় গেলেন তখন হযরত সৈয়দ কানাইশাহ (রহঃ) ধ্যানরত। তার পাশে ২টি মাদারী মাছ আল্লাহ আল্লাহ জিকির করতেছেন দো ভাষী জিজ্ঞেস করল এই মাছ গুলো কি ভাবে বেচে আছে- তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। দোভাষী বলল কানাইশাহ একজন বড় ওলী তাহার কারামতে এই মাছগুলো মাটির মধ্যে জীবিত। কানাইশাহ এর পাশে মাদারী নামক মাছ দেখে ব্রিটিশরা উক্ত এলাকার নাম দেন কানাই মাদারী।
২। হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) পাড়ায় মুন্দার নামক একটি পুকুর আছে। এই পুকুরে অনেক মাদারী নামক মাছ ছিল। পুকুরটি হযরত কানাইশাহ (রহঃ) এর তাই আমাদের গ্রামের নাম কানাই মাদারী হল।
৩। ব্রিটিশরা যখন জরিপ করতে আসে তখন কানাইশাহ মুন্দার (রহঃ) এর নাম শুনে তার কাছে এল এবং তার আর কে কে আছে জিজ্ঞেস করল। লোকেরা বলল ছেলে সন্তান আরও এক বৃদ্ধ মাদার আছে তখন ব্রিটিশরা উক্ত এলাকার নাম দিলেন কানাইশাহ আর তার মাদার এর নাম অনুসারে কানাইমাদারী।
হযরত সৈয়দ কানাইশাহ মুন্দার (রহঃ) পিতা হতে খেলাফত ও বাতেনী এলম হাসীল করে। তিমিরাচ্চন্ন জগতে ইসলামের মহাবানী প্রচার করেন এবং মানুষকে হেদায়তের আলো দেখিয়ে ছিলেন। তার সংষ্পর্শে এসে অনেক মানুষ কামালত ও বেলায়ত হাসিল করেন। তৎকালীন তিনি জামানার কুতুব হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার পুত্র হযরত সৈয়দ ময়না গাজী মুন্দার (রহঃ) এলমে মারেফত হাসিল করে বর্তমান তিমিরাচ্চন্ন জগতে আলোর বতীকা জালিয়ে ছিলেন হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার পাড়ায় অবস্থিত মাজারটি হযরত সৈয়দ রৌশন মুন্দার এর। তার বাড়ী ছিল আলমদার পাড়া পটিয়া। বংশগত দিক দিয়ে সে ও হযরত সৈয়দ নিজাম এর বংশধর ছিলেন। হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রাঃ তার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন।

হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) প্রায় জজবা হালতে থাকতেন তাই জালাল মুন্দার (রহঃ) বলেন আমার ইন্তেকালের পর। এই কানে আমার মাজার হলে সমস্যা হবে। লোকেরা উল্টাপাল্টা চলবে লোকেরা বিপদে পড়বে। তোমার ইন্তেকাল হলে এইখানে তোমার দাফন হবে। আর আমার ইন্তেকাল হলে পশ্চিম কানাই মাদারী চান খালরি পাড়ে আমাকে দাফন করবে জীবনের শেষ সময় হয়রত সৈয়দ রওশন মুন্দার (রহঃ) হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) এর দরবারে দিন কাটাতেন এবং ওখানেই ইন্তেকাল করেন, মুন্দার পাড়ার মাজারটি হযরত রওশন মুন্দার (রহঃ) এর আর কানাইশাহ মুন্দার এর মাজারটি পশ্চিম কানাই মাদারী একটি জংলী কবর স্থানে আর হযরত ময়না গাজী মুন্দার এর মাজার অজানা। এত বড় জামানার কুতুব হওয়ার সঙ্গেও উক্ত আলীর মাজার এখনো অবহেলিত ভাবে পড়ে রয়েছে। বিঃদ্রঃ মুন্দার এর বংশধর অন্যান্যদের পরিচয় দেওয়ার নাম শুনা যায়। যাদের নাম নিম্নরূপঃ

১। হযরত সৈয়দ ইজ্জত খা মুন্দার মৈশামুরা মুন্দার পাড়া সাতকানিয়া।
২। হযরত সৈয়দ মুন্দার আউলিয়া (রহঃ) তার মাজার কালুঘাট ব্রিজের নিচে বোয়ালখালী।
৩। হযরত সৈয়দ জালাল খান মুন্দার (রহঃ) এর মাজার ডুমুরিয়া আনোয়ারা।
৪। হযরত সৈয়দ রওশন মুন্দার (রহঃ) কানাইমাদারী মুন্দার পাড়া, চন্দনাইশ।
৫। হযরত সৈয়দ খোশাল শাহ মুদার কানাইমাদারী মুন্দার পাড়া, চন্দনাইশ।
৬। হযরত সৈয়দ খোশাল শাহ মুন্দার আমানবাজার হাটহাজারী।
৭। হযরত সৈয়দ রহমত উদ্দীন মুন্দার জিরি পটিয়া।
৮। হযরত সৈয়দ বি আলি মুন্দার (রহঃ) আলমদার পাড়া, পটিয়া।
৯। হযরত সৈয়দ ছমদ উদ্দীন মুন্দার, হযরত সৈয়দ ছমদ উদ্দীন মুন্দার জামে মসজিদ হরিন খাইন, পটিয়া।
১০। অন্য এক মুন্দার বাশঁখালী আছে বলে শুনা যায়।
তথ্য প্রদান/তথ্য সূত্র
১। আল লিওয়া ৯৮ জামেয়া ছাত্র ফোরাম।
২। মরহুম আলহাজ্ব সৈয়দ মোজাহের নবী চৌধুরী আমার দাদা প্রায় ১০৫ বৎসর জীবিত ছিলেন।
৩। মরহুম সৈয়দ ফজল আহমদ চৌধুরী।
৪। আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ ওসমান আলী শাহ জোহাদী।
লেখক:-
সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল নোমান।
বিএ. অনার্স, এম.এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
কামিল এম.এ হাদীস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



ফেইসবুকে আমরা